প্রারম্ভিকা: আমার স্বপ্ন ও গবেষণা যেখানে এসে পূর্ণতা খুঁজে তার নাম কাইতলা জমিদার বাড়ি।আন্তর্জাতিক তথ্য ভান্ডার “কাইতলা জমিদার বাড়ি উইকিপিডিয়া”য় আমার লেখা কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস(১৯৯৮ সালে প্রথম প্রকাশিত) শিরোনামের প্রবন্ধটি স্থান দখল করে নেওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সংরক্ষিত হলো ঐতিহাসিক কাইতলা নামক জনপদের ঐতিহ্য গাথা।
কোন গ্রামে জন্মগ্রহন না করেও তাকে নিজ গ্রামের মত ভালবাসা যায়,আমার নিকট তেমনি একটি গ্রাম কাইতলা।শিশুকাল,শৈশব এবং কৈশোরকালের এমন একটি দিন নেই কাইতলাকে নিজ চোঁখে দেখিনি। আমার জন্ম শৈশবের স্রোতম্বিনী-মাছে ভরা অদের খালের তীরবর্তী বল্লভপুর নামক সূর্যদীঘল গ্রামে।যেখানে সুফি সাধক ও মুবাল্লিক শায়খুল বাঙাল ছৈয়দ আবু মাছাকিন গোলাম মতিউর রহমান(রঃ) দুদু মিয়া পীর সাহেব সহ বহু গুণী মানুষের জন্ম হয়েছে।বর্ষাকাল জুড়ে হাজারো পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহের তালিকায় “আনন্দ ভুবন” খ্যাত বল্লভপুর-শিমরাইল ব্রিজের দু’পাশ। আজকের পিচঢালা মহেশ রোড যখন একটি সরু আইল ছিল,কাইতলা গ্রামের ভিতরে যখন একটি ব্রীজ,কালভার্টও ছিল না,বর্ষাকালে গ্রামটিকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সমষ্টি মনে হত সেই সময়টি দেখারও সৌভাগ্য হয়েছে।এখানকার স্কুল কলেজের শিক্ষাই আমাকে দিয়েছে অভিযোজন ক্ষমতা।
শিখিয়েছে শালিনতা,মনুষ্যত্বের মানবিকতা।দেশ বিদেশের যেখানেই থাকি কাইতলার অজস্র স্মৃতি বুকে ধারন করে লালন করে চলেছি অবিরত।মেহারী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নামকরণের ইতিকথা’র কয়েকটি পর্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে আমার সুপরিচিত জনদের মধ্যে কিছু গুণী মানুষ আমাকে কাইতলা গ্রামের নামকরণের ইতিকথা লেখার প্রস্তাব দেন।আমি সাদরে এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহন করলাম।কারণ,আমার জানা আছে সুখ মনি চৌধুরাণী দেবীর আন্দর মহলের সব নাড়ীনক্ষত্র।দেখা আছে কাইতলার যত অলিগলি,আড়া আর পুকুর ডুবা।কোন গবেষণাই সম্পূর্ণ নয়।কোন গবেষণাই অসম্পূর্ণ নয়।একটি সফল মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করতে নয় মাস সময় লেগেছে।কাইতলা গ্রামের ইতিবৃত্ত লিখতে আমারও লেগেছে নয় মাস।দীর্ঘ নয় মাস ধরে কাইতলা গ্রামের ইতিবৃত্ত লিখতে যাঁরা বিভিন্ন তথ্য তত্ত্ব ও পরামর্শ দিয়ে লেখাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। এ লম্বা জার্নিতে যাঁরা এই লেখাটি সম্পূর্ণ করতে অবদান রেখেছেন উনাদের নাম উল্লেখপূর্বক কিছুটা ঋণ শোধ করার আশা করছি।
*সৈয়দ আলহাজ্ব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন
(৭১রে যুদ্ধকালীন কমান্ডার)
*মোঃ আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ
(সভাপতি, কযহস পরিচালনা কমিটি)
*সৈয়দ মোহাম্মদ মহসীন
(অব:জেলা প্রাঃ শিক্ষা অফিসার)
*প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ
(ডীন,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপা. উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়)
*এডভোকেট আক্তার হোসেন সায়্যিদ
(বীর মুক্তিযোদ্ধা)
*শ্রী নারায়ণ চঁন্দ্র সাহা
(অব:মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক)
*মোঃ হাছাল আলী
(অব:প্রধান শিক্ষক,ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সঃ বালক উঃ বিঃ)
*প্রফেসর ডক্টর সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া
(কেমিক্যাল ডিপা.বুয়েট)
*এডভোকেট সৈয়দ খালেদ আশিষ
*মোঃ ইকবাল হোসেন
(ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ পুলিশ)
*ডা:সৈয়দ মোঃ রাহাত (বিসিএস,চিকিৎসা)
*সৈয়দ আলাউদ্দিন (এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর-বিসিএস,শিক্ষা)
*মোঃ গোলাম জাকারিয়া
(সিনিয়র সহকারী সচিব,জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়)
*সৈয়দ মোঃ আজাদ
(জনকল্যাণে মাদার তেরেসা পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব)
*এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া
(বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট)
*প্রভাষিকা পান্না আক্তার
(সরকারী আদর্শ মহাবিদ্যালয়,সৈয়দাবাদ)
*মোঃ ফকরুল ইসলাম লিমন
(প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- মেধাবিকাশ বিদ্যানিকেতন)
*মোঃ তানভীর হোসেন সোহেল
(প্রধান শিক্ষক, কাঃপশ্চিম সঃ প্রাঃ বিঃ)
এখানেই শেষ নয়। আমার জানার বাহিরে আরো বহু তথ্য থাকতে পারে।তাই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আপনার জানা তথ্য প্রদান করে লেখাটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখুন।মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়।লেখক হলেও আমিও একজন মানুষ।আমার সংগৃহিত তথ্য,লেখা ও গবেষণায় ভুল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।সকলের প্রতি সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ আশা করছি।
যেহেতু ঐতিহাসিক কাইতলা গ্রামকে নিয়ে এটিই প্রথম তথ্য ও তত্ত্ব বহুল লেখা সেহেতু এতে দিনদিন আরো তথ্য যুক্ত হয়ে আগামী প্রজন্মকে একটি তথ্যসমৃদ্ধ কাইতলার ইতিবৃত্ত উপহার দিবে বলে আমার বিশ্বাস। পাঠক কুলের সুবিধার্থে কাইতলার ইতিবৃত্ত কে তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করে পনেরটি পরিচ্ছেদ এ সাজিয়েছি।
মহান আল্লাহ আমাদের সকল ভাল কাজে সহায় হউন।
আমিন।সকল পাঠকের সুস্থ ও সুন্দর জীবন কামনা করছি।সেই সাথে দোয়ার দরখাস্ত।
ইতি,
এস এম শাহনূর
(তথ্য সংগ্রাহক,লেখক ও গবেষক)
তাং ২২শে নভেম্বর ২০১৮ ইং।
#প্রথম_অধ্যায়ঃ
★পরিচ্ছেদ-১
———-
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আরেক সাংস্কৃতিক আখড়া নবীনগর উপজেলার কাইতলা গ্রাম।
বহুকাল আগে থেকেই নানাবিধ কারণে কাইতলা গ্রাম টি ছিল এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম হিসাবে বহুল পরিচিত।পূর্ব বাংলা তথা ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদারির ইতিহাস প্রমাণ করে এক সময় ব্রিটিশ শাসনামলে এটি ছিল সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের অধিনস্থ নূরনগর পরগনার একটি পূর্ণাঙ্গ জমিদার বাড়ি।আর বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন এ জমিদারি সাম্রাজ্যের প্রধানতম জমিদার।পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য তিন পুত্র যথাক্রমে
(১) তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী,
(২) অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী,
(৩) ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী
এবং প্রৌপুত্রগণ জমিদারি তদারকি ও পরিচালনা করেন।জানা যায়,পশ্চিম বঙ্গের শিমগাঁও নামক স্থান থেকে তিনি এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং জমিদারি লাভ করেন।নিরীহ রায়তদের প্রতি অবিচারের পাশাপাশি বহু জনহিতকর কাজের জন্য এলাকার সাধারন মানুষ আজও সেই জমিদারদের কথা স্মরণ করেন।যা পরোক্ষভাবে কাইতলা নামক জনপদেরই ঐতিহাসিক বন্দনা।[১]
অন্য এক তথ্য থেকে জানা যায়,আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ এর পূর্ব পুরুষগণের কেউ কেউ কাইতলা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।আর কেউবা বসতি গড়েন সদর উপজেলার মৌড়াই গ্রামে।আরও যে সকল জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ কাইতলা গ্রামকে কালের প্রবাহে আলোকিত করেছেন তাঁদের মধ্যে,
* স্বর্গীয় ডাঃ নিকুঞ্জ বিহারী সাহা (ব্রেইন টনিক নামক মেডিসিন আবিস্কারক)।মূলত,প্রতিদিন প্রায় শতবক্স মেরিট টনিক পার্সেল করার সুবাদেই ডাকবিভাগ কাইতলা পোষ্ট অফিস-৩৪১৭ নামক পোষ্ট কোড প্রদান করেন।
* মরহুম আলহাজ্ব ছৈয়দ আবু আব্বাস (সমাজ সংস্কারক ও বিদ্যোৎসাহী)
* মরহুম এম শামসুজ্জান (শিক্ষাবিদ ও সাবেক প্রধান শিক্ষক কযহস)
* মরহুম হামিদুর রহমান(যিনি ডালিম চেয়ারম্যান নামে আজও স্মরণীয়)
* মরহুম মাহতাব উদ্দিন(সাবেক ইউ.পি ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজ সংস্কারক)
* এডভোকেট আলহাজ্ব সামসুল আলম (প্রতিষ্ঠাতা: আলীম উদ্দিন জোবেদা অনার্স কলেজ;কাইতলা)
* সৈয়দ মোঃ সোলায়মান
অবঃযুগ্ন সচিব।
* ডক্টর সৈয়দ জালাল উদ্দিন আহমেদ
(সাবেক অধ্যক্ষ,জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ)।
* মরহুম আব্দুল খালেক (শিক্ষক ও বহু ভাষাবিদ)।
* মরহুম মহিউদ্দিন(শিক্ষক ও লেখক)
* মরহুম ফুলমিয়া মাষ্টার [মধ্য পাড়া(চির কুমার) তিনি বিনা মাহিনায় ছেলে মেয়েদের পড়াতেন।]
* ডা.জিতেন্দ্র দেব (শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবক)।
* প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আবু আব্দুল্লাহ
(কিং ফয়সাল ইউনিভার্সিটি, সৌদিআরব)
এছাড়াও সমাজ সংস্কার ও পুনর্গঠনে যাঁরা সরাসরি কাজ করেছেন তাঁদের অন্যতম কয়জন হলেন,
* জনাব,আব্দুল মান্নান (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কাইতল দক্ষিণ ইউনিয়ন কমান্ডার)।
* জনাব,আজগর আলী সরদার
* জনাব,আব্দুর রহমান
* জনাব,আব্দুল কাদের
* জনাব,লাল মিয়া সরদার প্রমূখ।
★পরিচ্ছেদ-২
———
গবেষণা ও বিভিন্ন নির্ভরশীল তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়,২০নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ থেকে ৭ পর্যন্ত এই সাতটি ওয়ার্ডের অধিপতি কাইতলা গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে। এতদ্ অঞ্চল এক সময় ছিল(প্রায়)১০ কি.মি.প্রশস্থ অথৈ জলরাশির কালিদাস সায়র। ধারনা করা হয়,আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে ত্রিপুরা(বর্তমান কুমিল্লা) রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে পাহাড় ধ্বংস হয়ে কালিদাস সায়র(বা কালিদহ সাগরের)সৃষ্টি হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় এ সায়রের মাঝখানে জেগে উঠে ছোট ছোট চর।এই চর গুলো এক সময় হয়ে উঠে জেলেদের আশ্রয়স্থল।আর এ চর গুলোর মধ্যে কৈবর্ত নামক জেলে সম্প্রদায় যেখানে প্রথম বসতি স্থাপন করে সেটিই আজকের কাইতলা গ্রাম।জল থেকে জাল,জাল থেকে জেলে।তাহলে কি কৈবর্ত থেকে কৈতলা>কাইতলা শব্দের উৎপত্তি?
উপরোক্ত লিখাটুকু অধ্যয়নে অনেকের মনে এমন ধারনা জন্ম নেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।মূল রহস্য জানতে হলে আপনাকে আরেকটু সময় ও ধৈর্য সহকারে পরবর্তী পরিচ্ছেদ গুলো পাঠ করতে হবে।তার আগে কাইতলা নামক জনপদে প্রথম বসবাসকারী কৈবর্ত সম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই।
কৈবর্ত হিন্দুদের চতুর্বর্ণের অন্তর্ভুক্ত একটি উপবর্ণ। এরা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বৈদিক যুগে ভারতে কৃষিজীবী, পশুপালনকারী, শিকারি প্রভৃতি পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজনও ছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লিখিত ঊনত্রিশটি শূদ্র জাতির মধ্যে কৈবর্ত একটি
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন –
কৈবর্ত অর্থ দাশ, ধীবর। যারা মৎস্য শিকার করে, তারা কৈবর্ত।
(বঙ্গীয় শব্দকোষ, ১ম খন্ড)
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসও তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে প্রায় একই কথা বলেছেন। রাজশেখর বসু চলন্তিকায় বলছেন – ‘কৈবর্ত মানে হিন্দুজাতি বিশেষ। জেলে।’ কাজী আবদুল ওদুদ লিখেছেন – ‘কৈবর্ত : যে জলে বাস করে, জলের সহিত বিশেষ সম্বন্ধযুক্ত হিন্দুজাতি বিশেষ।’ (ব্যবহারিক শব্দকোষ)
আবু ইসহাক সমকালীন বাংলাভাষার অভিধানে বলেছেন – ‘কৈবর্ত অর্থ জেলে, ধীবর, মেছো।’
ভারতকোষে আছে – ‘কে বৃত্তির্যেষাং ইতি কৈবর্ত।’ ‘কে’ শব্দের অর্থ জল। জলে যাদের জীবিকা, তারা কৈবর্ত।
একাদশ-দ্বাদশ শতকে বাংলাদেশে কৈবর্তদের বলা হতো ‘কেবট্ট’।(সদুক্তি কর্ণামৃত নামক কাব্য সংকলন)
কৈবর্ত জাতির উৎপত্তি বিষয়ে ঋষি মনুর ভাষ্য এরকম – ‘নিষাদ নৌকর্মজীবী মার্গব নামক সন্তান উপাদন করে। এদের আর্যাবর্তবাসীগণ কৈবর্ত নামে অভিহিত করেন।’ (দশম অধ্যায়, ৩৪নং শ্লোক)
উৎসঃ সংস্কৃত কেবর্ত + অ
প্রাচীনকাল থেকে ভাটির দেশ খ্যাত বাংলায় অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল থাকায় দেশটি ছিল মাছে ভরা। তাই এ দেশে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল।সৃষ্টি হয়েছিল “মাছে ভাতে বাঙালী”প্রবাদ। বাংলায় পাল আমলে (৭৫০-১১৬০) কৈবর্ত নামে একটি ধনবান ও বিত্তবান উপবর্ণ ছিল। তাদের কেউ রাজা, কেউ বা বণিক ছিল। তারা পরবর্তীকালে একটি শক্তিশালী উপবর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উত্তরবঙ্গে কৈবর্তরা দিব্যকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭১-৭২) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এ বিদ্রোহে জয়ী হয়ে তারা কিছুকালের জন্য একটি কৈবর্তরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে কৈবর্তদের মৎস্যজীবী বলা হয়েছে।বাংলাদেশের সিলেট , ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলের মৎস্যজীবী ধীবর ও জালিকরা কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা মালো, বর্মণ, রাজবংশী, কৈবর্ত গঙ্গাপুত্র,জলপুত্র,জলদাস ও দাস হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে এখন তাদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে পৈতৃক পেশা ত্যাগ করে ব্যবসা ও চাকরী করছে।
কৈবর্তরা বর্ণগতভাবে ব্রাত্য, অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা, রাজনৈতিকভাবে অনুল্লেখ্য এবং সাহিত্যাঙ্গনেও অবহেলিত।জেলেদের নিয়ে পাশ্চাত্যের স্মরণীয় উপন্যাসগুলো হলো – আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ওল্ডম্যান অ্যান্ড দি সি (১৯৫২), ভিলিস লাৎসিসের সান অফ ফিশারম্যান (১৯৩৪), স্টিফেন গুয়ইনের ডাফার লক – অ্যা ফিশারম্যানস্ অ্যাডভেঞ্চার (১৯২৪), নরমান হিলের অ্যা ফিশারম্যানস্ রিফ্লেকশনস্ (১৯৪৪), অলিভার কাইটের অ্যা ফিশারম্যানস্ ডায়েরি (১৯৬৯) প্রভৃতি। এসব উপন্যাসে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাহিনির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মাছশিকারের খুঁটিনাটি বর্ণনা।
অন্যদিকে, বাংলাভাষায় এ-জাতীয় উপন্যাসগুলোর মূল উপজীব্য কৈবর্ত-সমাজজীবন। কৈবর্ত-জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রামের পরিচয় এসব উপন্যাসে স্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যে এ-বিষয়ে যে কয়েকটি স্মরণীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে সেগুলো হলো – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), অমরেন্দ্র ঘোষের চরকাশেম (১৯৪৯), অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৫৬), সমরেশ বসুর গঙ্গা (১৯৫৭), সত্যেন সেনের বিদ্রোহী কৈবর্ত (১৯৬৯), সাধন চট্টোপাধ্যায়ের গহিন গাঙ (১৯৮০), শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমুদ্র বাসর (১৯৮৬), মহাশ্বেতা দেবীর কৈবর্ত খন্ড (১৯৯৪), ঘনশ্যাম চৌধুরীর অবগাহন (২০০০) ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গঙ্গা একটি নদীর নাম (২০০২)।
★পরিচ্ছেদ -৩
———
এক নজরে ঐতিহাসিক কাইতলা-যে গ্রামে রয়েছেঃ
৪ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
১ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (এবং এস এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র)
১ টি অনার্স কলেজ ” আলীম উদ্দিন জোবেদা অনার্স কলেজ”(এবং এইচ এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র),
২ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল,
২ টি এবতেদায়ী/ হাফেজিয়া মাদ্রাসা,
১৮ টি মসজিদ,
৬ টি ঈদগাহ মাঠ,
১ টি খেলার মাঠ,
১ টি সাব পোষ্ট অফিস,
১ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস,
১ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র,
১ টি কৃষি ব্যাংক,
১ টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন,
১ টি হাট/বাজার,
১৯ টি ছোট বড় কবরস্থান,
১ টি শ্মশান,
১ টি কালি মন্দির,
২ টি বড় দীঘি,এবং অসংখ্য পুকুর।
অন্যান্য তথ্যঃ
(১)অধিকাংশ মানুষের পেশা: কৃষি।
(২)আয়তন ১০.৭০ বর্গকিলোমিটার(গোয়ালী সহ)
(৩)লোকসংখ্যা: ২০,৯৭২.
(৪)মোজার সংখ্যা: ৬টি
(৫)উপজেলা থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সিএনজি, মটর সাইকেলের মাধ্যমে।
বর্ষাকালে নৌকা যোগে এখনো কুটি বাজার সহ বরদাখাত পরগনার বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যায়।
(৬)শিক্ষার হার:৭০%
এখনও বাজারে ছোটদের বই পাওয়া যায় প্রকাশকগণ এদের নামকরণ করেন একের ভিতর তিন,একের ভিতর পাঁচ ইত্যাদি ।কাইতলা এমনই একটি গ্রাম যে গ্রামের ভিতর রয়েছে আরো চারটি গ্রাম বা মৌজা।মৌজা বা গ্রাম সমূহের নাম:
১। কাইতলা
২।রামনগর
৩। শংকরপুর
৪। অচিমত্মপুর
৫। হরিপুর।
★সীমানাঃ
পূর্বেঃ কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউপির চারগাছ ও বাহাদুরপুর গ্রাম।
পশ্চিমেঃ বিল ও বুড়িনদী।
উত্তরেঃ মূলগ্রাম ইউপির চন্দ্রপুর ও বিটঘর ইউপির গুড়িগ্রাম।
দক্ষিণেঃ কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউপির জয়পুর গ্রাম।
*গ্রাম ভিত্তিক লোকসংখ্যা: গ্রামের নাম- লোকসংখ্যা কাইতলা : ১০,০০০ রামনগর : ৩০০০ শংকরপুর : ১০০০ অচিমত্মপুর: ৮০০
হরিপুর : ১১৭২
(গোয়ালী : ৫০০০)
★পরিচ্ছেদ -৪
———-
৭১রে মহান মুক্তিযুদ্ধে কাইতলার অবদানঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে গেৱিলাযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে।২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পার্বত্য চট্টগ্ৰামেৱ কালুৱঘাট বেতাৱ কেন্দ্ৰো থেকে ৮ম পূৰ্ব বেঙ্গল ৱেজিমেন্টেৱ উপ প্ৰধান মেজৱ জিয়াউর ৱহমান ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ. হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময় কাইতলা ২নম্বর সেক্টরের অধিনে ছিল।এখানে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সরাসরি কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি।পার্শ্ববর্তী গ্রাম চারগাছ,জমশেপুর ও শিমরাইলে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হলেও প্রচন্ড সতর্কতা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ গায়ে অবস্থানের কারণে পাক মিলিটারি এখানে হামলা করার সাহস পায়নি।তবে জানা যায়,একবার চারগাছ থেকে পাকিবাহিনী গ্রামের পূর্বদিকের প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে ঢুকবার চেষ্টা বিনা রক্তপাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
*সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি:
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর কাইতলায় যারা সাত সদস্যের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন তারা আজ কেউ বেঁচে নেই।
ক্বারী আব্দুস সালাম (প্রেসিডেন্ট)
সৈয়দ এডভোকেট জেন্টু
সৈয়দ আবু নোমান
সৈয়দ তাহেরুজ্জামন সুরুন
এম শামসুজ্জামান
সৈয়দ আবু মাহতাব
মৌলভী মোঃ ইব্রাহীম
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের মত কাইতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারাও কসবা সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করে।আগরতলা কংগ্রেস ভবনে বিশ্রাম/ রাত্রী যাপনের পর তাদের জয়নগর ক্যাম্পে পাঠানো হতো। সেখান থেকে বাঘমারা, পরে চারপাড়া হাইস্কুল ক্যাম্পে। সেখানে প্রায় এক মাস অবস্থান করার পর তাদেরকে গেরিলা হিসেবে রিক্রুট করে ভারতের সেনাবাহিনীর ট্রাকে তুলে পাহাড়ে জঙ্গলের ভেতর উম্পিনগর গেরিলা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হত। প্রায় পঁয়ত্রিশ দিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয় রাইফেল, স্টেনগান, বেটাগান, এসএলআর, এলএমজি, টু-ইঞ্চ মর্টার, জি থ্রি রাইফেল, থার্টি সিক্স হ্যান্ড গ্রেনেড, ডিনামাইট, এন্টি এয়ার ক্রাপ্ট, মলোটে ককটেল, স্মোক বোম, আন আর্মড কম্বাট, বেয়নেট ফাইটিং ইত্যাদির। এসব প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক ছিলেন মেজর শ্যাম বাহাদুর থাপা, ক্যাপ্টেন চৌহান সিং ও রাজেন্দ্র কিশোর, ইন্সপেক্টর কিশোর কুমার।
প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আগরতলার দুই নম্বর সেক্টর মেলাঘর ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ হোসেন ও সহ-অধিনায়ক মেজর হায়দার।মেজর হায়দার কসবা ও আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে নামান। এভাবেই অকুতোভয় এ বীর যোদ্ধারা দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সার্জেন্ট কাজী হাবিবুর রহমান (কাজী ফেরদৌসের ভাই)
তিনি ভারতের চারপাড়া মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং প্রদান করতেন।ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী বক্সার।
সৈয়দ আলী আকবর বাবুল
তিনি কাইতলা গ্রামের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র ট্রেনিং দিতেন।
সৈয়দ জাকির হোসেন কিরণ এর মাধ্যমে বর্তমান সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০ জন তরুন মুক্তিযোদ্ধা কাইতলা গ্রামে রাত্রি যাপন করেন।
*মুক্তিযোদ্ধার তালিকা:
কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির তালিকাঃ
১। সৈয়দ তোফাজ্জল হোসেন। যোদ্ধাহত। যুদ্ধকালীন কমান্ডার।
২। সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। যুদ্ধকালীন কমান্ডার। ৩। মৃত, সৈয়দ জালাল উদ্দীন। যুদ্ধকালীন কমান্ডার। ৪। আবদুল মান্নান যোদ্ধাহত, কাইতল দক্ষিণ ইউনিয়ন কমান্ডার।
৫। আবদুল গণি, যোদ্ধাহত। ৬।মো: রহিজ মিয়া,যোদ্ধাহত। ৭। মৃত আবু নাছির। ৮। মৃত ফিরোজ সরকার। ৯। আকতার হোসেন সাইদ। ১০। আবদুর রাজ্জাক। ১১। মৃত,সৈয়দ ওবাইদুল্লাহ্। ১২। সৈয়দ জাকির। ১৩। সৈয়দ আবু মুছা। ১৪। সুবেদার আবদুর রহিম। ১৫। আবু তাহের । ১৬।সামসুদ্দীন। ১৭। সৈয়দ ইকবাল। ১৮। জহির উদ্দীন। ১৯। জাহাঙ্গীর আলম। ২০। সৈয়দ আবুল কালাম। ২১। আবদুল হান্নান মোল্লা। ২২। আবদুল জলিল। ২৩। আবু হানিফ। ২৪। মোহাম্মদ আলী।
২৫। হাজী ইসমাইল।
২৬। জজ মিয়া।
২৭। আবদুর রউফ।
২৮। আবুল হোসেন।
২৯। আবুল হাসেম
৩০। মিজানুর রহমান।
৩১। আবদুল মান্নান
৩২। নান্নু মিয়া।
৩৩। চাঁন মিয়া
৩৪। আবদুল জলিল
৩৫। মকবুল হোসেন।
৩৬। আবুল হাশেম।
৩৭। শুক্কুর আলী।
৩৮। মোঃ ইসমাইল।
৩৯। আবু জামাল পুলিশ।
৪০। আবুল হাশেম।
৪১। আবদুল জলিল।
৪২। আবদুল লতিফ।
৪৩। মিন্টু মিয়া।
৪৪। রফিকুল ইসলাম।
৪৫। আবুল খায়ের।
৪৬। আবদুল কুদ্দুস।
৪৭। একে.এম.আবদুল কাদের
৪৮। আবদুল্লাহ এলাহী।
৪৯। আবুল কাশেম।
৫০। একে.এম.আবদুল কাদের
৫১। আবদুল কাদির।
৫২।মো: আবু জাহের।
৫৩।নুরুল ইসলাম।
★পরিচ্ছেদ -৫
———-
*সংস্কৃতি ও খেলাধূলাঃ এখানকার লোকজন বিদেশী সংস্কৃতির ধারধারে না।।বহুকাল ধরে এখানে গড়ে উঠেছে নিজস্ব বাঙালী সংস্কৃতির এক শক্ত বলয়।বহু মেধাবী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও লড়াকু খেলোয়াড় এখানে জন্ম গ্রহণ করেন।নূরনগর পরগণায় নাটক,যাত্রাপালা আর নানামুখী অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে এক সময় যাঁরা সাধারন মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন,কাইতলাকে তুলে ধরেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁদের অবদানও কম নয়।এঁদের অন্যতম কয়জন হলেন,
*মোঃ মনো খলিফা
*মোঃ ইদ্রিস মিয়া
*মোঃ গোলাম কিবরিয়া
*মোঃ ফিরোজ মেম্বার
*মোঃ ছিদ্দিক মিয়া
*মোঃ মবত আলী
*মোঃ আবু জাহের মেম্বার
*শ্রী বিধান চন্দ্র রায় বর্ধন
*সৈয়দ মুহাম্মদ আলী
*মোঃ মোজাম্মেল সরকার লিটন
*মোঃ আজহার আলী(ভিপি)
প্রায় সারা বছরই আন্তঃপাড়া,আন্তঃগ্রাম ভিত্তিক ক্রিকেট,ফুুটবল,ব্যাডমিন্টন খেলার আসর বসে এ কাইতলায়।এক সময় কাইতলার যে সকল খেলোয়াড়রা উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন মাঠ কাঁপিয়েছেন তাঁদের অন্যতম কয়জন হলেন,
*মোঃ জাকির হোসেন হান্নান
(অবঃসাব ইন্সপেক্টর অব পুলিশ)
*মোহাম্মদ আলী(অবঃ সেনা সদস্য)
*মোঃ আবু জাহের মেম্বার
*মোঃ গোলাম কিবরিয়া
*এডভোকেট খালেদ আশিস
*সৈয়দ মোঃ মহসীন খোকা
*সৈয়দ শাহারিয়ার নিন্টু ও
তাঁরই সহোদর সৈয়দ পিন্টু
*ঐতিহ্যবাহী উৎসবঃ বাঙালী ও মুসলিম জীবনের সকল উৎসব এখানে মহা সমারোহে পালিত হয়।যুগযুগ ধরে হিন্দু-মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক প্রাচীন জনপদ কাইতলায় প্রতিবছর পহেলা মাঘ বসে ডাক্কা ডুবার মেলা।হয় দূর্গাপূজার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। সপ্তাহ ব্যাপী চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশেষ অনুষ্ঠান শ্রী হরে রাম কৃষ্ণ কীর্তন।
——————————
✪দ্বিতীয় অধ্যায়✪
★পরিচ্ছেদ -১
———-
কাইতলা নামকরণঃ
আজ থেকে প্রায় তিন”শ বছর আগে কাইতলা নামের উদ্ভব,,,,
(ক) আকবর কাই ভূঁইয়া ও
(খ) শমসের কাই ভূঁইয়া দুই ভাই ছিল। তারা সম্ভবত ইরান থেকে এসে এই দেশে বসতি শুরু করে,তাদের অনেক সাহস ও অঢেল সম্পত্তি ছিল।যা এই দেশে এসেই অর্জন করেছিল।তাদের ব্রিটিশ আমলে অঢেল সম্পদ থাকায় ভূঁইয়া বংশে রুপান্তরিত হয়।[#বিস্তারিত_জানতে_তৃতীয়_অধ্যায়_পড়ুন]জমিদারী প্রথার সময়ও জমিদারদের কাছ থেকে তারা খাজনা আদায় করত যা তাদের সাহসী ও বীরত্বের কারণে নেওয়া সম্ভব ছিল। উনাদের নামেই অর্থাৎ আকবর কাই ভূঁঞা ও শমসের কাই ভূঁঞার কাই নামেই কাইতলার
সৃষ্টি।এক সময় তাদের(তল্লাট)তাল্লুক ছিল পূর্বদিকে কাইতলা থেকে বর্তমান চারগাছ পর্যন্ত। উত্তরে কাইতলা থেকে সিনামাছি পর্যন্তও তাদের তাল্লুক ছিল। বাংলা অভিধানে তল্লাট একটি বিশেষ্য পদ ।যার অর্থ: প্রদেশ, অঞ্চল, সীমা।
কাই এর সাথে তল্লাট(তলাট>>তলা)শব্দের অপভ্রংশ তলা যুক্ত হয়ে কাইতলা নাম ধারন করেছে বলে মনে করা হয়।”
প্রদত্ত কাইতলা নামটির অর্থ নতুনত্ব, স্বাধীনতা, দৃঢ়সংকল্প, সাহস, আন্তরিকতা এবং কার্যকলাপকে প্রতিনিধিত্ব করে।
এই নামের পরিচয় বহনকারীগণ প্রায়ই শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, উদ্যমী, সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন, উচ্চাভিলাষী এবং আলোকবর্তিকাময় হয়ে থাকেন।।
নেতৃত্বদানের জন্যই এদের জন্ম।
(The name given by the name of kaitala represents innovation, independence, determination, courage, sincerity and activity.
Identities of this name are often strong personality, enthusiastic, charismatic, ambitious and photographer.
They are born for leadership.)
ঐতিহাসিক কাইতলা গ্রামের প্রাচীন বংশের কুলজি দেখে নিই।
★প্রজন্ম -১
(ক) আকবর কাই ভূঁইয়া [তিনি ছিলেন নিঃসন্তান]
(খ) শমসের কাই ভূঁইয়া
(১.খ) শমসের কাই ভূঁঞার এক ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। তাদের মধ্যে এক মাত্র ছেলের নাম ছিল কালা কাজী ভূঁঞা।
★প্রজন্ম -২
(ক) কালা কাজী ভূঁঞা।
(কালা কাজী ভূঁঞার চার ছেলে পাঁচ কন্যা সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে দুই ছেলে বেঁচে ছিল।ছেলেরা হলেন,)
★প্রজন্ম-৩
(ক) লষ্কর আলী ভূঁঞা ও
(লষ্কর আলী ভূঁঞা এই গ্রাম ছেড়ে প্রথমে সম্ভবত নাছিরনগরে বসতি গড়েন আর মেয়েদের অন্যএ বিবাহ হয়।তাই তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি)
(খ) কলিম ভূঁঞা।
প্রজন্ম-৩.এর (খ) কলিম ভূঁঞার দুই ছেলে ও এক কন্যা ছিল ছেলেরা হলো-
★প্রজন্ম -৪
(ক) ছমোরুদ্দিন ভূঁঞা ও
(খ) মনোরুদ্দিন ভূঁঞা।
প্রজন্ম-৪ এর (ক) ছমোরুদ্দিন ভূঁঞার তিন ছেলে ছয় মেয়ে ছিল তাদের মধ্যে ছেলেরা-
★প্রজন্ম-৫
(ক)আমিন উদ্দিন ভূঁঞা [তিনি নিঃসন্তান ছিলেন]
(খ) অহিজ উদ্দিন ভূঁঞা।
(গ) মেওয়া ভূঁঞা।
প্রজন্ম-৫ এর(খ) অহিজ উদ্দিন ভূঁঞার এক ছেলে হাবিবুর রহমান ভূঁঞা ও চার কন্যা ছিল।
★প্রজন্ম -৬.
(ক) হাবিবুর রহমান ভূইয়া।
(হাবিবুর রহমান ভূইয়ার ৪ ছেলে ১ মেয়ে এদের মধ্যে ছেলেরা।)
★প্রজন্ম -৭
(ক) ইয়ামিন ভূঁঞা।
(খ) ইয়াসিন ভূঁঞা।
(গ) মহসীন ভূঁঞা।
(ঘ) জসীম উদ্দিনভূঁঞা।
———————————-
প্রজন্ম -৫এর(গ) মেওয়া ভূঁঞার এক ছেলে শামসুল হক ভূঁঞা ও চার মেয়ে ছিল।
★প্রজন্ম -৬
(ক) শামসুল হক ভূঁঞা।
(.শামসুল হক ভূঁঞার ৩ ছেলে)
★প্রজন্ম -৭
(ক) আলম ভূঞা
(খ))জামাল উদ্দিন ভূঁঞা ও
(গ)কামাল উদ্দিন ভূঁঞা এখন বেঁচে আছে এবং তাদের সন্তান আছেন।
———————————-
প্রজন্ম -৪এর(খ) মনোরুদ্দিন ভূঁঞার দুই ছেলে এবং তিন কন্যা ছিল।ছেলেরা হলো-
★ প্রজন্ম-৫
(ক) আফিল উদ্দিন (পুকু) ভূঁঞা ও
(খ) কফিল উদ্দিন ভূঁঞা।
৫.(ক) আফিল উদ্দিন ভূঁঞার এক ছেলে সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা ও চার কন্যা ছিল।
★প্রজন্ম -৬.
(ক) সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা (তিনি ৭১রে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা)
(তিন ছেলে দুই মেয়ে রেখে মারা যান,ছেলেরা হলো)
★প্রজন্ম -৭
(ক) বাবুল ভূঁঞা,পেশায়- সাংবাদিক।
(খ)সাহাদৎ ভূঁঞা,পেশা-ব্যবসা।
(গ) বিল্লাল ভূঁঞা,আইন ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন।
———————————–
প্রজন্ম -৫ এর (খ)কফিল উদ্দিন ভূঁঞার এক ছেলে ও পাঁচ কন্যা ছিল।
★প্রজন্ম-৬
(ক) মাঈন উদ্দিন ভূঁঞা।
(তিনি ৭১রে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা)
(মাঈন উদ্দিন ভূঁঞার তিন ছেলে দুই মেয়ে যথাক্রমে)
★প্রজন্ম -৭
(ক) এ্যাডভোকেট মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁঞা।
(বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আছেন।)
(খ) মায়া আক্তার
(গ) মোঃ লিটন ভূঁঞা
(ঘ) রানী আক্তার
(ঙ) মোঃ আইন উদ্দিন ভূঁঞা
(আইন বিভাগে অনার্স শেষ করে ব্রাহ্মণ বাড়ীয়া জজ কোর্টে প্র্যাকটিস এ আছেন।)
তম্মধ্যে আমিন উদ্দিন ভূঁঞা অহিজ উদ্দিন আফিল উদ্দিন ও কফিল উদ্দিন ভূঁঞা গণের আমল পর্যন্ত তাদের তাল্লুক ছিল পূর্বদিকে কাইতলা থেকে বর্তমান চারগাছ পর্যন্ত। উত্তরে কাইতলা থেকে সিনামাছি পর্যন্তও তাদের তাল্লুক ছিল। ভারত ভাগ হওয়ার পর পাকিস্থান ভাগ হওয়ার পর সর্বোপরি বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার পর তাদের সকল জমিদারী সম্পত্তি ক্রমান্বয়ে বিলোপ্ত করেন।
★পরিচ্ছেদ -২
———-
গোষ্ঠী/গোত্র গুলোর নামঃ
ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, “গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।” কাইতলা গ্রামে রয়েছে বেশ কিছু গোষ্ঠী।যারা নিজ নিজ গোত্রের গন্ডির মধ্যে থেকেও অপরাপর গোষ্ঠীর মানুষজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দীর্ঘকাল পাশাপাশি বসবাস করে চলেছে।
*পশ্চিম পাড়া-
১।জমিরউদ্দিন সরকার
২।রেহানউদ্দিন সরকার
৩।ইমামউদ্দিন সরকারকপ
৪।পন্ডিত ফকির বাড়ি
৫।ঝালু সরকার
৬।জমদ্দার বাড়ি
৭।বাদ্যঘর সমাজ
৮।গুনিন সমাজ
৯।হিন্দু সমাজ
*মধ্য পাড়া।
১।মইজুদ্দিন সরকার
২।ছামিরউদ্দিন সরকার
৩।আঃহামিদ মিয়া
৪।কাজীবাড়ি
৫।ফুলমিয়া মাস্টার বাড়ি
৬।মদ্দির বাড়ী(বাহরাবাড়ি)
*পূর্বপাড়া
১।দুলাল বেপারী
২।জরুদ্দি
৩।শরিফের বাড়ি
৪।রশিদ বেপারী
৫।পান্ডু সরকার
৬।ওয়াজউদ্দিন
৭.ভূঁইয়া বাড়ি
৭।সৈয়দ বাড়ি।
★পরিচ্ছেদ -৩
———–
দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
*কাইতলা জমিদার বাড়ি- এক সময় গ্রামের মানুষের আড্ডাস্থল ছিল কাইতলা জমিদার বাড়ির খোলা মাঠ।বিকেলে ছেলে মেয়েদের বৌ চি, গোল্লা ছুট, দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, হা-ডু-ডু,ফুটবল নানান খেলায় মুখরিত হয়ে উঠত জমিদার বাড়ীর উন্মুক্ত অঙন।বিভিন্ন সময় যুবকদের দ্বারা আয়োজিত যাত্রা,জারি-সারি গান হতো,পুতুল নাচ,আসতো সার্কাসপার্টি,বসতো বৈশাখী মেলা।দূরদূরান্ত থেকে পিকনিক পার্টি আসতো।আশে পাশের কারো বাড়ীতে নতুন মেহমান আসলে এ জমিদার বাড়ী না দেখে যেতোনা।এখনো জমিদার বাড়ীর আকর্ষণ কমেনি মানুষের কাছে। পূজা পার্বনে,বিয়ে, আশুরায় এখনো ঢোল সাঁনাইয়ের বাজনায় মুখরিত হয় জমিদার বাড়ীর আকাশ-বাতাস।
*কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় -জমিদার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চৌধুরী গায়ের অক্ষর জ্ঞান শূন্য মানুষের কথা ভেবে নিজ বাবার নামে(পালক পুত্র হয়েও)গ্রামের দক্ষিণে তখনকার সময়ে ১৯১৮ সালের ৫ই জানুয়ারী একটি মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।যা আজ সময়ের প্রয়োজনে মাধ্যমিক স্কুলে পরিনত এবং সে স্কুলটি ১৯৯৭ ইংরেজী সন হতে এস এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলটির পুরো নাম কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়।এটি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ।
*আলিমউদ্দিন জোবেদা অনার্স কলেজ-আলহাজ্ব এডভোকেট সামসুল আলম জেন্টু কর্তৃক ১৯৭২ সালে কলেজটি নিজ পিতা-মাতার নামকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়।এই কলেজে একটি মনোরম ত্রিতল ভবন, একটি টিনসেট ঘর, একটি আধাপাকা ঘর, একটি টিনসেট ছোটঘর,একটি,একতলা পাকা ভবন, একটি সানবাধাঁনো পুকুর ঘাট ও নামাজের জন্য একটি মসজিদ রয়েছে।
*সুখ সাগর—জমিদার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চৌধুরী গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সুবিধার্থে (পালক) মাতা সুখ মনি রায় চৌধুরানী ওরফে সুখ দেবীর (যঁজ্ঞেশ্বর রায়ের স্ত্রী )স্মৃতিকে প্রানবন্ত করে রাখার উদ্দেশ্যে গ্রামের উওর পশ্চিমে প্রায় ১০একর আয়তন বিশিষ্ট একটি দীঘি খনন করে মায়ের নামানুসারে তার নাম রাখেন”সুখ সাগর”।
*আবদুস সাত্তার ইম্ফু শাহ্(রঃ) এর মাজার শরীফ–কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ডে এই মাজারটি অবস্থিত।জানা যায়,শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্ম ক্ষেএে আগমন করেন।পরবর্তীতে তিনি মসজিদের হেদমতে ছিলেন।জীবনের শেষ পর্যায়ে আল্লাহর ওলী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। অনেক বক্ত বৃন্দ রেখে তিনি পরলোক গমন করেন। প্রতি বছর পৌষ মাসের ২৯ তারিখে মহাসমারোহে বাৎসরিক ওরশ হয়।
ওনার আসল নাম মৌলানা আব্দুস সাওার।
জন্ম ১৩২৫ বাংলা, ইন্তেকাল১৪০০বাংলা ২৯শে পৌষ।তিনি মুখে সদা সর্বদায় ইম্ফা উচ্চারণে জিকির করতেন বলে লোকমুখে তিনি ইম্ফু শাহ্ নামে পরিচিতি লাভ করেন।বাংলা ইম্ফা বা ইম্ফু নামের আরবি উচ্চারণ করলে নামটি হয় আমফাহ।আমফাহ নামটি লিখতে পাচটি অক্ষরের প্রয়োজন হয় যথা-
১.আলিফ
২.মীম
৩.ফা
৪.আইন
৫.হা।
যার ভাবার্থ হল:
১.আলিফে – আল্লাহ জাল্লা শানুহু তায়ালা
২.মীমে-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
৩.ফা’তে-হযরত ফাতেমা(রা:)
৪.আইন এ-হযরত আলী (রা:)
৫.হা’তে -হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন (রা:)।
এই হল হযরত ইম্ফুশাহ (র:)এর ইম্ফা/আমফাহ নামের অর্থ ও ব্যাখা।
পেশা :বিভিন্ন নির্ভরশীল সূত্র থেকে জানা যায়,তিনি প্রথম জীবনে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ,তারপর বেশ কিছুদিন নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন,অত:পর শিক্ষকতা পেশা হিসেবে গ্রহন করেন।সবিশেষে ইমামতিতে যোগদান করেন যা জীবনের শেষ কর্ম প্রাধান্য পায়।কর্মজীবনের সব তিনি শালদানদীর নয়নপুর গ্রামেই করেছেন।
*শংকরপুর মঠ -এটি কাইতলা গ্রামের পশ্চিমে মহেশ রোড থেকে ৬শ গজ পশ্চিমে এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত পরিবেশে অবস্থিত।এটি মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য নির্ধারিত শ্মশান এলাকার একটি দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ মঠ।ধারনা করা হয় কাইতলার জমিদারদের শাসনামলে পূজা আর্চণার জন্য এখানে একটি সুদৃশ্য ও দৃষ্টিনন্দন মঠ এবং একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়।কালের পরিক্রমায় সেই জমিদারদের জমিদারি নেই কিন্তু আজও সেই সুউচ্চ মঠ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের জীর্ণশীর্ণ ইমারত চোঁখে। পড়ে।যা মনের অজান্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে অতীত স্মৃতিলোকে।
*আলীমউদ্দিন পেশকার বাড়ি–এটি কাইতলা গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যোৎসাহী পরিবারের পুরাতন পাকা বসত বাড়ি।এক সময় অনেক জমিজমার মালিক ছিলেন এই বাড়ির নির্মাতা মরহুম আলীমউদ্দিন।উনার সুখ্যাতির কারণেই এলাকার লোকজনের নিকট এ বাড়ি আলীমউদ্দিন পেশকার বাড়ি নামে স্বীকৃতি পায়।উনার সুযোগ্য তিন পুত্র সন্তান মিয়া আব্দুল হান্নান(এ জেড কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল),ডা.কামরুল হুদা ও এডভোকেট সামসুল আলম(জেন্টু)পিতা মাতার নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নিজ গ্রামে আলীমউদ্দিন জোবেদা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।যা আজ সময়ের প্রয়োজনে ডিগ্রী ও অনার্স কলেজে উন্নীত হয়েছে।
*আন্ধা পুকুর–বাস্তবদৃশ্য দেখলে মনে হবে এটি কোন চারণ ভূমি।আসলে এটি শত বছরের কচুরিপানা আর নলখাগড়ায় ঢাকা পরা একটি পুকুর।এলাকার মানুষ যাকে আন্ধা পুকুর নামে জানে।সাহস থাকলে আপনি পুকুরের পানির উপর চটবাধা বিছানার উপর দিয়ে চলে যেতে পারবেন এ পাড় থেকে ও পাড়ে।কিন্তু সাবধান!!যদি সত্যিই অদ্ভুত কোন কিছু আপনার পা খামচে ধরে তবে সলিল সমাধী হতে পারে ওখানেই……..
কাইতলা জমিদার বাড়ীর আন্ধাপুকুর সম্পর্কিত অনেক কিংবদন্তি ও গল্পগাঁথা অাজো মানুষের মুখ থেকে মুখে মুখরিত। শুনা যায় তাদের সব মূল্যবান স্বর্ণালকার ও হীরা জহরত নাকী কলসিতে ভরে আন্ধাপুকুরে ডুবিয়ে রাখত।ঐ কলসি গুলো নাকি অাবার মাঝে মধ্যে পুকুরে ভেসে উঠত।ভরদুপুরে পুকুরে নাকি সিন্দুক ভেসে উঠত।রাত্রিকালে এ পুকুর থেকে ঐ পুকুরে যাওয়া অাসা করতো স্বর্ণ,রূপা হীরা জহরত ভর্তি তামার পাতিল।অারো অনেক মুখরোচক কল্লকাহিনীতে অাবর্তিত কাইতলা জমিদার বাড়ী রহস্য।তবে এখনো ভয়ে কেহ নামতে চায়না সেই অান্ধা পুকুরে।ঘুটঘুটে কালো পানির পুকুরটি অাজও বিদ্যমান।সত্যি কথা বলতে কি এখনও সেখানে গেলে গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠে। ”
*হাছান আলী শাহ (রঃ) র মাজার —
★পরিচ্ছেদ – ৪
————
কাইতলা ইউনিয়নের ভাঙা গড়ার ইতিহাসঃ
আমাদের দেশের ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান বয়স ৪৪ বছর। এই ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ১৮৭০ সালে চৌকিদারি পঞ্চায়েত নামে। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে তৎকালিন ব্রিটিশ শাসক লর্ড রিপন স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন আইন চালুর মাধ্যমে এর নামকরণ করেন ইউনিয়ন কমিটি ।১৯১৯ সালে বঙ্গীয় পল্লী স্বায়ত্বশাসন আইনের অধীনে চৌকিদারী পঞ্চায়েত এবং ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। পাকিস্তান আমলে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ, ১৯৫৯ এর অধীন ইউনিয়ন বোর্ডের নামকরণ করা হয় ইউনিয়ন কাউন্সিল। ইউনিয়ন কাউন্সিল এর কার্যকাল ছিল ৫ বছর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং- ৭ জারি করার মাধ্যমে মৌলিক গনতন্ত্রের সব কয়টি সংস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ইউনিয়ন কাউন্সিল নাম পরিবর্তন করে এর নাম রাখা হয় “ইউনিয়ন পঞ্চায়েত” ১৯৭৩ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ২২ জারি করেন এবং এ আদেশে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নাম পরিবর্তন করে এর নাম দেয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদ।
প্রাচীন কিছু নিদর্শন,উপরোক্ত ইতিহাস এবং নিম্নোক্ত ইউনিয়ন কাউন্সিল/পরিষদের প্রেসিডেন্ট /চেয়ারম্যান বৃন্দের সময়কাল পর্যালোচনা করে দেখা যায় কাইতলা ইউনিয়নের ইতিহাস ঐতিহ্য বেশ পুরনো।শ্রীযুক্ত বাবু চন্দ্রমাধব কবিরাজ – কাইতলা (মধ্য পাড়া) ইউনিয়ন কাউন্সিল এর প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
*অখন্ড ৮নং কাইতলা ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট/চেয়ারম্যান মহোদয়গণের নামের তালিকা:
১. শ্রীযুক্ত বাবু চন্দ্রমাধব কবিরাজ কাইতলা (মধ্য পাড়া) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
২. জনাব জমির উদ্দিন সরকার কাইতলা(পশ্চিমপাড়া) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
৩. জনাব ওয়ালি আহম্মেদ চৌধুরী গোয়ালি (সাহেববাড়ী) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
৪. জনাব নায়েব আলী মাষ্টার নোয়াগাঁও (ছগৈরা বাড়ী) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
৫. জনাব আয়েত আলী মাষ্টার নোয়াগাঁও (মাষ্টর বাড়ী) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
৬. জনবা কাজী লিয়াকত হোসেন ব্রাহ্মণহাতা (কাজীবাড়ী) চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ
৭. জনাব আব্দুল বারিক (বারেক ডাঃ) কোনাউর (উত্তরপাড়া) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল
৮. হামিদুল হক ডালিম কাইতলা (পশ্চিমপাড়া) চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ
৯. জনবা কাজী লিয়াকত হোসেন (২য় বার) ব্রাহ্মণহাতা (কাজীবাড়ী) চেয়ারম্যানইউনিয়নপরিষদ
১০. জনাব এম, এ ওয়াছেক কোনাউর (বাজারের পূর্ব পার্শে) চেয়ারম্যান, ইউনিয়নপরিষদ
১১. জনাব নাসির উদ্দিন সরকার, গোয়ালী (সরকার বাড়ী) চেয়ারম্যান, ইউনিয়নপরিষদ
১২. জনাব মাহতাব মিয়া কাইতলা (পশ্চিমপাড়া) চেয়াম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ।
১৩. সৈয়দ আব্দুল হান্নান কাইতলা (সৈয়দপাড়া) চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ।
১৪. জনাব আব্দুল ওয়াহাব (অহিদ) নোয়াগাঁও(মুন্সিবাড়ী) চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ ১৫. জনাব আব্দুল মান্নান (কাঞ্চন), নোয়াগাঁও (জমিরের বাড়ী), চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ।
১৬. জনাব আব্দুল মান্নান, কাইতলা(পশ্চিমপাড়া), চেয়ারম্যান, ইউনিয়নপরিষদ।
১৭. জনাব জয়নাল আবেদীন নারুই (জমদ্দার বাড়ী) চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত), ইউনিয়ন
১৮. জনাব মোঃ সহিদুল ইসলাম নারুই (মোল্লাবাড়ী) চেয়ারম্যান, ইউনিয়নপরিষদ
১৯. জনাব মো:সোহরাওয়ার্দী চৌধুরী নোয়াগাঁও পশ্চিম পাড়া চেযারম্যান বাড়ি জনাব জমির উদ্দিন সরকার কাইতলা(পশ্চিমপাড়া) প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিল।
২০. জনাব আব্দুল মান্নান, কাইতলা(পশ্চিমপাড়া), চেয়ারম্যান, ইউনিয়নপরিষদ।
২১. জনাব মোঃ শওকত আলী,কাইতলা(পূর্বপাড়া),চেয়ারম্যান, কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ।
কাইতলা নামটি যুগে যুগে নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অদূরবর্তী এলাকার মানুষজনেরও প্রতিনিধিত্ব করেছে। নবীনগর উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণ কর্ণারে বার আউলিয়ার পুণ্য ভূমি, শাখা তিতাস নদী বিধৌত এলাকার পশ্চিম তীরে গড়ে উঠা “৮ নং কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ” আজও কাইতলা নামের ঐতিহ্য বুকে ধারন করে চলেছে। অথচ এক সময় ৮নং কাইতলা উত্তর ইউনিয়নটি অখন্ড কাইতলা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অখন্ড কাইতলা ইউনিয়ন পরিষদ নিম্নোক্ত ৭টি গ্রামের সমন্বয়য়ে গঠিত হয়েছিল।
১। কাইতলা (রামনগর,শংকরপুর,
অচিমত্মপুর,হরিপুর)।
২।গোয়ালী
৩। ব্রাহ্মণহাতা,
৪।কোনাউর,
৫।নারুই,
৬।নোয়াগাঁও ও
৭।শিবনগর।
পরবর্তীকালে সময়ের প্রয়োজন ও ইউনিয়ন পরিষদের বিশাল আয়তন বিবেচনায় কাইতলা নামটি ঠিক রেখে
কাইতলা,রামনগর,শংকরপুর,অচিমত্মপুর,হরিপুর,গোয়ালী এই ৬ টি গ্রামের সমন্বয়ে কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ এবং ব্রাহ্মণহাতা, কোনাউর, নারুই, নোয়াগাঁও ও শিবনগর এই ৫টি গ্রাম নিয়ে উত্তর কাইতলা ইউনিয়নটি গঠিত হয়। উত্তর কাইতলা ইউনিয়ন মূলত বিখ্যাত নোয়াগাঁও মুন্সী বাড়ীর জন্য।
*অখন্ড কাইতলা ইউনিয়ন বিভক্তি প্রক্রিয়ার পদযাত্রাঃ-
অখন্ড কাইতলা ইউনিয়ন পরিষদের জনাব মোঃ মাজিদুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব মোঃ মদন মিয়া, জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম, জনাবা সৈয়দা নাজমুন্নাহার এর মাননীয় মন্ত্রী- স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বরাবর ২২/০২/০৯ইং তারিখে দাখিলকৃত আবেদন পত্রের উপর ভিত্তি করেই অখন্ড কাইতলা ইউনিয়ন বিভক্তি তথা ০৮নং কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন সৃষ্টির ১ম দরজা খুলে যায়।এর পর যথাযথ সরকারী বিধি মালা ও নিয়ম পদ্ধতি মেনে কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন সৃষ্টির চুড়ান্ত পর্যায় চলে আসে।অবিভক্ত ০৮নং কাইতলা ইউনিয়ন দুই ভাগ হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (স্থানীয় সরকার শাখা) কর্তৃক স্মারক নং-স্থাঃ সঃ ১৬ (গঠন) ১১/০৯-৩৬৫ (৭) তাং- ৩১/০৮/০৯ইং প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুসারে ১৭/০৭/ ২০১১ইং তারিখ ২০ নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল মান্নান সাহেবের নিকট দায়িত্বভার হস্তান্তরের মাধ্যমে ০৮ নং কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের জন্ম ও যাত্রা শুরু হয়।
(০৫/০৬/২০১১ইং তারিখে ২০ নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নে নির্বাচন হয়, কিন্তু নব গঠিত ০৮নং কাইতলা উত্তর ইউনিয়নে সীমানা সংক্রান্ত মামলা থাকায় নির্বাচন হয় নাই।পরবর্তীতে ২৬ জুন ২০১২ সালে প্রথম কাইতলা উত্তর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। )।
★পরিচ্ছেদ -৫
————
*ক্রীড়া সংগঠন
(১)অনির্বান ক্রীড়া সংগঠন।
(২)ফুলকলি ক্রীড়া সংগঠন।
(৩)সৈয়দ পাড়া মোহাম্মদিয়া সংগঠন।
(৪)পূর্ব পাড়া সমাজ কল্যাণ ও একতা সংগঠন।
(৫)পূর্ব পাড়া ইসলামি যুব সংগঠন।
*সাংস্কৃতিক সংগঠন:
সাংস্কৃতিক সংগঠন:-৪ টি।
(১)মেধা বিকাশ সংগঠন।
২)অগ্নিবীনা সংগঠন।
(৩)জয়যাএা সংগঠন।
(৪)স্টুডেন্টস ফোরাম।
*পেশাজীবি সংগঠন
(১)মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন।
(২সংগঠন।
*এনজিও
১। আশা২। গ্রামীণ ব্যাংক৩। সিসিডিএ৪। পপি ইবেসরকারী সংস্থা গুলো কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের জনগনকে আর্থিক ভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্র ঋণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে।
*বীমা
১। ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোঃ লিঃ
২। পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোঃ লিঃ
৪। আল আরাফাহ ইসলামী ইন্সুরেন্স কো অপারেটিভ লি:
৫। আল বারাকা লাইফ ইন্সরেন্স লিঃ
৬। ইসলামী ব্যাংক ইন্সুরেন্স শাখা ।
৭। প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স লিঃ
৮।জীবন বীমা কর্পোরেশন ।
৯। বায়রা লাইফ ইন্সুরেন্স লিঃ
১০।আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স লিঃ
১১। পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিঃ
এ সকল বীমা প্রতিষ্ঠান সমূহ কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নে তাদের শাখা অফিস, এজেন্ট এবং বুথ দ্বারা তাদের সেবা প্রদান করে চলেছে।
✪তৃতীয় অধ্যায়✪
পরিচ্ছেদ – ১
———–
কোথা থেকে এলো কাই বংশ পদবী?
*বাংলা অভিধানে কাই বিশেষ্য পদ।
যার অর্থ দাড়ায় – আঠা, লেই; ঘন মাড়। [সং. ক্বাথ]।
*Halkai নাম থেকে Kai শব্দ /উপাধি বা পদবী এসেছে যার অর্থ a place of sanctory.
*Old High German “kamph” থেকেও Kai শব্দের ব্যুৎপত্তি হয়। যার আভিধানিক অর্থ “fight” এটি এমনই এক শক্তিশালী নাম অথবা কোন গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা জাতির পদবী যারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কখনো পলায়ন করতে শেখেনি।
*It originated in Northern Europe and means “Warrior” or “Fighter”. Someone that never gives up
*সম্ভবত Etruscan word “cai”থেকে Caius এর উৎপত্তি।যার অর্থ দাঁড়ায় “glad”.
*হাওয়াইয়ানে, কাই একটি ইউনিসেক্স নাম যার অর্থ “সমুদ্র”।
*বাস্কে, কাই একটি সাধারণ শব্দ যার অর্থ “একটি আশ্রয়ের পাঁজর” এবং প্রথম নাম কাইওর একটি রূপান্তর (পুরানো ল্যাটিন নাম কাইয়াস থেকে, যার অর্থ “খুশি”)।
In Basque, kai is a common word meaning “pier of a harbour” and a variant of the first name Kaio (from the old Latin name Caius, meaning “happy”).
*চীনা ভাষায়, কাই বেশ কয়েকটি অর্থের সাথে একটি খুব সাধারণ দেওয়া নাম, সাধারণত “বিজয়” “শুরু করুন” বা “খোলা”।
In Chinese, Kai is a very common given name with one of several meanings, most commonly “victory” (凯/凱), “start” or “open” (开/開).
*ফরাসী ভাষায়, কাই ফরাসী “কাইম্বে” এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ “যোদ্ধা”।
কনো ও কিসী, কাই একটি পুরুষ নাম; এটি একটি Paramount চিফ শিরোনাম বা উপসর্গ যার অর্থ রাজাদের রাজা।
In Frisian , Kai is a short form of Frisian “Kaimbe”, meaning “warrior.”
In Kono and Kissi, Kai is a male name;it is also a Paramount Chief title or prefix that means king of kings.
*জাপানী ভাষায়, কাইতে “ক্ষমা” “সমুদ্র” “শেল” “পরিবর্তন” “পুনরুদ্ধার” এবং “পুনরুদ্ধার” সহ বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে। [1]
[2] উপাধি হিসাবে,এর অর্থ “মূল্যবান”
In Japanese , Kai has a number of meanings, including “Forgive”, “ocean”, “shell”, change”, “restoration” and “recovery”.[1]
As a surname, it means “Worth”.[2]
*In Welsh Mythology Kay was one of the knights of the Round Table in Arthurian Legend.
*German ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ Sea.
*Danish ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ Earth (like the Greek ‘gaia’)
*Scottish ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ
Fire.
*অন্যান্য সংস্কৃতিতে বিশেষত Native American ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ Willow Tree, Stone, and Friend (depending on the tribe)
*Navajo Indian ভাষাভাষিদের নিকট এর
“Willow tree”
*Northern Germany তে Kai বলতে Nikolaus অথবা Katharina এ দুটো Nickname ও প্রচলিত আছে।
*Scandinavian এবং Welsh এর ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ
Keeper of the Keys,
*Hawaiian ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ
“Ocean” or “Sea”
*Greek ভাষাভাষিদের নিকট Kai অর্থ chicken/food (in Greek).আবার Kaia এর অর্থ “Earth”
*Norwegian ভাষাভাষিদের নিকট Kaia এর অর্থ “Blessed, Pure, Holy”
*South African ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ
“Beautiful”
* Persian ভাষাভাষিদের নিকট এর অর্থ
“Ruler” or “King”
*New Zealand এর
Maori নামক native polynesian জনগণের নিকট এর অর্থ “Food” (hmm, yummy!)
তথ্যসূত্রঃ
1. ^ “English<>Japanese” .Dictionary .Retrieved 2012-01-13.
2. ^ “Official list of Kanji permissible for name use” .
অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস অনুযায়ী কায়া(কাই)আল্প ছিলেন কায়ি গোষ্ঠীর প্রথম প্রধান নেতা।(তার পিতার নাম ছিল কিজিল বুগার)এবং সুলেইমান শাহ এর পিতা যিনি অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতা আর্তুগ্রুলের পিতামহ ছিলেন।[১]
ইতিহাস থেকে জানা যায়, অটোমান সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশী দিন টিকে থাকা সাম্রাজ্য।উসমানীয়া সাম্রাজ্য প্রায় ৬৩২ বছর ধরে টিকে ছিল।ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল অটোমান সাম্রাজ্য। সমগ্র পশ্চিম আফ্রিকা, গ্রীস, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, রাশিয়ার কিছু অংশ এবং মিশর-মধ্য পাচ্য — সবটাই ছিল তাদের সাম্রাজ্যের অংশ।
কিন্তু এত বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করল কিভাবে? অটোমান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন শুরু তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজী ই মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর করে যান।আরতুগ্রুল আনুমানিক ১১৯১-১১৯৮ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে আহালাত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন কায়ি গোত্রের দলপতি। কায়ি একটি অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত যাযাবর জাতি। ১১শত শতাব্দীতে কায়ি শব্দটি সর্বপ্রথম তুর্কি পণ্ডিত মাহমুদ আল কাশগারি প্রথম বলেন। কায়ি শব্দের অর্থ সম্পর্কের দ্বারা যার ক্ষমতা আছে।
মধ্য এশিয়ার স্তেপ তৃণভূমি অঞ্চলের তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষই ছিল মূলত তুর্কোমেন উপজাতির লোক । এদের মধ্যে যারা বিস্তীর্ণ তৃণভূমি অঞ্চলের পশ্চিম অঞ্চলে বাস করত তাদের বলা হত অঘুজ উপজাতি, যারা কিনা ছিল মোঙ্গলদের একটি শাখা। এদের বলা হত অঘুজ টার্ক বা অঘুজ তুর্কি- ধারাবিবরণী রক্ষকদের লেখায় এদেরই আবার অন্য নাম ছিল তুর্কমেন। এরা এশিয়ার বৃহত্তম লবণাক্ত জলের হ্রদ কাস্পিয়ান সাগরের পূর্বতীরে গড়ে তুলেছিল এদের বাসস্থান তুর্কমেনিস্তান। হ্রদের পশ্চিমদিকে বাস করে এদেরই আরেক গোষ্ঠী তুর্কিরা, যাদের বাসভূমির নাম তুরস্ক। প্রায় বারোশো বছর আগে থেকে কিছু অঘুজ উপজাতির পশুচারক কিছু যাযাবর মানুষ মঙ্গোলিয়ার পশ্চিম অঞ্চল থেকে অর্থাৎ মধ্য এশিয়ার উরাল-আলতাই অঞ্চল ছেড়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসে এই অঞ্চলে।নতুন বাসভূমিতে এসে এরা ‘সেলজুক সাম্রাজ্যের’ অধীনে বাস করেছিল। সেলজুক সাম্রাজ্য ছিল বর্তমান ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের পুরনো বাসিন্দা অঘুজ তুর্কিদেরই সাম্রাজ্য।
সপ্তম হিজরীর শুরুর দিকে মঙ্গোলদের খোরাসান আক্রমণের ফলে সেখানকার অধিবাসীরা তুর্কমেনিস্তানের মার্ভ অঞ্চলে এসে বসবসা করতে শুরু করে। এই গোত্রের নামই ছিল কায়ি বা কাই।এই গোত্রের লোকেরা ছিল নিষ্ঠাবান মুসলমান। প্রথম থেকেই এরা খুব ধার্মিক, সাহসী এবং ইসলামিক ছিল।এই কায়ি গোত্রটি পরে শক্তিশালী রোমান সামরাজ্যকে পরাজিত করে এবং রোমের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলকে অটোমান সামরাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করে।
আর্তুগ্রুল গাজী ছিলেন মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত এক যোদ্ধা। তিনি এশিয়া মাইনর দিয়ে আনাতোলিয়া তে আসেন। তিনি যখন আনাতোলিয়া তে আসেন তখন এই অঞ্চল বিভক্ত ছিল,এক অংশ দীর্ঘদিন যাবত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। অপর অংশে আধুনিক তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে সেলজুক সাম্রাজ্য ছিল। সেলজুক সাম্রাজ্যের তুর্কমান বা তুর্কি বংশোদ্ভূত সুলতান আলাউদ্দিন কে আর্তুগ্রুল এক যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তার সাম্রাজ্যের একটি অংশের শাসনকর্তা বানিয়ে দেন। আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর এবং সেলজুক সাম্রাজ্য দিন দিন দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে আনাতোলিয়া বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আর্তুগ্রুল গাজীর ছেলে প্রথম উসমান তার শাসনাধীন অঞ্চল কে বৃদ্ধি করে ১২৯৯ সালে নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ই ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতান।
➤তথ্যসূত্রঃ
1. ↑ Necati Demir (২০১৬)। Oğuz Kağan Destanı (Turkish ভাষায়)। Ötüken Neşriyat A.Ş.। আইএসবিএন 9786051554464 ।
★পরিচ্ছেদ – ২
————-
সংস্কৃত ভৌমিক শব্দ হতে ভূঁইয়া শব্দের উৎপত্তি।এই বংশ পদবীটি এসেছে খোদ ভূমির মালিকানা অর্থ থেকে।যার অর্থ জমির মালিক। অবশ্য আগেও প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে ভূঁইয়াদের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন: মানিকরামের ধর্মমংগল ও মুকুন্দরামের চন্ডীমংগলে।
পূর্বে হিন্দু রাজারা সম্রাজ্যের ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য তিন শ্রেণীর অধীনস্ত শাসক নিয়োগ করতেন। এরা হলেন বড় ভূঁইয়া, মধ্য ভূঁইয়া ও ছোট ভূঁইয়া।বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এ পদবীর প্রচলন আছে।বাঙালি হিন্দু সমাজে যাঁরাই ‘ভৌমিক’ বাঙালি মুসলমান সমাজে তারা ‘ভূঁইয়া’ হিসেবে পদবী ধারণ করেছেন। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > (প্রাকৃত) ভূমিকা > (বাংলা) ভূঁইয়া > থেকে ভূঁইয়া বা ভূঁঞা এসেছে। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজার উপাধিও ছিল ভূঁইয়া। প্রকৃত পক্ষে কুলীন বংশ পদবীই ছিল তা।
আবার যে সব মানুষ আগে স্থান বিশেষে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেছে তারা স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে ভূঁইয়া নামে অভিহিত হয়ে ঐসব জমি জমার স্বত্ব লাভ করেছে।
ধারনা করা হয়,কাই ভ্রাতৃদ্বয় প্রথমে এই জনবসতিহীন তল্লাটে এসে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেন এবং স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে জমি জমার স্বত্ব লাভ করে ভূঁইয়া উপাধি লাভ করেন।
আর এই সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় কাইতলার জমিদারগণ মোঃআকবর আলী কাই ভূঁইয়া ও মোঃ শমসের আলী কসই ভূঁইয়ার নিকট খাজনা পরিশোধের কথা থেকে।
কাইতলা জমিদার বাড়ির প্রথম জমিদার বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী তাঁর জমিদারি স্বত্ব পাওয়ার পূর্বে এবং পরেও কিছুকাল কাই ভূঁইয়া সাহেবের তালুকে বসবাস ও ভোগদখলকৃত সম্পদের জন্য কাই ভূঁইয়া সাহেবের কাচারিতে খাজনা দিতে বাধ্য ছিলেন বলে জানা যায়।
★পরিচ্ছেদ – ৩
———–
তালুক এর বাংলা অর্থ
অভিধানে তালুক(বিশেষ্য পদ)এর বাংলা অর্থ হলো –
1 ভূসম্পত্তি (জমিদারের খাসতালুক);
2 গভর্নমেণ্ট বা জমিদারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত করে নেওয়া ভূসম্পত্তি;
3 জমিদারির অংশ।
[আ. তাআল্লুক]।
★দার বি. 1 তালুকের মালিক, জমিদার; 2 পদবিবিশেষ।
★তালুকদার (ফার্সীঃ ﺗﻌﻠﻖ ﺩﺍﺭ ) আরবী এবং ফার্সী শব্দদ্বয়ের মিশ্রণ (ﺗﻌﻠﻖ “তালুক” আরবী আর ﺩﺍﺭ “দার” ফার্সী)। ফার্সী ভাষায় শব্দটির অর্থ তালুকের কর্তা। [১] সুলতানী আমল, মোগল আমল এবং বৃটিশ আমলে তালুকের ভূস্বামীদের তালুকদার বলা হতো। তালুকদার বাংলাদেশ, ভারতে মুসলিম এবং হিন্দুদের পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
➤তথ্যসূত্র
1. ↑ চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। “Talukdar “। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। 26 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 386।
[[বিষয়শ্রেণী:উইকিসংকলনের তথ্যসূত্রসহ ১৯১১ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে উইকিপিডিয়া নিবন্ধসমূহে একটি উদ্ধৃতি একত্রিত করা হয়েছে]]
বহুকাল ধরে বঙ্গদেশে সুপরিচিত একটি বংশ পদবী তালুকদার।মোগল ও বৃটিশ আমলে রাজস্ব ও ভূমি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যে সমস্ত পদবীর উৎপত্তি ও বিস্তার তার মধ্যে ‘তালুকদার’ হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানীয় পদবী।বাংলাদেশে তালুক ভূ-সম্পত্তির একটি বিভাগ। ‘তালুক’ শব্দ থেকেও এই পদবীর মর্মার্থ উপলব্ধি করা সম্ভব। আরবি শব্দ ‘তা’ আল্লুক’ যার অর্থ ভূ-সম্পত্তি এবং এর সাথে ফারসি ‘দার’ যুক্ত হয়ে (তা’আল্লুক+দার) ‘তালুকদার’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। যিনি জমিদার তিনিই হচ্ছেন তালুকদার। প্রকৃত পক্ষে, যিনি তালুকদার, তিনি জমি ও ক্ষুদ্র ভূ-সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিতেন সরকারের কাছ থেকেও যেমন, তেমনি জমিদার রাজার কাছে থেকেও। ফলে তিনি হতেন উপজমিদার।
সাধারণত কয়েকটি গ্রাম বা কয়েকটি পরগণা নিয়ে এক একটি তালুকের সৃষ্টি। তালুকিস্বত্ব এক প্রকার ইজারা স্বত্বের মতো। এই স্বত্ব বংশানুক্রমে বর্তমান থাকতো খাজনা বাকি না পড়া পর্যন্ত তালুকিস্বত্ব বিনষ্ট হতোনা । আর তালুকিস্বত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তালুকের ওমালিক বা জোতদার নামে পরিচিত হতেন।
কাইতলা জমিদার বাড়ির প্রথম জমিদার বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী তাঁর জমিদারি স্বত্ব পাওয়ার পূর্বে এবং পরেও কিছুকাল কাই ভূঁইয়া দ্বয়ের তালুকে বসবাস ও ভোগদখলকৃত সম্পদের জন্য কাই ভূঁইয়া সাহেবের কাচারিতে খাজনা দিতে বাধ্য ছিলেন বলে জানা যায়।
★পরিচ্ছেদ -৪
———–
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি আল মাহমুদ এর কথায় ফিরে যাই।১৯৯৮ সাল।উন্মুক্ত সাহিত্য সংগঠনের কর্ণধার হিসাবে “নব সাহিত্যের পাতা” নামক সাময়িকী প্রকাশের জন্য কবির নিকট শুভেচ্ছা বাণী সংগ্রহের জন্য গেলে আলাপচারীতার এক ফাকে বলেছিলেন,”শুনেছি আমার পূর্ব পুরুষদের কেউ কেউ কাইতলা গ্রামে গিয়ে বসতি গড়েছিল।তাই তোমাদের সকল কাজে আমার সহযোগিতা অবারিত”।কবির এ কথার সূত্র ধরে এগুতে পারলে কাইতলা গ্রামের নাড়ী নক্ষত্রের খোঁজ পাওয়া সহজ হবে।
কবি আল মাহমুদ; যিনি তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘সোনালি কাবিন’ কবিতায় লিখেছেন:
‘আমারও নিবাস জেনো লোহিতাভ মৃত্তিকার দেশে
পূর্ব পুরুষেরা ছিলো পট্টিকেরা পুরীর গৌরব’।
কিন্তু, ‘লোহিতাভ মৃত্তিকার দেশটি’ কোথায়? কোথায়-বা অবস্থিত ছিল পট্টিকেরা পুরী? এই সব প্রশ্নের নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি বোধ করি। কেননা, এই সব প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত রয়েছে বাঙালি নামক এক কাজল জাতির আত্মপরিচয়ের চিহ্নটি। কবি আল মাহমুদ- এর ‘সোনালি কাবিন’ কবিতায় বাংলার তেমনই এক বিস্মৃত সময়ের ইঙ্গিতটি বিধৃত রয়েছে । কবির সেই অতীতযাত্রাকালে কবির অর্ন্তলোকে ইতিহাস চৈতন্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে এক অনাবিস্কৃত কাল। যার অভিঘাত অনিবার্যভাবেই স্পর্শকাতর বাঙালির স্নায়ূতন্ত্রে তোলে আলোড়ন ; আর এখানেই কবি আল মাহমুদ উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বলছিলাম যে লোহিতাভ মৃত্তিকার দেশটি কোথায়? কোথায়-বা অবস্থিত ছিল পট্টিকেরা পুরী?
লোহিতাভ মৃত্তিকার দেশটি ছিল বর্তমান কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ে। নবম-দশম শতকে ওখানেই ছিল পট্টিকেরা নগর। আর সে নগরে যে অনুপম সব অট্টালিকা ছিল সে তো অনুমান করাই যায়। ছিল রাজপথ, রাজপথে মন্থর গতিতে চলমান হাতি, শালের বন, দিঘী, দিঘীপাড়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু … আরো কত কী!আমরা পট্টিকেরা শব্দটির আরও দুটি শব্দ পাই।
(১) পট্টিকের; এবং
(২) পট্টিকেরক।(ইংরেজিতে Pattikera)
প্রাচীন বাংলার দুটি প্রধান ভৌগলিক বিভাগ হল সমতট এবং হরিকেল। ওই সমতট ও হরিকেলজুড়েই ছিল মধ্যযুগের বাংলার পট্টিকেরা রাজ্যের অবস্থান।বর্তমান মায়ানমারের আরাকান রাজ্যও ছিল এ পট্টিকেরারই অন্তর্ভূক্ত।
★পরিচ্ছেদ -৫
———-
বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল ও মিয়ানমারের আরাকান সীমান্তগত দিক থেকে শুধু প্রতিবেশীই নয় বরং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কোনো কোনো অঞ্চল বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় আরাকানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।ঐতিহাসিক সত্য হলো- আরাকান অতি প্রাচীনকাল থেকেই ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
বর্তমানে সরকারি নথিপত্রে এ নামটি বিলুপ্ত হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসক নে উইন ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের নাম পরিবর্তন করে ‘রাখাইন স্টেট’ নামকরণপূর্বক এটিকে একটি অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দিয়েছে।ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদদের বর্ণনায় আরাকানের বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়।আরাকান শব্দটি মূলত আরকান; যা আরবী আররেকন বা আররুকন শব্দের অপভ্রংশ। রুকন শব্দের অর্থ হলো স্তম্ভ বা খুঁটি। ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদকে রুকন বলা হয়। তাই তাদের ধারণা, সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে তৎকালীন মুসলমানরা আরাকানকে ইসলামের বুনিয়াদের দিকে খেয়াল রেখে আরাকান নামকরণ করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দের মতে- ‘হিজরি প্রথম শতকের শেষ দিকে (৯৬ হিজরি) ৭১২ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিকভাবে ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু হলেও মূলত পবিত্র মক্কায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রায় সমসাময়িক কালে মহানবী (সা:)-এর জীবদ্দশাতেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষত আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো হয়।
কেননা খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর পূর্ব থেকে আরব বণিকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক পথে ভারত, বার্মা ও চীনের ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে সূত্রেই আরবের কুরাইশরাও ইসলামপূর্ব যুগেই এ বাণিজ্যপথে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
আরব বণিক কাফেলা
বিশেষত পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে পারস্য (ইরান) ও রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে অব্যাহত যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে আরবদের স্থলবাণিজ্যপথ মারাত্মকভাবে বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছিলো। ইয়েমেন ও হাজরা মাউতের আরব বণিকদের নৌবানিজ্যের পূর্ব অভিজ্ঞতার সুবাদে আরবের কুরাইশরাও নৌবাণিজ্যে আগ্রহী হয়ে পড়ে। সে সূত্রেই মহানবী (সা:)-এর আগমনের আগেই তারা ভারতীয় উপমহাদেশ, বার্মা, কম্বোডিয়া ও চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর সূচনালগ্নেই তারা দক্ষিণ ভারতের মালাবার, কালিকট, চেররবন্দর, তৎকালীন আরাকানের চট্টগ্রাম ও আকিয়াবের সমুদ্র উপকূলে স্থায়ী বাণিজ্যিক উপনিবেশও গড়ে তোলেন।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক কালের মুসলমানরাও বাণিজ্যিক কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য করতে আসে এবং সপ্তম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চীনা বাণিজ্যে মুসলিম প্রভাব অব্যাহত রাখে। তৎকালীন দক্ষিণ চীনের ক্যান্টন বন্দর ‘খানফু’ নামে পরিচিত ছিল। মুসলিম বণিকরা এ সময় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষত মালাবার এবং চট্টগ্রাম থেকে কাঠ, মসলা, সুগন্ধিদ্রব্য ও ওষুধি গাছ-গাছড়া সংগ্রহ করতেন। বাণিজ্যিক কারণে মুসলমানরা এসব অঞ্চল সফর করলেও মূলত ইসলাম প্রচার তাদের মুখ্য বিষয় ছিল।
অষ্টম শতকের শুরু থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন টিকে ছিলো।১৫৯০ এর দশকে মুঘল সম্রাট আকবরের অধিনে মুসলিম শাসকগণ শক্তভাবে ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রন লাভ করে ৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে (১৬৫৮-১৭০৭) ভারতে মুসলিম নিয়ন্ত্রন আরো কিছুটা সম্প্রসারিত হয় ৷ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাড়াটিয়া বাহিনীর হাতে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করে ৷ ১৭৯৯ সালে সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম শাসক মহীশুরের টিপু সুলতান ইংরেজদের হাতে পরাজিত হলে কার্যত ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসনের সমাপ্তি হয় ৷
ভারতে মুসলিম শাসন প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন মুহম্মদ ঘুরী (তুর্কি) ও বাংলায় প্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্টা করেন ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি (১২০৪- ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে)। এই সময় মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা বাংলায় ভ্রমণ করেন।
ইতিহাস বলছে,আরাকানে পূর্ব ভারত হতে প্রায় খৃস্টপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে অস্ট্রিক জাতির একটি শাখা ‘কুরুখ’ (Kurukh) নৃ-গোষ্ঠী প্রথম বসতি স্থাপন করে। ক্রমান্বয়ে বাঙালি হিন্দু (পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত মুসলিম), পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, পাঠান এবং অষ্টম শতাব্দীতে আরবরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করে।
মধ্যযুগে ওখানকার রাজসভার বাংলা সাহিত্যের লেখকরা ওই রাজ্যকে রোসাং বা রোসাঙ্গ রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রোসাঙ্গ রাজ্যের রাজভাষা ফার্সি ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষাও রাজসভায় সমাদৃত ছিল। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল রোসাং রাজ দরবার। মহাকবি আলাওল রোসাং দরবারের রাজ কবি ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন মহাকাব্য পদ্মাবতী। এছাড়া সতী ময়না ও লোর-চন্দ্রানী, সয়ফুল মুল্ক, জঙ্গনামা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ রচিত হয়েছিল রোসাং রাজ দরবারের আনুকূল্যে।
মহাকবি আলাওল পদ্মাবতী কাব্যে রোসাঙ্গের জনগোষ্ঠীর একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়েছেন,
“নানাদেশী নানা লোক শুনিয়া রোসাঙ্গিিি ভোগ আইসন্ত নৃপ ছায়াতলে।
আরবী, মিশরী, সামী, তুর্কী, হাবসী ও রুমী, খোরসানী, উজবেগী সকল। লাহোরী, মুলতানী, সিন্ধি, কাশ্মীরী, দক্ষিণী, হিন্দি, কামরূপী আর বঙ্গদেশী। বহু শেখ, সৈয়দজাদা, মোগল, পাঠান যুদ্ধা রাজপুত হিন্দু নানাজাতি। (পদ্মাবতী : আলাওল)—
✪চতুর্থ অধ্যায়✪
➤কৃতি ও বরেণ্য ব্যক্তিগণের সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের অকৃত্রিম অভিভাবক;
আলহাজ্ব সৈয়দ আবু আব্বাস ও কিছু কথা।
********************************
স্কুল জীবনে কয়েকশো ইংরেজী সেনটেন্স আর কুড়ি বিশেক এ্যাসে মুখস্ত করেছিলাম।যা এখনো কাজে আসে।কিছু কিছু সেনটেন্স তখনই মনের মাঝে দাগ কাটতো।যেমনঃ Man is moral –মানুষ মরনশীল।Human mind is very short–মানুষ সহজেই মানুষকে ভুলে যায়।সত্যিই কি তাই?
আলহাজ্ব সৈয়দ আবু আব্বাস স্যারের কথা আমরা কি ভুলে গেছি?
যাঁর কিছু স্মৃতি আমার মনের ক্যানভাসে আঁকা আছে।স্মৃতির ক্যানভাসেও ময়লা জমে,শ্যাওলা পরে।আমার মুঠোফোনে না পেয়ে মেসেঞ্জারে নিম্নোক্ত টেক্সট পাঠিয়ে সে ময়লা আর শ্যাওলা সরিয়ে দিলেন তাঁরই সুযোগ্যা কন্যা ডক্টর সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া।
Brother,
This Friday 9 November please join us at gopibag home at 4 pm for Duaa mahfil for abba. You will meet lots of people from kaitola
মহান আল্লাহ পাক স্যারকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
জীবদ্দশায় উনি ছিলেন কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অকৃত্রিম বন্ধু।তিনি দীর্ঘকাল অত্যন্ত সফলতার সহিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনিত হয়ে কযহস এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।উনার ধবধবে পাঞ্জাবী আর তনু শ্রী সকল ছাত্র /ছাত্রীদের আকৃষ্ট করতো।বিশেষতঃআমাকে।স্কুলে আসলে প্রতিটি ক্লাসে যেতেন এবং পিছনের সিটে বসে ছাত্রদের মতই শিক্ষকগণের লেকচার শুনতেন।পরে আমাদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান কিছু কথা বলতেন।তাতে শিক্ষকগণও সকল প্রকার ঘুম থেকে সতর্ক হতেন।
আমরা স্কুলে পড়াকালীন সময়ে উনা সকল শিক্ষার্থীদের একজন উত্তম অভিভাবক ছিলেন।
ছাত্র /ছাত্রীদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য নানা পদক্ষেপের মধ্যে তিনি ঘোষনা করেছিলেন,”যে সকল শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় ৭৫০ নম্বর /স্টার মার্কস পাবে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা পুরস্কৃত করা হবে।”
১৯৯২সালে বার্ষিক পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেনীতে ৮২৯ নম্বর পেয়ে মেধানুসারে প্রথম স্থানে উক্তীর্ন হলাম।
তাই তিনি যেদিন স্কুলে আসলেন,মরহুম এম শামসুজ্জান হেড স্যার আমাকে অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমি অফিসে সালাম দিয়ে ঢুকলে সৈয়দ আবু আব্বাস স্যার আমাকে পাশে ডাকলেন,কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন।তখন অএ স্কুলের ৯ম ও১০ম শ্রেনীতে আমার এক ভাই ও এক বোন ভাল ছাত্র ও ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী হিসাবে অধ্যয়নরত ছিলেন।বিস্তারিত জেনে বেশ কিছু উপদেশ দিলেন।উনার সামনে রাখা নাস্তার প্লেট থেকে আমার হাতে নাস্তা উঠিয়ে দিলেন।তখন আমার খুব ভাল লেগেছিল।আরো ভাল লেগেছিলো যখন উনি উনার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা চকচকে একশত টাকার নোট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে বললেন,”এটা হলো তোমার পুরস্কারের টাকা।”
অবশ্য স্কুল জীবনে আরো বহুবার উনার নিকট থেকে পুরস্কারের ১০০টাকা নিয়েছি।তখন ১০০টাকার বাজার মূল্যও কম ছিলনা।মাত্র ২টাকায় কাইতলা বাজারের বাদশা ভাইয়ের চায়ের দোকান থেকে ১কাপ দুধের সর প্রায়ই কিনে খেতাম।
আমার স্মৃতির জাদুঘরে উনার বহু কথা ও স্মৃতি জমা আছে।
আমার বিশ্বাস তিনি বেঁচে থাকলে কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পুর্তি উদযাপন এত দিনে হয়ে যেত।এ মাহেন্দ্রক্ষণে দোয়া করছি,মহান আল্লাহ পাক উনার দুনিয়ার সকল কাজ গুলোকে নেক বানিয়ে পরকালের জন্য পাথেয় বানিয়ে দিন।এবং আল্লাহর পক্ষে তা মোটেও অসম্ভব নয়।আমীন।
————————–
★★★★★★
হাজারো প্রাণে সেরা প্রধান শিক্ষক যিনি
মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার তিনি।
—————————
“একটি প্রদীপ বা মোমবাতি থেকে যেমন হাজারটি বাতি জ্বালানোর পরেও তা শেষ হয়না,ঠিক তেমনি জ্ঞানের আলো বিতরন করলেও তা কখনো ফুরিয়ে যায়না”।
“অধ্যবসায়,একাগ্রতা, নিষ্ঠা ছাড়া জীবনে সফলতা আসেনা”।
“তুমি যদি অন্যজনার মঙ্গলের কথা ভাব,তখন অন্যজনও তোমাকে নিয়ে ভাববে”।
জীবদ্দশায় শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় প্রায়শ্চই উপরোক্ত জ্ঞানগর্ভ কথা ও উপদেশ গুলো যিনি বলতেন তিনি হলেন মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার।
ভাল কথা,সুন্দর উপদেশ,যথার্থ আদেশ নিষেধ প্রদানে তিনি কখনো শিথিলতা প্রদর্শন করেননি।নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অটল,নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার চিন্তায় থাকতেন বিভোর।বাগানে কত ফুল ফুটে,গন্ধ বিলিয়ে ঝরে যায়।কে তারে মনে রাখে?কিন্তু তিনি ছিলেন এমনই এক সুগন্ধি ফুল হাজারো শিক্ষার্থীদের মনের বাগানে আজো সতেজ হাসনাহেনা,গোলাপ,রজনীগন্ধা!!
আমার ছাত্র জীবনের প্রিয় শিক্ষক,আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি।আমার বিশ্বাস যে সকল শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবনে স্যারের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন,সেই সব সৌভাগ্যবানদের সকলেরই প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় মরহুম শামসুজ্জামান স্যারের নামটি অম্লান।
এরিস্টটল,প্লেটো,সক্রেটিস রা বার বার জন্মগ্রহন করেন না।শিক্ষক হিসাবে তিনি ওনাদের থেকে পিছিয়ে ছিলেন না।তিনি ছিলেন শিক্ষার্থীদের এক অনুকরণীয় ব্যক্তি। ওনার আদর্শ, রুচিবোধ,শিক্ষা দান পদ্ধতি,পোশাক পরিচেছদ,বাচনভংগি, চলার স্টাইল ছিল আধুনিক ও মার্জিত। এককথায় অসাধারণ।
স্কুল জীবনে আমাকে ইংরেজীতে কথা বলতে যেই মহান ব্যক্তিটি বেশী চাপে রাখতেন তিনি হলেন জনাব শামসুজ্জামান স্যার।স্যার অামাকে প্রায় প্রতিদিন ওনার অফিসে ডেকে পাঠাতেন,নিজের কাজের ফাকে কম্পক্ষে দুটো English Passage করাতেন।আবার হোম ওয়ার্কও দিতেন। ইংরেজিতে কথা বলতেন।ওনার প্রচেষ্টায় স্কুল জীবনেই আমি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম।মনে পড়ে আমার এসএসসি পরীক্ষার পরের অবসর সময় টুকুতে স্কুলে গেলে ৯ম/১০ম শ্রেনীর স্যারের ইংরেজি পিরিয়ডের ক্লাস গুলো আমাকে নিতে বলতেন। দপ্তরির মাধ্যমে চক ডাস্টার আনিয়ে নিজে আমাকে ক্লাস রুমে রেখে আসতেন।ওনার ঔ স্নেহভরা অবদানের কারণেই হয়তো পৃথিবীর ১৩টি দেশের পথে প্রান্তরে আর অফিস পাড়ায় নানান জাতির মানুষের সাথে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি।
শারীরিক গঠনঃ উচ্চতায় তিনি ছিলেন এমনই এক আকৃতির যে কারোর দৃষ্টি ওনার উপরে পড়তো। সোনালী ফর্সা বরণ ছিল শরীরের রূপ। যৌবনে সবসময় দাড়ি গোফ ক্লিন সেব করে রাখতেন।মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো।ওনার হাটা চলা ছিল যথেষ্ট মার্জিত ও গম্ভীর। স্পষ্ট ভাষায় ছোট ছোট কথা বলতেন।মাঝ বয়সে এসেও স্যারের মাথা ভর্তি কালো চুল ছিল।
পোশাক পরিচ্ছদঃপোশাক আশাকের ব্যাপারে তিনি ছিলে অতিব যত্নশীল। ইস্তিরি করা পরিপাটি প্যান্ট শার্ট,ব্লেজার,ওভারকোট,স্যুট এবং মাঝে মধ্যে হাফ হাতাওয়ালা ফতুয়া পরিধান করতেন।বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে পাজামা পাঞ্জাবীও পরতেন।আমার দেখা তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মফস্বলের স্কুল শিক্ষক যিনি কোট-টাই পরে স্কুল করতেন।ওনার রুচিশীল পোশাক ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের কারনে বহু পদস্থ ব্যক্তিরাও মন থেকে স্যারকে সমীহ করতেন।সবসময় পলিশ করা সু ; কখনো চামড়ার জুতা ব্যবহার করতেন। হাতে একটি সুদৃশ্য চামড়ার ছোট ব্যাগ এবং অনেক সময় বাঁধাই করা লাঠি রাখতেন।
“মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোর থেকে মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”।
সবাইকে ছেড়ে আজ তিনি কাইতলা গ্রামের নিজের গড়া মসজিদের পাশে পুকুরপাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত।
মহান আল্লাহ পাক স্যারকে জান্নাত নসিব করুন।আমিন।
👍Copyright @এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(তথ্য সংগ্রাহক,কবি ও গবেষক)
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, বিবিধ
[sharethis-inline-buttons]