সেদিন ছিল শুক্রবার। তাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি। ভাবলাম, আজ সকালের নাস্তাটা তাড়াতাড়ি করে অফিসে কিছু কাজ করব।
সময় সকাল ৭টা। আমি নাস্তা করার জন্য বের হই। আমি রাস্তায় আসার পর দেখি যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে ৪ কি ৫ বছরের একটা ছেলে কান্না করছে। ছেলেটার পরনে তেমন বেশি ভালো কাপড় চোপড় ছিল না। আমি ছেলেটাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, বাবু কি হয়েছে তোমার? আর তুমি এত সকালে এখানে বসে কান্না করছো কেনো?
বাবুটা তখন যা বলল আমি তা শোনার জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না। বাবুটা বলতে শুরু করল- ভাইয়া, আমি আগামীকাল দুপুর থেকে কিছুই খাই নাই। একটু আগে একটা ভাইয়া সানগ্লাস পইরা এইদিক দিয়া যায়তাছিল। আমি ভাইয়াটাকে বললাম, ভাইয়া ১০টা টাকা দিবেন? কাল দুপুর থেকে কিছু খাই নাই! ভাইয়াটা তখন না শুনার ভান কইরা চয়লা যাচ্ছিল।
আমি তখন ভাইয়াটার একটা পা জড়ায়া ধরে বলি, ভাইয়া ১০টা টাকা দিয়ে যান না! অনেক খিদা লাগছে। ভাইয়াটা তখন আমাকে একটা লাত্তি মেরে বললো- এই নে লাত্তি খা। আর বললো, তুই যে তর নোংরা হাত দিয়ে আমার প্যান্টটা নোংরা করছোছ তা তারাতারি পরিস্কার কর, তা না হলে তর খবর আছে। ভাইয়া টা
তখন ওর পকেট থেকে একটা টিসু বের করে মাটিতে ছুরে মারে। আর বলে নে তারাতারি পরিস্কার কর। আমার পাইভেট আছে।
আমি পরিস্ককার করে দেয়ার পর ভাইয়াটা চলে গেল। ভাইয়া আমি কান্না করতেছি এই জন্য যে আমার বুকে অনেক ব্যথ্যা করতেছে। বাবুটার কথা শুনে আমার ২টা আখি দিয়ে জল চলে এল। আমি আমার নিজের নাস্তার জন্য যে টাকা এনেছিলাম, সে টাকাগুলো বাবুটাকে দিয়ে বললাম, নাও বাবু, তুমি টাকাগুলা রাখ আর নাস্ত করে নিও। বাবুটা তখন একটা হাসি দিয়ে বল্ল Thanks you ভাইয়া।
আসলে আমরা শিক্ষিত হলে কি হবে, আমাদের বিবেকটা আজও জ্ঞানশূন্য। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আাছে যে, কাউকে হেল্প তো করেই না, উল্টো খারাপ ব্যাবহার করে। আচ্ছা, আমরা যেমন মানুষ, রাস্তার বাবুগুলো তো তেমনই মানুষ। তাই আমরা যেমন একবেলা না খেয়ে থাকলে আমাদের কস্ট হয়। বাবুগুলোরও তো আরো বেশি কস্টহয়। কারন ওরা শিশু।
দেখেন ভাইয়া, আপনার বাসায় আপনার নিজের যে বাবুটা আছে, ওকে আপনি ৩বেলা খাবার তো দেনই, তাও আবার বাবুটার জন্য আপেল কমলা আরো কত কি নিয়ে যান বাবুটা খাবে বলে। আচ্ছা ভাইয়া, রাস্তার বাবুগুলো কি মানুষ না? ভাইয়া, আপনি আপনার বাসার বাবুটার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার মাঝে কোনো অসহায় বাবু দেখলে ওদেরও কিছু দিয়ে যাবেন।
কারণ ভাইয়া, হয়তোবা আপেল কমলা কিনে দেওয়ার মত ওদের আব্বু ও নেই। আপেল কমলা তো দূরে থাক, রাস্তার বাবুদের পেটে ৩বেলা ডালভাতই জুটে না। আচ্ছা আমরা কি পারি না রাস্তায়। কোনো বাবু দেখলে ওদের কিছু খাবার কিনে দিবেন।
আমরা তো কত টাকা কত দিক দিয়ে ব্যয় করি ভাইয়া। দেখেন, আমরা ১৫ কি ২০ মিনিট হেটে যাওয়া লাগবে বলে রিকশা দিয়ে যাই। অথচ রাস্তার বাবুগুলো সারাদিন হাটে, মানুদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে, কেউ একজন তাদের মায়া করে একবেলা খাবারদিবে বলে।
আমরা কি পারি না ভাইয়া, রাস্তার বাবুদের পাশে একটু দাঁড়াতে। ওদের বেশি কিছু দিতে না পারি, ওদের ভালভাতের একটু ব্যবস্থা করতে তো করতে পারি। সবশেষে আমি এই কথাটাই বলবো, আসুন আমরা সবাই রাস্তার বাবুদের হেল্প করতে না পারি, ওদের সাথে সুন্দর ব্যবহারটুকু করব।
আবির হোসাইন জসিম : সংবাদকর্মী, দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: খবর, নাগরিক সাংবাদিকতা, মতামত
[sharethis-inline-buttons]