এস এম ফরহাদ ইসলাম মাসুম এর লেখা ঃ “অবহেলা”
ডিকশনারিতে হাজারও শব্দের মধ্যে আমার চোখে সবচেয়ে বিষাক্ত এবং ভয়ঙ্কর যেই শব্দটা ধরা পরেছে সেটা হলো “অবহেলা” !!
অবহেলা এমন একটা শব্দ, যেটা অভিভাবকের প্রতি প্রয়োগ করলে দেখা যাবে, অভিভাবক যখন সন্তানের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করবে তখন ঐ সন্তানের জীবনটা অন্ধকারে নিমজ্জীত হয়ে যাবে।
অতঃপর, যখনই এই শব্দটা শিক্ষকের প্রতি প্রয়োগ করবেন, তখন এর প্রতিফলন হিসেবে আমরা দেখতে পাবো ছাত্রের ভবিষ্যত আঁধারে ঢেকে যাবে।
ড্রাইভার যখন গাড়ী চালাতে অবহেলা করবে, তখন সে নিজেতো মরবেই সাথে অসংখ্য যাত্রীর জীবন হুমকির মুখে পতিত হবে।
উল্লেখিত অবহেলাগুলো যাদের প্রতি প্রয়োগ করা হয় তারা ১০০% থেকে ২৫% বুঝতে পারে তবে তারা উক্ত অবহেলার জন্য তেমন কষ্ট পায় না।
অতঃপর আসুন, এই অবহেলা নামক শব্দটি বন্ধুত্বের প্রতি প্রয়োগের ফলে কী হয়,
বন্ধুত্ব এমন একটি শব্দ, যাকে আমরা সহজ ভাষায় বলি “বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল”
অর্থাৎ, আমাদের জীবনে বন্ধুত্বের বাঁধন চিরন্তন সত্য বাঁধন। জীবনে অন্তত একটি হলেও ভালো বন্ধুর বিকল্প নেই।
সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে বন্ধুত্বের হাতটি খুব’ই প্রয়োজন। কিন্তু এই বন্ধুত্বের মর্যাদাটাও সবাই বুঝে না, দেখা গেছে একজন বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত অপর দিকে আরেকজন শুধু প্রয়োজনে বন্ধুকে স্বরণ করে, আর বাকী সময়টাতে বন্ধুকে ঐ অবহেলা নামক শব্দটা’ই উপহার দিয়ে থাকে।
অবশেষে ধীরে ধীরে তাদের মধুর বন্ধুত্বটাও শেষ হয়ে যায়।
আরেকপ্রকার অবহেলা আছে যেটা ভালোবাসার বিনিময়ে দেওয়া হয়;
বর্তমানে সবাই বলে ভালোবাসা অপবিত্র,
ভালোবাসা নষ্টামি !
হ্যাঁ আসলেই আজকাল এই ভালোবাসা শব্দটা শুনলেই কেমন যেন একটা ছোঁয়াছুঁয়ি এবং সুড়সুড়ির আভাস পাই। ভালোবাসা মানেই যেন, পার্কের চিপায়, রিক্সার হুট তুলে, রেস্টুরেন্টের পর্দা টানিয়ে শারীরিক সুখ আদান-প্রদান করা।
আসলে কি এটাকেই ভালোবাসা বলে?
যদি তাকে ভালোবাসা বলা হয়, তবে আমি বলব আপনি ভুল করে ভালোবাসা নামক একটা পবিত্র সম্পর্ককে অবৈধ সম্পর্কের সাথে ঘোলাটে করছেন।
তাইতো, আপনার এবং সমাজের চোখে ভালোবাসাটা একপ্রকার নিষিদ্ধ শব্দ।
আমি বলি, ভালোবাসা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বন্ধন;
শুধুমাত্র কিছু দুষ্কৃতকারী ভালোবাসার নামে নষ্টামি করে এই পবিত্র শব্দটাকে অপবিত্র করে চলছে যুগ-যুগ ধরে।
সারকথা;
ভালোবাসার নামে অবৈধ সম্পর্ক থেকে
বিরত থাকলেই এই শব্দটা সমাজের চোখে
খারাপ হতো না।
ভালোবাসা এমন একটি শব্দ যেটা ব্যক্তি জীবন কিংবা পারিবারিক জীবন সকল ক্ষেত্রেই হয়ে উঠে।
মাঝে-মাঝে স্বামী স্ত্রীকে বিভিন্ন উপায়ে ভালোবাসে আর ভাবতে থাকে আমাদের দাম্পত্য জীবনটা হবে পৃথিবীর সমস্ত সুখের দাম্পত্য জুটির একটা।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য প্রায়ক্ষেত্রেই তারা তাদের স্ত্রী থেকে উক্ত ভালোবাসার বিনিময়ে অবহেলা নামক বিষাক্ত শব্দটি ছাড়া কিছুই পায়না, ফলে একটা সময় তার ভালোবাসার কোমল হৃদয়টা পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে যায় !!
(তদ্রুপ, স্বামীর ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে)।
অতঃপর : এভাবেই অবহেলা নামক বিষাক্ত শব্দটির ছোঁয়ায় অসংখ্য সুখের সংসার ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যেতে দেখেছি আমার স্ব-চক্ষেই।
ভালোবাসার বিনিময়ে যেই অবহেলাটা দেওয়া হয়, সেটা সহ্য করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো মানুষেরই নেই।
কারণ, ভালোবাসার বিনিময়ে মানুষ অনেক কিছু চায় না, শুধুমাত্র একটু ভালোবাসা এবং একটু কেয়ারিং চায়।
কিন্তু যখন কেয়ারিং ও ভালোবাসার বিনিময়ে শুধুমাত্র অবহেলা নামক শব্দটা’ই পায়, তখন সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষদের মধ্যে একজন মনে করে।
তখন একটা সময় সে,
নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যায়।
অবহেলা শব্দটির একটা বিশেষ গুণও আছে,
যেমন : এই অবহেলা শব্দটির সাহায্যে একটা মোমের মতো হৃদয়ও একপর্যায়ে কঠিন পাথরের রুপ নেয়।
অবশেষে বলব, আজকে যাকে আপনি হাসি-ঠাট্টার ছলে অবহেলা করছেন, হয়তো সে তা বুঝা সত্যেও কিছুই বলছে না, কারণ; সে আপনাকে ভালোবাসে বলেই নীরবে নিভৃতে সব’ই সহ্য করছে।
তবে অবহেলার যে একটা গুণ উল্লেখ করেছি, সেই কথাটা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
“অতিরিক্ত অবহেলার ফলে একটা মোমের চেয়েও কোমল হৃদয় একপর্যায়ে কঠিন পাথরের রুপ নেয়”।
আপনি হয়তো জানেন না, এই অবহেলা নামক শব্দটা কতটা বিষাক্ত, তাইতো প্রতিনিয়ত তার প্রতি উক্ত শব্দটাকে প্রয়োগ করছেন।
তবে একদিন আপনি নিজে তা অনুভব করবেন যেদিন আপনার প্রতি উক্ত শব্দটা প্রয়োগ হবে।
তখন আপনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না।
প্রতিনিয়ত উক্ত আগুনে জ্বলবেন।
সুতরাং, সকলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, দয়াকরে কারও প্রতি অবহেলা শব্দটা প্রয়োগ করবেন না।
কারণ, মানুষ সব কষ্ট সহ্য করতে পারলেও ভালোবাসার বিনিময়ে কেয়ারিং বা একটু ভালোবাসা ছাড়া যখন অবহেলা উপহার পায় সে যন্ত্রণাটুকো সহ্য করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো মানুষের’ই থাকে না।
মানুষ ভালোবাসার বিনিময়ে অনেককিছু চায় না,
শুধুমাত্র একটু কেয়ারিং বা ভালোবাসা’ই চায়।
লেখক—-
এস.এম ফরহাদ ইসলাম মাসুম
সাংগঠনিক সম্পাদক
জাতীয় লেখক পরিষদ- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা
[sharethis-inline-buttons]