কসবা উপজেলার বল্লভপুরে জন্ম নিলেন যিনি;
মহা সাধক তিনি,ওলী তিনি আমরা কি তা জানি?
নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার
নারায়ে রিছালাত ইয়া রাসুল আল্লাহ (সাঃ)
নারায়ে হায়দারী ইয়া আলী (আঃ)
নারায়ে গাউছিয়া ইয়া গাউসুল আজম।
আসছে, আগামী ৩রা অক্টোবর ২০১৯ইং ১৮ই আশ্বিন ১৪২৬ বাংলা রোজ বৃহস্পতিবার
হযরত কুতবুল আলম,আরিফে বিল্লাহ, শাইখুল বাঙ্গাল,আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ আবু মাছাকীন, মতিউন রহমান, গোলাম কাদির লাহিন্দী,সুন্নি,হানাফি,কাদিরি,চিশতি,
সোহরাওয়ার্দি,নকশেবন্দি,আবুল উলাই (রহঃ) এর ঐতিহাসিক পবিত্র ওরশ মোবারক।
স্থানঃ মহিষবেড় দরবার শরীফ, উপজেলাঃ নাসিরনগর। জেলাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আল্লামা শায়খুল বাঙ্গাল ছৈয়দ আবু মাছাকিন লাহিন্দী আল কাদেরী দুদু মিয়া পীর সাহেব (রাহ্)।
দু চোঁখে দেখিনি যাঁরে
বাস করে মনের ঘরে।
খুঁজে ফিরে পাগল মন,
এ কেমন রক্তের বাঁধন!
একসময় সাধারন জ্ঞানের বই বলতে গুরুগৃহ প্রকাশনীর “বিশ্বের ডায়েরী” নামক বইটি ছাড়া বাজারে আর কিছুই ছিলনা।সেই বইটিতে বাংলাদেশের সূফী সাধকদের নামের তালিকায় “শায়খুল বাঙাল” নামক একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম ছিল।তিনিই বল্লভপুর গ্রামের জ্ঞান প্রদীপ -ডাক নাম দুদু মিয়া পীর।উনার মরহুম পিতা আলহাজ্ব মাকসাদ আলী মৌলানা সাহেবও আরবী,ফার্সি, উর্দু,হিন্দি ও সংস্কৃতে সুপন্ডিত ছিলেন।জানা যায়,ত্রিপুরা রাজদরবারে তিনি কিছুকাল কাজীর(বিচারক) দায়িত্বও পালন কররেন।বল্লভপুর করবস্থানে তাঁর সমাধী সৌধ রয়েছে।এছাড়া এ জনপদে আরো জ্ঞানী-গুণী রত্ন মানুষের জন্ম হওয়ায় বল্লভপুর হয়ে উঠে এক রত্নগর্ভা গ্রাম।
মহান আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর শানে দুদু মিয়া পীর সাহেবের লেখা মহামূল্যবান কাছিদাগুলো উনার সুযোগ্য সাহেবজাদা পীর ছিন মিম আশরাফ আলী আল কাদেরী সাহেব “কাছিদায়ে শায়খুল বাঙাল” শিরোনামে সংকলন করে পথহারা মানুষের মুক্তির জন্য তা বই আকারে প্রকাশ করেন।মহান আল্লাহ ছৈয়দ আশরাফ আলী আল কাদেরী হুজুরকে নেক হায়াত দান করুন।আমিন।
★★বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন জীবন নিবেদিত
মোবাল্লিগ-ইসলাম প্রচারক আল্লামা
শায়খুল বাঙ্গাল(রাহ্.)একজন স্মরণীয়
ব্যক্তিত্ব । তিনি আমৃত্যু রাসুলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি
ওয়া সাল্লামার অনুসরণের মধ্য দিয়ে
জীবন অতিবাহিত করেছেন । মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রেজামন্দি
হাসিলের জন্যে নিজেকে নিয়োজিত
রেখেছেন । মহান আল্লাহ্ পাকের
সান্নিধ্য অর্জনই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান ।
শুধু নিজেকে নয়,পারিবারিক ও
সামাজিক সকল স্তরের মানুষকে তিনি
পবিত্র কোরআনের আলোয় পথ
দেখিয়েছেন । রাসুলের সুন্নাতের
অনুসারী করেছেন । শিরকি বিদআতি
কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন
সোচ্চার । সামাজিক শান্তি বিনষ্টের
কোন কাজ তিনি পছন্দ করতেন না । তবে
প্রয়োজনে বাতিলের বিরুদ্ধে কিতাবি
উপস্থাপন ছিল তার আলেমানা স্বভাব ।
দলিলবিহীন তর্ক-সংলাপের ধারে
কাছেও ঘেষেন নি । কুরআন-সুন্নাহ্’র
পরিধির ভেতরে অটল থাকতেন এবং
এসবের আলোকে ইজমা-কিয়াসের
অবতারনা করতেন । ইবাদত বন্দেগিতে
নিমগ্ন আত্নশুদ্ধিতে জীবন নিবেদিত এই
আলেমে দ্বীন সূফী সাধক আল্লামা
শায়খুল বাঙ্গাল(রাহ্)–কে আজ আমরা
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি । আর মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে এই
প্রার্থনা রাখছি,- ” ওগো আল্লাহ্ !
চালাও মোদের সে পথে, যে পথে
তোমার প্রিয়জন গেছে চলে ।”
.
নাম পরিচয়ঃ
♥♥♥♥
ছৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম কাদির ।
পদবী ( কুন্নিয়ত) নামঃ আবু মাছাকীন ।
কবিত্ব নামঃ মতিউর রহমান ।
.
জন্মস্থানঃ
♥♥♥
কুমিল্লা(বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
জিলা,পরগনা-নুরনগর,থানা-কসবা, গ্রাম-
বল্লভপুর ।
পিতাঃ কাজী উল কুজাত হযরত মাওলানা
শাহ্ আবু মিজান মোহাম্মদ মাকছাদ
আলী হানাফী বেল্লভপুরী (রাহঃ)।
মাতাঃ হযরত ছাইয়িদা রুকিয়া আক্তার
খাতুন ।
জন্মকালঃ
♥♥♥
১২৭৯ বাংলা ৩ রা চৈত্র, মোতাবেক ১২৯০
হিজরী , মোতাবেক ১৮৭৩ ইংরেজী ।
.
শিক্ষা জীবনঃ
♥♥♥♥♥
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল প্রাথমিক পর্যায়ে
স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া
শুরুকরেন । আর সে সংগে আপন পিতা
থেকে আরবি-পারসি-উর্দু ভাষাজ্ঞন
অর্জন করেন । বাংলা ও সংস্কৃতে তিনি
পণ্ডিত ছিলেন । যৌবনে উচ্চ শিক্ষার
নিমিত্তে তার প্রবিত্র আত্না হু হু করে
কেঁদে উঠে । তিনি আপন পিতার
আদেশক্রমে প্রথমে কুমিল্লা গাজীমুড়া
মাদ্রাসা এবং পরে কলিকাতা আলিয়া
মাদ্রাসায় যেয়ে ভর্তি হন । তখন
মাদ্রাসার হেড মাওলানা (ছদরুল
মুদার্রিছ) ছিলেন আল্লামা আব্দুল হক
হাক্কানী (রহ) । শেষের দিকে উনার
উস্তাদ ছিলেন বিহার প্রদেশের ভাগলপুর
জিলার পুর্ণিয়ার বিশিষ্ট আলিম
হাযরাতুল আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ ছহুল
উছমানী সাহেব । হযরত শায়খুল বাঙ্গাল
উক্ত মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়ে দেশে ফিরে আসেন ।
.
মেধাশক্তিঃ
♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গালের মেধাশক্তি
খুবি প্রখর ছিল ।তিনি শৈশবের মুখস্ত
করা কবিতা বার্ধক্য জীবনে অনায়াসে
আবৃত্তি করতেন । একটি শব্দেরও এদিক
সেদিক হতনা । পারসী ভাষা ও কবিতার
প্রতি হযরত শায়খুল বাঙ্গালের খুবই ঝোঁক
ছিল । গোলেস্তা,বুস্তাঁ,ছিকান্দরনামা,
উইসুফ জুলায়খা,উরফী,খাকানী,[[দেওয়ান
হাফিজ প্রভৃতি পারসী কাব্যগ্রন্থগুলো
প্রায় মুখস্থই ছিল । ইলমে তাসাউফের
দিক থেকে তিনি মানতেকুত্ তয়ের,
দেওয়ানে শাম্ছে তাবরীজ,মাওলানা
রুমির মসনবি শরিফের খুবই ভক্ত ছিলেন ।
মসনবি শরিফ ছয় খন্ডে সমাপ্ত । অথচ এই
বিশাল গ্রন্থের প্রায় মসনবি গুলোই
উনার মুখস্থ ছিল । আশ্চর্য ! অতি বার্ধক্য
সময়েও তিনি দাস্তানের পর দাস্তান
নির্ভুল ভাবে আবৃত্তি করে যেতেন ।
আসলে ওসব ছিল উনার অতিরিক্ত
স্মরণশক্তি-যা ইলমে লাদুনির অন্তর্গত ।
হযরত শআয়খুল বাঙ্গাল অনেক ভাষা
জানতেন । তবে বাংলা, সংস্কৃত, আরবি,
পারসি, উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি
উল্লেখযোগ্য ।
.
দীক্ষাঃ
♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল(রহ্) সর্ব প্রথমে
আপন পিতার মাধ্যমে বায়আত হন এবং
কাদিরিয়া ছহ্রাওয়ারদিয়া ছিলছিলা
গ্রহন করেন । উক্ত ছিলছিলার তালিম
অনুযায়ী রিয়াজত-মুজাহিদায় কৃতিত্ব
অর্জন করে খিলাফত ও ইজাজত লাভ
করেন । হযরত শায়খুল বাঙ্গাল কুদ্দিস
সিররুহু সংসার জীবনের প্রতি উদাসিন
ছিলেন । ১৩২২ বংলা ৭ই চৈত্র ,
মোতাবেক ১৯১৬ ইংরেজি ২২শে মার্চ
রোজ রবিবার সন্ধ্যায় শায়খুল
বাঙ্গালের সন্মানিত পিতা হযরত
মাওলানা শাহ মাক্ছাদ আলী হানাফী
(রাহ) ইন্তিকাল করেন । পিতার পরলোক
গমনে হযরত শায়খুল বাঙ্গাল সংসার
জীবনের প্রতি আরও উদাসিন হয়ে পড়েন ।
তিনি বাড়িঘড় ছেড়ে পাহাড় জঙ্গলের
দিকে মনোনিবেশ করেন । তিনি
দীর্ঘদিন পাহাড়-জঙ্গলে অবস্থান করে
কঠোর রিয়াজত-মুজাহিদায় নিজকে
নিয়োজিত রাখেন । কথিত আছে – সেই
সময়ে অদৃশ্য প্রাণীরাও উনার সাথে
যোগাযোগ রক্ষা করত । এমন কি হিংস্র
বন্য পশুরাও উনাকে তাজিম করত । আমরা
সেদিকে অগ্রসর হয়ে বর্ণনার কলেবর
বাড়াতে চাইনা । উনার পবিত্র জবান
থেকে শোনা মতে এবং উনার ব্যক্তিগত
ডায়রি থেকে যতটুকু আমরা বুঝতে
পেরেছি এতে দেখা যায় হযরত শায়খুল
বাঙ্গাল সর্বমোট ৩৬(ছত্রিশ)টি
ছিলছিলার ধারক-বাহক ছিলেন । পরবর্তী
সময়ে যে সব মহাপুরুষ থেকে তিনি
তালিম গ্রহন এবং সে সঙ্গে খিলাফত ও
ইজাজত লাভ করেছেন তাঁরা হচ্ছেন ,
ইন্ডিয়া রামপুর মণি হারানের কুতবুল
আলম হাযরাতুল আল্লামা মুফতি
মোহাম্মদ ছাহুল উছমানী ছাহেবে পুর্ণি ।
তাঁদের থেকে চিশতিয়া ছাবিরিয়া
ছিলছিলার খিলাফত ও ইজাজত লাভ
করেন । কুতবুজ জামান হজরত শাহ্ আবুল
বাশার মজনুন এবং কসবা থানার আড়াই
বাড়ীর বড় হুজুর কেবলা হাযরাতুল
আল্লামা মাওলানা আছগর আহ্মদ
আলকাদিরি ছাহেব থেকে কাদিরিয়া
ছিলছিলার খিলাফত ও ইজাজত লাভ
করেন।
হজ্জ্বে বাইতুল্লাহ্ গমনঃ
♥♥♥♥♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল সাতবার খানায়ে
কাবার হজ্জ ও সাতবার মদিনা
মুনাওয়ারাতে হাজিরি দিয়েছেন । ১৩৪৮
বাংলায় তিনি অনেক মুরিদ ও খলিফা
সমভিব্যাহারে হজ্ব পালন করেন । তখন
অনেক আরবিও উনার হাতে বাইআত গ্রহন
করেন এবং উনি ‘ শায়খুল বাঙ্গাল ‘
অর্থাৎ ‘বাংলার শায়খ’ খেতাবে ভূষিত
হন ।
.
দেশ ভ্রমনঃ
♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল বহুদেশ ভ্রমন
করেছেন । যথা – বায়তুল মুকাদ্দাস,
জর্দ্দান, শাম (সিরিয়া), ইরাক, মিশর,
তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান,
বার্মা ও ভারত৷ভারতের সর্বত্র পরিভ্রমন
করেন ।
ধার্মিকতাঃ
♥♥♥
.
জীবনের শুরু থেকেই তিনি ধর্মানুরাগী
ছিলেন । শরিয়তের সাধারণ হুকুমের
বেলায়ও কোনরুপ অবহেলা করতেন না ।
তাও যত্ন সহকারে আগ্রহ ভরে পালন
করতেন । হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের ছুন্নতের
খুবি অনুরাগী ছিলেন । কোন ছুন্নতে
জায়েদাকেও অবহেলা করতেন না ।
অত্যন্ত মহব্বতের সাথে আমল করতেন ।
.
পোষাক-পরিচ্ছদঃ
♥♥♥♥♥♥
.
তিনি নিছ্ফেছাক অর্থাৎ পায়ের
অর্ধনালা পর্যন্ত লম্বা ও গোলজামা
পরিধান করতেন । হযরত শায়খুল
বাঙ্গালের পবিত্র মাথায় ছুন্নতী বাবরী
চুল ছিল । খৈউরি করার সময়ে মাথার চুল
অর্ধ কান বরাবর কাটতেন । চুল বেড়ে
কানের লতি পর্যন্ত এসে ঠেকত । এর
চেয়ে লম্বা কখনো দেখা যায়নি ।তিনি
সাধারণতঃ লুঙ্গি পরতেন । বাইরে বের
হলে সেলওয়ার-পায়জামা পরিধান
করতেন । শুক্রবার ও বাইরে কোথাও বের
হলে আবা-কাবা-মিছলা ইত্যাদি মুসলিম
সহিয়ানা পোষাক-পরিচ্ছেদ ব্যবহার
করতেন । তিনি অনেক প্রকারের পাগড়ি
বাঁধতে পারতেন । জুতোর মধ্যে পায়জারই
অধিক পছন্দ করতেন । পবিত্র দাড়ি গোল
ও এক মুঠোরও অধিক লম্বা ছিল ।
.
দৈহিক অবয়বঃ
♥♥♥♥♥
.
তিনি লম্বা দেহ, প্রসস্ত মুখ, বড় মস্তক,
বিস্তৃত কপাল, উন্নত নাসিকা,
বিস্ফারিত চক্ষু, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, উজ্জ্বল
বদন, ব্যক্তিত্বপূর্ণ চেহারা এবং
অদ্বিতীয় ভ্র যুগলের অধিকারী ছিলেন ।
এত লম্বা-চওড়া-ঘন ভুরু অপর কোথাও
দেখা যায়নি । বক্ষস্থল প্রসস্ত অথচ পেট
ছিল সমতল । ইন্তিকালের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত
এক ফোঁটা চর্বিও তাতে জমা হয়নি ।
মাথার চুল অর্ধ কোকড়ানো এবং কন্ঠস্বর
ছিল উচ্চ ও সুমিষ্ট আওয়াজ সম্পন্ন ।
দেহের কোথাও কোন খুঁত ছিল না ।
দীনি জয্বা বা ধর্মানুরাগঃ
♥♥♥♥♥♥♥
.
দীনি দরদে শায়খুল বাঙ্গালের চক্ষু
সিক্ত হয়ে উঠত । দীনি আলোচনা কালে
দরদের স্থানে তিনি শিশুর মতো কেঁদে
উঠতেন । শরিআত গর্হিত কাজকর্ম তিনি
সহ্য করতেন না । সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ
করতেন । প্রয়োজনে জিহাদ ঘোষণা
করতেন । এ ব্যাপারে উনার কোনরুপ
আপোষ ছিলনা । তিনি আল্লাহ্
তাআলার পবিত্র দরবারে হাত উঠায়ে
ঘনঘন মুনাজাত করতেন । এতে অনেকে
বিরুক্তি বোধ করত । কিন্তু এ ব্যাপারে
সামনে কেউ কিছু বলতে সাহস করত না ।
অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা মুনাজাতে
হাত উঠায়ে রাখতেন ।
.
ধৈর্য-সহিষ্ণুতা
♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল বড়ই ধৈর্যশীল
ছিলেন । কঠিন মসিবত ও নিদারুন
পরিস্থিতিতেও তিনি বিচলিত হতেন
না । তিনি পারসী ভাষাতে প্রায়ই
বলতেন, “ দুশমন কি ক্ষতি করবে, পরম বন্ধু
আল্লাহ্ পাক যদি সহায় থাকেন ।“ তিনি
কারো প্রতি কখনো বদদুআ করেন নি ।
জানের দুশমনকেও তিনি হাসিমুখে ক্ষমা
করে দিতেন । কারো প্রতি কোন চাপা
বিদ্বেষ পোষণ করে রাখতেন না । সুখে-
দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছার উপর
সন্তষ্ট থাকতেন
দুঃস্থ মানবতার সেবাঃ
♥♥♥♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল আমরণ কাল পর্যন্ত
সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ।
মানুষের দঃখ-কষ্ট অভাব-অনটন উনাকে
বড়ই বিচলিত করে তুলত । উনি নিজের
কথা কখনো ভাবতেন না । মানুষের
সমস্যাই ছিল উনার সমস্যা । মানুষের দুঃখ-
কষ্টে উনার চিরকোমল হৃদয় শিশুর মতো
কেঁদে উঠত । তিনি শারীরিক ও রুহানী
উভয় শক্তির দ্বারা দুঃখীকে সাহায্য
করতেন । উনার দরবারে
অভাবী,অনাথ,এতিম,নিরাশ্রয়,নিপীড়ত,অবহেলিত বিধবানারী প্রভৃতিগণের
বিশেষ প্রবেশাধিকার ছিল ।
অনাথদেরকে তিনি সন্তানের মতো
ভালোবাসতেন । আর এজন্যই উনার
মুরশিদে বরহক উনাকে “ আবু মাছাকীন “
বা অনাথের পিতা খেতাবে ভূষিত
করেছিলেন । তিনি নিজে না খেয়ে
ভুখাকে খাওয়াতেন । তিনি নিজে না
পরে বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতেন । নিজের
গায়ের জামা খোলেও অপরকে দান
করতেন । নিজের বসতঘর ভেঙ্গে অপরকে
দিয়ে দিতেন । তিনি নিজের গোলার
ধান বিলিয়ে দিয়ে সারা বছর নীরবে
কষ্ট করতেন । বিলানোই ছিল উনার
মজ্জাগত স্বভাব । তিনি নিজ হাতে
মেহমানকে বিছানা-পত্র করে দিতেন ।
মেহমানকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন
করাতেন । শুধু উনার এসব উচ্চগুণ সমূহ
লেখতে গেলে পৃথক বই রচিত হবে । এদিক
থেকে আমরা উনাকে একজন ইন্ছানে
কামীল বা পূর্ণমানবরুপে দেখতে পাই ।
আচার-ব্যবহারঃ
♥♥♥♥♥
.
তিনি বড়ই খোশ-মেজাজের অধিকারী
ছিলেন । দূর থেকে উনাকে দেখলে,
অনেকের মনেই ত্রাসের সঞ্চার হত ।
কিন্তু উনার হৃদয়ের কাছাকাছি চলে
আসলে, মানুষ এতই বিমুগ্ধ হত যে, তখন এক
মুহুর্তের জন্যেও উনার পাশ পরিত্যাগ
করলে, প্রাণে ব্যাথা পেত । উনার কথা
বার্তা খুবই সুস্পষ্ট ও সুমধুর ছিল । সারা
রাত সারা দিন শুনতেই ইচ্ছে করতো । উনি
সম্মানীকে ইজ্জত , বড়কে শ্রদ্ধা ও
শিশুকে বড়ই আদর-স্নেহ করতেন । উনি
কাউকে কখনো ‘ তুই ‘ শব্দ ব্যবহার করেননি
। নিজ পারিবারিক লোকদেরকে ‘ তুমি ‘
এবং অপর সবাইকে ‘ আপনি ‘ ব্যবহার
করতেন । তিনি বড়ই সহনশীল ও ধৈর্যশীল
ছিলেন । পাহাড় পরিমান মসিবতকেও
তিনি স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতেন
। আর ইহাতো আল্লাহ্ ওয়ালাদের
চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ।
.
দীনি খেদমতঃ
♥♥♥♥♥
.
তিনি যৌবনের শুরু থেকে পরলোক গমনের
পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত ইসলামের জাহিরী ও
বাতিনী শিক্ষাদানে রত ছিলেন ।
কখনো তিনি নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে
থাকতেন না । শিক্ষাদানের বেলায়
তিনি বড়ই উৎসুক ও ধৈর্যশীল ছিলেন ।
তিনি জীবনে অনেক মকতব-মাদ্রাসা-ম
সজিদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন । বেশ
কয়েকবারই নিজের ঘর ভেঙ্গে মসজিদ
মাদ্রাসায় দান করেছেন । আল্লাহ্-
রাসুলের উদ্দেশ্যে ও দানের বেলায়
উনার মন ছিল বড়ই উদার ও প্রশস্ত ।
.
তীসার্রোফ ও কারামতঃ
♥♥♥♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গালের রুহানী ক্ষমতা
ছিল খুবই প্রবল । আল্লাহ্ তাআলা উনার
মাধ্যমে হাজার হাজার অলৌকিক ঘটনা
সংঘটিত করায়েছেন । এই বিংশত
শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিপূর্ণ
যুগেও আল্লাহ্তাআলা হযরত শায়খুল
বাঙ্গালের মাধ্যমে যে সব কারামত
প্রকাশ করায়েছেন, হাল জামানায় এরুপ
দ্বিতীয় কোন নজীর আমাদের জানা নেই
।উনি বাক্সিদ্ধ ছিলেন । জবানে যা
বলতেন তা-ই হতো । আল্লাহ্ প্রদত্ত
রুহানী ক্ষমতা বলে উনার মাধ্যমে মৃত
শরীরেও প্রাণ সঞ্চারিত হত ।আল্লাহু
আকবর । তিনি ছিলেন এই আখিরী
জমানায় কারামত সম্পন্ন অনন্য অলৌকিক
ক্ষমতার অধিকারী এক আল্লাহ্ওয়ালা
মহাপুরুষ ।
.
পুস্তক-রচনাঃ
♥♥♥♥
হযরত শায়খুল বাঙ্গালের জীবনে অবসরতা
ছিলনা । ইবাদত-বন্দেগীর ফাঁকে তিনি
কর্মব্যস্ত থাকতেন । তিনি কখনো শোয়ে
বসে সময় নষ্ট করতেন না । তবু , রাতের
আঁধারে আলো নিয়ে বসে কিছু কিছু
লেখতেন । কিন্তু ছাপার অক্ষরে প্রকাশ
না হওয়ার কারনে সব পান্ডুলিপিগুলোই
পরে পরে বিনষ্ট হয়ে গেছে । আমার
জানামতে শুধু “ তামীজুল কুরআন ’’ নামে
একটি পুস্তকই ছাপার অক্ষরে প্রকাশ
পেয়েছিল ।
.
সুর-ছন্দঃ
♥♥♥
.
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের আশিক
বান্দাগণ পবিত্র সুর-ছন্দ ভালোবাসেন ।
তাঁরা অনেক সময়েই গুণ গুণ করে থাকেন ।
কেননা পবিত্র সুর-ছন্দ আল্লাহ্
প্রেমিকগণের হৃদয়ের এক মহা প্রশান্তি ।
ইসলামের দৃষ্টিতে কবি দু প্রকার ।
বাস্তবভিত্তিক কবি ও ভাবভিত্তিক-কবি
। অন্যভাবে বলতে গেলে-ধর্মভিত্তিক
কবি ও কল্পনা ভিত্তিক কবি ।
বাস্তবভিত্তিক বা ধর্মভিত্তিক কবিগণ
হলেন তাঁরাই, যাঁরা ধর্মভিত্তিক বা সত্য
ভিত্তিক কবিতা রচনা করে থাকেন ।
অর্থাৎ তাঁরা ধর্মীয় বিষয়বস্তু, সত্যকথা
বা সৎ উপদেশ কবিতা ও গজলের মাধ্যমে
প্রকাশ করে থাকেন । সীমা ছাড়িয়ে
বাড়িয়ে কমিয়ে তাঁরা কিছুই বলেন না ।
এসব কবি হলেন চির স্মরণীয় ও বরণীয় ।
অপরদিকে যে সব কবি নাস্তিক প্রকৃতির ,
আখিরাতে অবিশ্বাসী খেয়ালীপনা বা
কল্পনা-প্রবণ ও সীমা ছেড়ে বাড়ানো
কমানো যাদের স্বভাব , তারা হলেন
ভাবভিত্তিক কবি । তারা নিত্য নতুন
ভাবের অনুসারী । তাদের ভাব ও ধারণা
স্থায়ী হয় না ।তারা অনুসরণের সম্পূর্ণ
অযোগ্য । এ শ্রেণির ভাবভিত্তিক
কবিদের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ রাব্বুল
আলামিন ইরশাদ করেনঃ- পথহারা
ব্যক্তিরাই কবিদের অনুসরণ করে । আপনি
কি দেখছেন না – ওরা ( কবিরা ) বনে-
জঙ্গলে মাথা খুঁড়ে ঘুড়ে মরে ( অর্থাৎ
ওরা সিমা ছেড়ে বাড়িয়ে কমিয়ে
বর্ণ্না করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে
থাকে )। আর যা তারা করেনা তা-ও
তারা বলে ।’’ (আল-কুরআন, সুরা-শোআরা
২২৪-৭ আয়াত )।
.
উক্ত পবিত্র আয়াতগুলোতে ধার্মিক
কবিদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি । শুধু
নাস্তিক ও উদ্ভট রচনাকারীদের
সম্পর্কেই বলা হয়েছে । ধার্মিক কবিদের
সম্পর্কে উল্লিখিত আয়াতের শেষাংশে
বলা হয়েছেঃ- ” তবে তাদের কথা ভিন্ন ,
যারা ইমান আনে , সৎকর্ম করে এবং
আল্লাহ্কে খুব স্মরণ করে…….।’’
.
অতএব , এ কথা আর বলার অপেক্ষা
রাখেনা যে , ধার্মিক কবিরা কখনো
উপেক্ষনীয় নয় । বরং তাঁরা চিরদিনই
প্রশংসনীয় ও বরণীয় । আমাদের হযরত
শায়খুল বাঙ্গাল একজন উঁচু শ্রেণির
আরিফ ও আল্লাহর আশিক ছিলেন ।
আল্লাহ্-প্রেমিকদের স্বভাব অনুযায়ী
তিনিও ছামা পছন্দ করতেন । তবে উনার
ছামার মধ্যে বাদ্যযন্ত্রের সমাবেশ
থাকত না । তিনি বাদ্যযন্ত্র পছন্দ করতেন
না । উনার মজলিশের নামকরণ ছিল – ‘
দরবার ’ । উনার দরবারে বাদ্যযন্ত্র ব্যতীত
শুধু গজল গাওয়া হত । হযরত শায়খুল
বাঙ্গাল মূলত কোন কবি ছিলেন না ।
তিনি প্রেমের আবেশে মনের আবেগে
পবিত্র কুরআন-হাদিস ও ইলমে তাসাউফের
তাত্ত্বিক উপলব্ধিকে ছন্দের মাধ্যমে
গজলের সুরে প্রকাশ করেছেন । যার
নামকরণ করা হয়েছে – কাছিদা । উনার
কাছিদার সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা
নেই । তবে সম্ভবত হাজারের ওপরে গিয়ে
দাঁড়াবে । অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ! উনি
নিজে সেগুলো সংরক্ষণ না করার কারনে
আজ অনেক কাছিদাই বিলীন হয়ে গেছে ।
পারিবারিক জীবনঃ
♥♥♥♥♥♥
.
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল পারিবারিক
জীবনে একজন আদর্শ গৃহস্বামী ছিলেন ।
আপন স্ত্রীর নিকটে অত্যন্ত শ্রদ্ধার
পাত্র এবং আপন সন্তান-সন্ততির নিকটে
ছিলেন একজন আদর্শ পিতা ও একান্ত
ভক্তিভাজন । তিনি আপন স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততিকে ইসলামের গন্ডির মধ্যে
পরিচালনা করতেন । ইসলামের গন্ডির
বাইরে এক পা অগ্রসর হবার সাধ্য কারো
ছিল না । উনার সন্তানদের মধ্যে কেউ
কোনদিন ইংরেজদের কোন পোষাক-
পরিচ্ছেদ পরিধান করেনি । কেননা হযরত
শায়খুল বাঙ্গাল ছিলেন ইংরেজদের
ঘোর বিরোধী । নারীদের বেলায় তিনি
শাড়ীর পরিবর্তে সেলওয়ার-কামিজ-নেকাব পছন্দ করতেন এবং আপন পরিবারস্থ
নারীদেরকে তা-ই পরিধান করায়ে
গেছেন ।
মহা প্রয়াণঃ
♥♥♥♥
.
প্রয়োজনের তুলনায় এই পৃথিবীতে
মানুষের আয়ুস্কাল বড়ই ক্ষীন ও নগণ্য ! তা-
ও রাব্বুল আলামিনের একান্ত ইচ্ছা । এ
রহস্য তিনিই ভাল জানেন । আমাদের
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল (রাহ্) অপরাপর
মানুষের তুলনায় অনেক দীর্ঘজীবি
ছিলেন । শেষ সময়েও তিনি দৃষ্টিশক্তি ,
শ্রবণশক্তি , বাক্ষমতা , দৈহিক ক্ষমতা
এবং সর্ব উর্ধ্বে স্মরণ শক্তির কিছুমাত্রও
ক্ষীণ হয়নি । ইন্তিকালের তিন-চার দিন
পূর্বেও তিনি স্বহস্তে ছোট সুঁই দ্বারা
কাপড় সেলাই করেছেন । উনার
স্থলাভিষিক্ত খলীফায়ে কবীর
ছাজ্জাদানশীন ছাহেবজাদার সাথে
পবিত্র ইন্তিকালের তিন দিন পূর্বেও
তিনি পূর্ণ স্মরণশক্তির সাথে আলাপ-
আলোচনা করেছেন । অতীতের অনেক
ঘটনা উত্থাপন করে শুনিয়েছেন । ফার্সি
ভাষার অনেক শেরাশার দ্বারা নছিহত
করেছেন । আল্লাহু আকবার ! তিনি
বললেনঃ বাবা , আর বেঁচে থাকার
সার্থকতা কি ? আয়ুস্কালতো অনেক
হয়েছে । এবার মালিকের ডাকে সারা
দিতে হবে । পৃথিবী চিরস্থায়ী নয় ; এ এক
সরাইখানা মাত্র । তোমার আম্মাকে
আমার সালাম দিও । পরিবেশ-পরিস্থিতি
স্বীকার হয়ে নিজকে পরিবর্তন করো
না । আমাদের শরীরে আরবি রক্ত ধারা
প্রবাহিত । সুতরাং নীচু কাজ করে পূর্ব
পুরুষদের অভিশাপ ডেকে এনো না ।
সর্বাবস্থায় আল্লাহ্-রাসুলের হুকুমের
অনুসরণ করবে । কোন পরিস্থিতিতেই
আল্লাহ্-রাসুলের নাফরমানী করবে না ।
প্রতি মূহুর্তে আল্লাহ্-রাসুলকে স্মরণ
রাখবে,………
চির বিদায়ঃ
♥♥♥♥
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল (রাহ্) ১৩৮৫ বাংলা
১৬ ই আশ্বিণ ( বাংলাদেশ পঞ্জিকা মতে
১৮ ই আশ্বিণ ), মোতাবেক ১৩৯৮ হিজরি ২৯
শে শওয়াল এবং ১৯৭৮ ইংরেজি ৩ রা
অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার সকাল ৮-২৫
মিনিটে ইন্তিকাল করেন । ইন্না
লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন ।
তখন উনার পবিত্র গৃহে এক মুঠো অন্নও
অবশিষ্ট ছিল না । আল্লাহু আকবার !
তিনি যে স্থানে ইন্তিকাল করেন সে
স্থানেই সমাহিত করা হয় ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জিলার নাছির নগর
থানা , মহিষবেড় গ্রামে পবিত্র মাজার
শরিফ অবস্থিত ।
হে রাব্বুল আলামিন,যুগযুগ ধরে তোমার
বন্ধু প্রদীপকে প্রজ্জ্বলিত রেখো ।
.
“ আগার গীতী ছারাছার বাদ গীরাদ
চেরাগে মাকবুলানে হরগেজ নামিরাদ ।’’
.
সারা জাহান ব্যাপী যদিও ঝড় উঠে , তবুও
আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত প্রেমিকদের
আলো নির্বাপিত হবে না ।
👍তথ্যসূত্রঃ
এস এম আশরাফ আলী আল কাদেরী
সংকলিত “কাছীদায়ে শায়খুল বাঙ্গাল”
Some text
ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী
[sharethis-inline-buttons]