কয়েক দিন যাবত বেকার বন্ধুদের এখানে আছি। দেখছি তাদের দিনকাল। উপভোগ করছি তাদের সঙ্গ। বেকার থাকলেও তাদের চোখে-মুখে চিন্তার লেশটুকু নেই। সবাই হাসিখুশি। যদিও খাবার তিনবেলা ঠিকমত জোটে না।
বেকার বন্ধুদের সকালে উঠেই খাবারের চিন্তা করতে হয়। কোনদিন চাল থাকলে, ডাল থাকে না। লবণ থাকলে, থাকে না হলুদ-মরিচ। শুরু হয় চিল্লাচিল্লি। আজকে টাকা কে দিবে? শামসু বলে, ফরিইদ্দা! টেহা দে। ফরিদ কাকুতি-মিনতি করে কয়-ভাই আজকে আমার কাছে নাই। আজকে তুই দে। পরে কাজ পায়লেই তোরে দিয়া দিমো।
কোনোমতে টাকার ব্যবস্থা হলে পাশের দোকান থেকে বাজার করা হয়। যার দায়িত্ব সে রান্না করে। বেশির ভাগ আলু ভর্তা, ডাল পাকানো হয়। তারপর শুরু হয় খাওয়াদাওয়া। খাওয়ার মাঝে কে বেশি খেলো তা নিয়ে বেধে যায় তুমুল ঝগড়া। ঝগড়াটা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
সকালে খাওয়ার পর আরকোনো চিন্তা নেই। সবার চেহারায় রাজ্য জয়ের ভাব ফোটে উঠে। কেউ গান গায়, কেউ মোবাইলে শোনে। কেউ আবার মোবাইলে কথা বলে।
তখন আমার বেকার বন্ধুদের দেখলে মনে হয়, পৃথিবীতে ওরাই সবচেয়ে সুখি! ওদের মত সুখি আর কেউ নেই।
দুপুরে কেউ কেউ কাজ খোঁজতে বের হয়। যাবার আগে খুব ভাব নিয়ে যায়। বলে, কাজ খোঁজতে যায়তাছি। আজকে কাজ বাউ হয়বোই। কিন্তু আসার পর আর সেই ভাবটা থাকে না। চোখেমুখে হতাশার চিহ্ন ফোটে উঠে। একটা দীর্ঘশ্বাস! ফেলে বলে, আইজও কাম বাউ হয় নাই।
রাতে শুরু হয় মোবাইলে লুড্ডু খেলা। চলে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত। এসময় মোবাইলে চলে বাংলা, হিন্দি গান। গানের তালে তালে জমে উঠে খেলা। খেলতে খেলতে কখনো রাতের খাওয়ার কথা ভুলে যায়। না খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
আমার বেকার বন্ধুদের দিন খেয়ে না খেয়ে যেভাবেই খাটোক, প্রত্যেকের স্বপ্ন কিন্তু আকাশছোঁয়া! নাজমুলের স্বপ্ন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া। দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করা। ফরিদের স্বপ্ন বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করে বসে বসে খাওয়া। শরিফ আর শামসুর স্বপ্ন প্রচুর টাকাপয়শার মালিক হওয়া।
জুনায়েদ আহমেদঃ শিক্ষার্থী
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]