ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভূয়া ও হাতুড়ে এক গাইনি চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন উচালিয়াপাড়া এলাকায় ভূয়া কথিত গাইনি চিকিৎসক মোছাঃ সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় ভুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোছাঃ স্বপ্না আক্তার (২০) নামে ওই প্রসূতি মা ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত স্বপ্না আক্তার উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের কুতুব আলীর মেয়ে। এক বছর আগে স্বপ্নার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মোঃ নান্নু মিয়ার প্রবাসী ছেলে সফিকুল ইসলামের সাথে। এদিকে হাতুড়ে এ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মা ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত স্বপ্নার ফুফু মোছাঃ সুজেরা বেগম জানান, সকালে প্রসব বেদনা উঠলে সিজার করতে স্বপ্নাকে সরাইল প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। স্বপ্নার শ্বাশুরি পীড়াপীড়িতে স্বপ্নাকে গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগমের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে শরীরে স্যালাইন পুশ করে স্বপ্নাকে ফেলে রাখা হয়। দুপুরের দিকে বাচ্চার মাথা খানিকটা দেখা দিলে স্বপ্নার চিৎকারে ঘরের দেওয়াল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। আমরা ওই সময়ে স্বপ্নাকে সেই অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে এনে সিজার করতে অনেক অনুরোধ জানাই। তখন গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগম ও তার এক সহকারী আমাদের ওপর চড়াও হন।
বিকেলে স্বপ্নার মৃত বাচ্চা প্রসব হয়। তখন চিকিৎসক সালেহা বেগম সেই স্থানে কাটতেই স্বপ্নার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন স্বপ্না উচ্চ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলে, ফুফু আমার বাবাকে দেখাও আমার ছোট ভাই-বোনকে দেখাও আমি আর বাঁচব না। এই কথাগুলো বলতে বলতে জিহ্বা বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে স্বপ্না অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপ্না ও তার নবজাতক সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত স্বপ্নার নিকটাত্মীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী কাশেম মিয়া জানান, ভূয়া গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগম ছয় বছর আগে আমার স্ত্রী মুন্নি বেগম (২৪)কে স্বপ্নার মতো একই কায়দায় হত্যা করেছিলেন। তখন আমার স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার কথা ছিল। সেই সময়ে সালেহা বেগম অর্থের জোরে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে রক্ষা পান। এদিকে রাতেই উচালিয়াপাড়া এলাকায় সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় এসে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী লোকজন জানান, সন্ধ্যায় এই বাসায় এক প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশু মারা যাবার পর সালেহা বেগমসহ অন্যরা এ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
সালেহা বেগমের স্বামী আবদুল কাইয়ূম সরাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্যাথলজিক্যাল বিভাগে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে সালেহা বেগম গাইনি ওয়ার্ডে চুক্তি ভিত্তিক ‘আয়া’ হিসেবে কাজ করতো। এক সময় তিনি নিজেকে পরিপক্ব গাইনি বিষয়ক ও পরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের কাছে নিজেকে ‘গাইনি চিকিৎসক’ পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাসায় প্রসূতি মায়েদের নানা চিকিৎসা শুরু করেন সালেহা বেগম। তিনি দীর্ঘ বছর যাবত এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক নুরুল হক (তদন্ত) জানান, এ ব্যাপারে কোন মামলা ও অভিযোগ করা হয়নি । তবে ঘটনাটি শুনেছি।
শেখ মো.ইব্রাহীম, সহ-সম্পাদক, দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]