বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:৪৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বিজ্ঞানের অগ্রগ‌তি‌তে সমন্বয় সাধন অপ‌রিহার্য

৮৩৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

বর্তমা‌নে আমরা এমন এক বি‌শ্বে বাস কর‌ছি যা বস্তুর উন্ন‌তি সাধ‌নে নি‌জে‌কে শতভাগ স‌চেষ্ট ক‌রে রে‌খেছে। আধু‌নিক ক‌থিত বিজ্ঞা‌নের মূল ভি‌ত্তি হল বস্তু। বস্তুর স্বরূপ ও বৈ‌শিষ্ট্য আ‌বিষ্কারই যার মূখ্য উ‌দ্দেশ্য। য‌দিও বা তারা ব‌লে থা‌কে মানব সভ্যতার উন্ন‌তি ও ক্রম‌বিকা‌শে বিজ্ঞা‌নের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ উন্ন‌তি ও ক্রম‌বিকাশ কখনও ধ্বং‌সের দি‌কে নিয়ে যায় না সভ্যতা‌কে, বরং সভ্যতা‌কে টি‌কি‌য়ে রা‌খে কাল থে‌কে কালান্ত‌রে। কিন্তু আধু‌নিক বি‌শ্বের দি‌কে আমরা দৃ‌ষ্টিপাত কর‌লে দেখ‌তে পাই যতই বস্তুগত বিজ্ঞান উন্ন‌তির দি‌কে ধা‌বিত হ‌চ্ছে বিশ্বও তত ধ্বং‌সের সম্মুখ প্রা‌ন্তে অগ্রসর হ‌চ্ছে। তার কারণ কী?

প্রথ‌মে আমা‌দের দেখ‌তে হ‌বে বিশ্ব কী শুধু বস্তু দ্বারাই নি‌র্মিত না এ‌তে অন্য কিছু আ‌ছে? য‌দি বিশ্ব শুধু বস্তু দ্বারা নি‌র্মিত হ‌তো ত‌বে শধু বস্তু বিষয়ক চিন্তা ও গ‌বেষণা বিশ্ব‌কে টি‌কি‌য়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হ‌তো। অথচ চলমান বি‌শ্বের বিশ্ব প‌রি‌স্থি‌তি আমা‌দের সম্মু‌খে এ প্র‌শ্নের উত্তর নি‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। বস্তুবাদ দিন কী দিন মানব সভ্যতা‌কে ধ্বং‌সের দি‌কে নি‌য়ে যা‌চ্ছে। চার‌দি‌কে ক্রমাগত যে হা‌রে বস্তুর উন্নয়ন হ‌চ্ছে তা দ্বিগুণ হা‌রে বি‌শ্বে সংঘা‌তের প‌রিমাণ বে‌ড়ে চ‌লে‌ছে। আজও তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞান এ প্র‌শ্নের কো‌নো চূড়ান্ত সমাধা‌নে আস‌তে পা‌রে নি।

‌বিশ্ব সৃ‌ষ্টির মূল রহ‌স্যের অন্যতম বিষয় হ‌লো বস্তু ও শ‌ক্তির সমন্বয়। আধু‌নিক কা‌লের তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞা‌নীগণ যা সাধন কর‌তে ব্যর্থ। য‌দি তারা এর সমাধান দি‌তে পা‌রে ত‌বে হয়‌তো তা‌দেরকে দি‌য়ে বিশ্ব ব্যবস্থার সুস্থিতিশীলতা কামনা করা যায়। ত‌বে তারা ক‌স্মিনকা‌লেও এর সমাধান কর‌তে পার‌বে না। কারণ বিজ্ঞান শুধু অনুমান আর ধারণার উপর নির্ভর ক‌রে পর্য‌বেক্ষণ দ্বারা প্রাপ্ত প্রমাণ‌কে স্বীকৃ‌তি দেয়। এর স্থ‌লে শ‌ক্তিশালী অন্য‌কিছু পে‌লে তার দি‌কে ধা‌বিত হ‌তে হয়। আর তখনই দীর্ঘ দি‌নের গ‌ড়ে নিয়‌মের মা‌ঝে নি‌য়ে আস‌তে হয় প‌রিবর্তন। সকল প‌রিবর্তনই বেদনাদায়ক। তাই পৃ‌থিবী‌তে স্থিতিশীলতা বিরাজ করা‌নো বা আনা সম্ভব নয়। পৃ‌থিবী‌তি‌তে স্থিতিশীলতা আনার প্রধান মাধ্যম হল ধ্রুব সত্য যা অপ‌রিবর্তনীয়। যেখা‌নে বিজ্ঞা‌নের সংজ্ঞাই প‌রিবর্তনশীল সেখা‌নে বিজ্ঞা‌নের মা‌ঝে বিশ্ব ব্যবস্থার স্থি‌তিশীলতা চাওয়াটা কী অমাবস্যার রা‌তে চাঁ‌দের আ‌লো খোঁজার ম‌তো অলীক বিষয় নয়!

দ্বিতীয় প্রশ্ন বিজ্ঞান কী আং‌শিক না পূর্ণ এক শব্দ? য‌দি সে পূর্ণ হ‌য়ে থা‌কে তা‌তে কো‌নো কিছুর মিমাংসা নেই কেন? কারণ আং‌শিক যে‌কো‌নো কিছুই মিমাং‌সিত হ‌বে না যতক্ষণ না সে পূণর্তার দি‌কে ধা‌বিত হ‌বে। বাস্তব বিজ্ঞান সাধনার সময়কাল ধ‌রে হিসাব শুরু কর‌লে আমরা দেখব তার শুরুটা ছিল আং‌শি‌কের উপর এখনও তা আং‌শি‌কের উপরই দাঁ‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। যার ঘূর্ণাবতর্বন থে‌কে নি‌জে‌কে মুক্ত কর‌তে পার‌ছে না বিজ্ঞান। যতক্ষণ বিজ্ঞান তার এ অবস্থা থে‌কে নি‌জে‌কে মুক্ত কর‌তে পার‌বে না ততক্ষণ তার কা‌ছে প‌ড়ে থাক‌লে কো‌নো সমাধা‌নেই আস‌তে পার‌বে না।

এখন প্রশ্ন হ‌লো এখা‌নে পূর্ণতা আর অপূর্ণতার প্রশ্ন কেন আসল? প্রশ্নটা একার‌ণে জ‌ড়িত তারা যে বিগ ব্যাঙ্ক থেকে বিশ্ব তৈরীর শুরু ব‌লে ধ‌রে নি‌চ্ছে। তা এক‌টি পূর্ণ বিন্দুর মতই কল্পনা কর‌ছে। ত‌বে তার বি‌স্ফোর‌ণের পর তা বি‌ভিন্ন অং‌শে বিভক্ত হ‌য়ে‌ছে। অর্থাৎ স্থি‌তিশীল অবস্থা থে‌কে অ‌স্থি‌তিশীল হ‌য়ে‌ছে। তাহ‌লে এখন প্রশ্ন হ‌লো আং‌শিক অবস্থা‌তে যে‌কো‌নো কিছুই অ‌স্থিতিশীল থা‌কে কিনা? য‌দি থা‌কে ত‌বে তা‌কে অবশ্যই স্থি‌তিশীলতার দি‌কে ফেরত আস‌তে হ‌লে পূর্ণ হ‌তে হ‌বে। ত‌বে বিজ্ঞা‌নেরই ভে‌বে দেখা উ‌চিত বর্তমান এই অ‌স্থি‌তিশীল বিজ্ঞান‌কে স্থিতিশীল কর‌তে হ‌লে কী করা প্র‌য়োজন?

তৃতীয় প্রশ্ন বিজ্ঞান কী শুধু মনুষ্য সমা‌জের জন্য না সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য? য‌দি শুধু মনুষ্য সমা‌জের হ‌য়ে থা‌কে ত‌বে তার সমগ্র বি‌শ্বের কথা বলা অপ্র‌য়োজনীয়। অপর‌দি‌কে বিশ্ব ব্যবস্থা নি‌য়ে কথা বল‌লে তা‌র মনুষ্য সমাজ নি‌য়ে কথা বলাটার অন্তরায় হ‌য়ে দাঁড়া‌য়। এখা‌নে মূল ব্যাপারটা হ‌লো বিজ্ঞা‌নের এ দু‌য়ের মা‌ঝে একটা সমন্বয় সাধন কর‌তে হ‌বে তা না হ‌লে তা‌কে আজীবন একটা উভয় সংক‌টের ম‌ধ্যে কাটাতে হবে। যা তার সতত্য প্রমা‌ণের অন্তরায় হি‌সে‌বে কাজ কর‌বে।

এখন কথা হ‌লো বিজ্ঞা‌নের বহু শাখা র‌য়ে‌ছে। ভিন্ন ভিন্ন শাখা ভিন্ন কাজ ক‌রে থা‌কে। তার এ‌কেকটা শাখা এ‌কেকটা বিষয়‌কে প্রাধান্য দি‌য়ে থা‌কে। তাই‌তো বললাম সমন্বয় সাধন। কারণ একটা হাত দি‌য়ে কী পূর্ণ মানুষটার কল্পনার সাধন করা যায়? না, পূর্ণ মানুষটার কল্পনা কর‌তে হ‌লে তার সমগ্র দেহটা‌কে কল্পনা কর‌তে হয়। অং‌শে বিভক্ত হ‌য়েও তা‌কে পূর্ণতার দি‌কে ধা‌বিত হ‌তে হয়। ত‌বে প্রকৃত মানুষটা‌কে পাওয়া যায়। বস্তুর বেলায়ও এ কথাও প্র‌যোজ্য যে হাই‌ড্রো‌জে‌নের ই‌লেক্ট্র‌নের কথা আস‌লে স্বয়ং‌ক্রিয়ভা‌বে তার প্রোটন আর নিউট্র‌নের কথা চ‌লে আ‌সে। তাই বিজ্ঞা‌নের উ‌চিত তার বহু শাখার সমন্বয় সাধন করা।

চতুর্থ প্রশ্ন বিজ্ঞান কী শুধু বস্তুর গভী‌রে পৌঁছার জন্য? আধু‌নিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী‌দের কা‌ছে এটাই হয়‌তো সত্য। য‌দি সত্য হয় ত‌বে কেন আপ‌নি আপনার মানবীয় চা‌হিদা পূর‌ণের জন্য জীব‌নের পা‌নে ছু‌টে চ‌লেন? আস‌লে ব্যাপারটা হলো সে নি‌জে‌কে বস্তু বানা‌তে চাই‌লেও জীবন তা‌কে বস্তু সাজ‌তে দেয় না। তাই প্র‌তি‌নিয়ত বস্তুর পেছ‌নে ছুট‌তে গি‌য়েও তা‌কে তার মানবীয় চা‌হিদার পেছ‌নেও ছুট‌তে হয়। তাই তার অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিজ্ঞান শুধু বস্তুর গভী‌রে পৌঁ‌ছে সমস্যার সমাধান ক‌রে ফে‌ল‌বে। ম‌নো‌বিজ্ঞান বিজ্ঞা‌নের শাখা হ‌লেও এর পেছ‌নে লু‌কি‌য়ে আ‌ছে বস্তুবাদ। বস্তুবা‌দের তা‌ত্ত্বিকতা দি‌য়েই তার মাপ‌জোখ সম্পন্ন কর হ‌চ্ছে। তাই ম‌নো‌বিজ্ঞানও বস্তুবা‌দের বা‌হি‌রে বের হ‌তে পার‌ছে না।
আস‌লে এমন আ‌রোও হাজার প্রশ্ন উঠে আ‌ছে বিজ্ঞান নি‌য়ে। প্রশ্ন সারা জীবনই করা যা‌বে শেষ হ‌বে না। বিজ্ঞা‌নের অগ্রগ‌তি মানুষ‌কে আরও ক‌য়েক হাজার বছর এ‌গি‌য়ে নি‌য়ে যা‌বে একজন বিজ্ঞানী য‌দি একই স‌ঙ্গে বস্তু‌বিজ্ঞা‌ন আর মনুষ্য বিজ্ঞা‌নের সমন্বয় সাধন কর‌তে পা‌রে।

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি