৩ ডিসেম্বর। ৯ মাস মরণপন যুদ্ধ শেষে বীরের বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে জনমানবহীন শহরকে নতুন করে প্রাণ সঞ্চারন করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয় এ জেলা। জয় বাংলার ধ্বনী শুনে আর হাজার হাজার মানুষের স্বতস্ফুর্ত সংবর্ধনায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন তারা।
সেদিনই স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়েছিল এই জেলার মাটিতে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এই কালো রাতে পাকসেনারা ঝাঁপিয়ে পরেছিল নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারা দেশসহ ঠাকুরগাঁবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন।
মুক্তিকামী মানুষ তাই মুক্তির স্বাদ নিতে অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। প্রায় ৮ মাস যুদ্ধের পর ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে পাকবাহিনী। ২ ডিসেম্বর পাকহানাদাররা বালিয়ার ভুল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয় । ২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী। ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা।
স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ। আমাদের সম্মুখযুদ্ধে পাকসেনারা পিছু হটতে শুরু করে।
ঠাকুরগাঁওয়ের অদূরে ভূল্লি ব্রীজ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনারা সৈয়দপুরে পালিয়ে যায় । বীরের বেশে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা।
গৌরবময় এই দিবসটিকে স্মরণ করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উদীচীর সভাপতি সেতারা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহিদ স্মরণে আলোক প্রজ্জ্বলন,শহিদ সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মুক্তিশোভাযাত্রা,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠান,মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারদের সম্মাননা প্রদান, ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিজয় দিবসের পাশাপাশি ৩ ডিসেম্বরের বীরত্বের কথা স্মরণ করুক এই জেলার মানুষ আর তা ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই প্রত্যাশা সকলের।
নুরে আলম শাহ : ঠাকুরগাঁও থেকে
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, মতামত
[sharethis-inline-buttons]