যে জাতি যত উন্নত তার সাহিত্যও তত বেশি উন্নত। অতীতের উন্নত জাতিরা আমাদের কাছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সাহিত্য চর্চা মেধা আর মননের সমন্বয়। সাহিত্যের গতিধারা পরিবর্তনশীল হলেও রুচিশীলতার পরিবর্তন হয় তাকে ধারণ করা আর উপস্থাপনার ওপর। জীবনের সাথে সাহিত্যের রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। সাহিত্যের প্রধান খোড়াক বাস্তবতা। যে সাহিত্য বাস্তবতাহীন তা সাহিত্যের নামে অসাহিত্য। বাস্তবতা থেকে মানুষ নিজেকে ধীরে ধীরে স্বপ্ন বিলাসী করে তোলে। তার স্বপ্নের মতো করে গড়ে তুলতে চায় বাস্তবতাকে।
আধুনিক সাহিত্যের প্রধান উপাদান রঙ্গ-তামাসা আর ভোগবাদিতা-বিলাসীতা। অন্যান্য শিল্পাঙ্গনের শিল্পীদের মতো করে সাহিত্যিকরাও আজ নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য মেধা-মননশীলতাকে কাজে লাগাচ্ছে। আধুনিক সভ্য সমাজের মানুষগুলো মনে করে সাহিত্য হল বিনোদনের মাধ্যম। যাতে শুধু রবে তাদের বিনোদন লাভের উপাদানসমূহ। অথচ আমরা ভুলে যায় বিনোদনের মাধ্যমে নিজেকে পূর্ণ করা যায় না। তাই আজকের সাহিত্যিকদের সাহিত্য কিছুদিন বিনোদন দিতে সক্ষম হলেও কালের গর্ভে তা হারিয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যে। তার প্রভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে যায় প্রকৃত সাহিত্য চর্চা।
সাহিত্য হলো সম্পূর্ণ সত্ত্বাগত এক সৃজনশীলতা। যেখানে সাহিত্যিক নিজস্ব ভাবনার আলোকে গড়ে তুলে এক আদর্শ সাহিত্য ভাবনা। সেখানে সাহিত্যের ভাবনার মূল্যের পরিবর্তে গড়ে ওঠছে এক বাজার দর। যেন তা মুদির দোকানের পণ্য। পুজিপতিদের হাত থেকে রেহাই নেই সাহিত্যেরও। সাহিত্যিকদের ধ্যান-ধারণার কারণে আজ সাহিত্যও পুজিবাদীদের পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। তারাও নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে তাদের কাছে। নিজেদের ছেড়ে দিয়েছেন তাদের চিন্তা-চেতনার কাছে। সাহিত্যিকরা তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনাকে বিসর্জন দেয় তবে তা সাহিত্যকে উন্নতির পরিবর্তে অবনতির দিকেই নিয়ে যাবে।
অতীতেও অনেক প্রভাবশালী সাহিত্যিকদের দেখেছি আমরা যারা প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনের জন্য নিজের সাহিত্য সত্ত্বাকে বিলীন করে দিয়েছিল তাদের কাছে। তাদের সাহিত্যের আবেদন ও প্রকাশভঙ্গির মূল লক্ষ্য ছিল নিজেকে দ্রুত সম্মান-প্রভাবশালীর আসনে উন্নীত করা। কিন্তু তারা প্রকৃত সাহিত্য গড়ে তোলার ধারে কাছেও ঘেষতে পারে নি। তাদের শব্দ প্রয়োগছিল সীমিত। ঠিক আজকেও আমরা প্রভাবশালী সাহিত্যিকদের এর ব্যতীক্রম পাই না। তারাও প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। অথচ তাদের চেয়ে আরোও দক্ষ মনোরঞ্জনকারী রয়েছে যার আগমনে সে ছিটকে পড়ে।
প্রকৃত সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম খুব কমই বৃথা যায়। তাদের স্থান দখল করার মতো সাহিত্যিকের সংখ্যাও খুব অল্প। তাদের সাহিত্যকর্ম সমাজকে পুনর্গঠনে সহায়তা করে সমাজকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সাহিত্যের উচ্চাসনে। তারা সর্বদাই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে তা প্রকাশ করে নিজ সাহিত্যে। আর কখনো তা নিজের জীবিকার তাগিদে নয় বরং দায়িত্ব জ্ঞান থেকে চর্চা করে থাকে। প্রসার ঘটায় পথহারা পথিককে পথ দেখানোর জন্য। শত অভাব অনটনও তাদেরকে তাদের সাহিত্য চর্চার আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে নেয় না।
শরীফ উদ্দীন রনি
বার্তা সম্পাদক, দেশ দর্শন
Some text
[sharethis-inline-buttons]