আগামী ৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নাকি দূর্নীতি অনিয়ম এর বিরুদ্ধে অবরোধ ঘোষণা করেছে। উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসনীয়, কিন্তু আমার কিছু কথা বলার আছে এ ব্যাপারে তাদের কাছে।
যে দূর্নীতির বিরুদ্ধে আপনারা আঙ্গুল তুলে শ্লোগান তুলেছেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেই আঙ্গুলগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিজেরা কি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন যে ভবিষ্যতে আপনারা যখন সরকারি চাকরি অথবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসবেন তখন কোন দূর্নীতি অনিয়ম করবেন না? এখন যদি প্রশ্ন উঠে কেন বলছি আপনাদের উদ্দেশ্যে। কারন আপনারাই তাঁরা যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেরা বিদ্যাপীঠ গুলোতে পড়ার সুবাদে সেরা মেধাবী উপাধি পান এবং রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্মানিত জায়গায় চাকরি করেন এবং বিসিএস এ আপনাদের অংশগ্রহণ বেশি থাকে। এই আপনাদের মধ্যে থেকেই এদেশে অধিকাংশ আমলারা আসে। সরকারি চাকরির প্রবনতা আপনাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রছাত্রী দের মধ্যে বেশি থাকে এবং আপনারাই বেশিভাগ এখানে চান্স পান।
আজকে যারা বড় বড় সরকারি আমলা এদের ৮০% এসেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর এরাই হচ্ছে দূর্নীতির সবচেয়ে বড় চক্র এই দেশে, যাদের হাতে জিম্মি পুরো রাষ্ট্র।এইসব বিশিষ্ট দূর্নীতিবাজদের অধিকাংশ একসময় আপনাদের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর সেরা ছাত্র ছাত্রী।হয়তো আপনাদের মতো তাঁরাও ছাত্রজীবনে দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তারপর কর্মময় জীবনে সেই সোচ্চার ভূলে দূর্নীতিকেই বানিয়েছে আসল কর্ম।
আমার কথায় কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত কিন্তু এটাই চরম সত্যি। আপনাদের মাঝে এমন ছাত্রছাত্রী আছে যারা আজ দূর্নীতির বিরুদ্ধে বলছে যে মুখ দিয়ে সেই মুখেই একদিন ঘুষের টাকা চাইতে লজ্জাবোধ করবেনা, যে হাত তুলেছে অনিয়ম এর বিরুদ্ধে সেই হাত টেবিলের তলে বাড়িয়ে ঘুষের টাকা নিতে একটুকুও বিবেকে বাঁধবে না।
আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিউশনি করে অনেক কষ্টে পড়াশুনা করেছে, বাড়ী থেকে টাকা আসাতো দুরের কথা নিজেদেরকেই পাঠাতে হয়েছে খরচ পরিবারের জন্য। তারপর একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করে রাষ্ট্রের বড় পদে চাকরি পেয়েছে।এটা অবশ্যই তার কষ্টের ফলাফল। কিন্তু প্রশ্ন তখন যখন রাষ্ট্রের বড় পদে গিয়ে দুই তিন বছরের মধ্যে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বনে যায়। যাদের বেতন সবোচ্চ হলে ৭৫ হাজার টাকা তাঁরা কি করে কোটি টাকার মালিক বনে যায়!
আমাদের সমাজে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নগুলো করা হয়না। ছেলেমেয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঢাকায় ফ্লাট বাড়ি করেছে, লাখ লাখ টাকা পরিবারের জন্য খরচ করছে,এই গর্বেই বুক ফুলে থাকে বাবা মা, প্রতিবেশী এবং আত্নীয় স্বজনদের। কিন্তু কেউ কি প্রশ্ন করে হাজার টাকা সেলারি পেয়ে, লাখ অথবা কোটি টাকা কোথা থেকে খরচ করে সেই ছেলে অথবা মেয়েটি? করেনা আর সেটাই এদেশে দূর্নীতির সবচেয়ে বড় শক্ত জায়গা।
তাই আজ রাষ্ট্রের দূর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন দাড়াবেন তেমনি নিজেরাও প্রতিজ্ঞা করুন ভবিষ্যতে এই নীতিতেই অটল থাকবেন। কোন দূর্নীতি অনিয়ম করবেন না বা প্রশ্রয় দেবেন না।এতো বড় বড় কথায় কোন কাজে আসবে না যদি এই প্রতিজ্ঞাবোধটা না থাকে।
# জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, মতামত
[sharethis-inline-buttons]