শুক্রবার দুপুর ১২:৫১, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

প্রকাশিত হলো ড. এমদাদুল হক এর বই “জীবনবেদ”

১৩৩৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

জীবনবেদের ভূমিকা : বেদ অর্থ বিদিত হওয়া, জানা। ‘জীবনবেদ’ অর্থ জীবনকে জানা। জীবনবেদের আলোচ্য বিষয় জীবনের সুখ, দুঃখ, প্রেম, প্রীতি, শ্রদ্ধা, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, অর্থ, কাম, ধর্ম, মুক্তি। বেদ দিয়ে জীবন বুঝা যায় না, জীবন দিয়ে বেদ বুঝতে হয়। বেদ থেকে জীবনের উৎপত্তি নয়- জীবন থেকে বেদের উৎপত্তি।

জীবন নদীর মতো। নদী মানচিত্র মেনে চলে না। নদী চলার পথ থেকে তৈরী হয় মানচিত্র। জীবন প্রতিটি ক্ষণে অভিনব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ফলে বদলে যায় জীবন চলার পথ- যুগে যুগে তৈরী হয় নতুন জীবনবেদ। প্রচলিত জীবনবিধানগুলো বিশেষ সময়ে, বিশেষ ঘটনার প্রতি, বিশেষ ব্যক্তির সাড়া। সেই রামও নাই, সেই অযোধ্যাও নাই। তবে রামায়নের কর্তৃত্ব থাকবে কেন? শাস্ত্রকে প্রমাণ মানলে জীবন আলোকিত হয় না, বরং মানুষে-মানুষে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। অথচ, আমরা সম্মোহিত হয়ে আছি দ্বন্দ্ব উৎপাদক শাস্ত্রের গণ্ডিতে।

অন্ধকারে বিচরণ করলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে না। অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে চলা মানে দৃষ্টিশক্তির প্রসারণ নয়। কল্পকাহিনীগুলো অন্ধকারের মতোই। এইগুলোর ব্যাখ্যা আবিষ্কার করা মানে অন্ধকার নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। আধ্যাত্মিকতা হলো নিজেকে দেখা। নিজেকে দেখা মানে বাস্তবতার আলোকে জীবনের সাড়া প্রত্যক্ষণ করা, নিজের মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা সম্বন্ধে সচেতন হওয়া। জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন বেদ হলো কল্পনা, আর জীবন হলো বাস্তব। কল্পনা বাস্তবতার ব্যাখা দিতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা কল্পনার ব্যাখ্যা দিতে পারে। কল্পনা দিয়ে বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা করলে বাস্তবতা অস্পষ্ট ও ঘোলাটে হয়ে উঠে। বাস্তবতা দিয়ে কল্পনা বুঝার চেষ্টা করলে, কল্পনা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠে।

আমরা বাস করছি উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির যুগে। এই যুগে মনুষ্যের ধর্মচেতনাও তথ্য-প্রমাণ ভিত্তিক হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হতাশাজনকভাবে, তা এখনো রয়ে গেছে প্রস্তর যুগে। ধর্মকে বাস্তবতার আলোকে বিচার করতে মানুষের অনীহা তীব্র। তাই ধর্মসম্বন্ধে যে যতবেশি উদ্ভট দাবি করতে পারে, সে ততবেশি গ্রহণযোগ্য হয়। এজন্যই একেকজন একেকসময় একেকরকমের ঈশ্বর কল্পনা ছড়িয়ে চমক লাগিয়ে দেয় এবং সেই কল্পনার ভিত্তিতে গড়ে উঠে পরস্পর বিরোধী গোত্র ও সম্প্রদায়।

জীবন জীবিত, আর কাগজের বিধান মৃত। যদি প্রকৃতই কেউ জীবনবেদ বুঝতে চায়, তবে শুরু করা চাই নতুনভাবে- বাস্তব জীবনের বাস্তব সমস্যার আলোকে। পাখীর সৈন্যবাহিনী আর আসবে না আমাদের সমস্যা সমাধান করতে। আমাদের লাঠিগুলো কোনোদিন সাপ হবে না। জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো বর্তমানের সংঘর্ষ। মতবাদের গুরুত্ব মতবাদীদের কাছে। কৌতুহল মেটানোর জন্য মতবাদ চর্চা করা যেতেই পারে। কিন্তু মতবাদের সঙ্গে জীবন মিলাতে গেলে বিপর্যয় অনিবার্য। বেদের দাবি- বেদ দিয়ে জীবন বুঝা। জীবনবেদের দাবি জীবন দিয়ে বেদ বুঝা। ‘জীবনবেদ’-এ স্বাগতম।

. এমদাদুল হক : লেখক গবেষক

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত, সমকালীন ভাবনা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি