মুহাররম মাস ইসলামী সনের প্রথম মাস। ইসলামী সন মুহাররম মাস থেকে শুরু হয় এবং জিলহজে শেষ হয়। এটাকে হিজরী সন বলে। মুসলমানগণকে তাদের সন তারিখ স্মরণ রাখা এবং জীবনে বাস্তবায়ন করা ফরজে কেফায়া। মুহাররাম মাস ঐ মাস সমূহের অন্তর্ভুক্ত যে মাস সমূহকে “আশহুরুল হুরুম” বলা হয়েছে। আশহুরুল হুরুম হলো ঐ চার মাস, যে মাস সমূহের অন্যান্য মাসের উপর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। মাস চারটি হলো: ১. জিলকদ ২. জিলহজ্ব ৩. মুহাররাম ৪. রজব।
হাদীস শরীফে এ মাসকে “শাহরুল্লাহ” তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ মাসে আমলের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবীয়ে কারীম সা. বলেন; রামাযানুল মুবারকের রোযার পর সব চেয়ে উত্তম রোযা হলো মুহাররাম মাসের রোযা। (তিরমিযী) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত নবীয়ে কারীম সা. বলেন; যে ব্যক্তি মুহাররাম মাসে এক দিন রোযা রাখবে তাকে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে ত্রিশটি রোযা রাখার সওয়াব দান করা হবে (আত তারগীব)।
এ মাসের দশ তারিখকে বলা হয় “আশুরা”। আশুরা এর শাব্দিক অর্থ দশম। সাধারণত: আশুরা বলতে মুহাররামের দশম তারিখকেই বুঝানো হয়। আশুরার ইতিহাস কী? আশুরায় আমাদের কি করণীয়, আমরা আশুরাকে কিভাবে মূল্যায়ন করব। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে রাসূল সা. কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন। হাদীসে এসছে রাসূল সা. মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন সেখানকার বনি ইসরাঈল তথা ইয়াহুদিরা মুহাররামের দশ তারিখে রোযা রাখে। তিনি জানতে চাইলেন তোমরা এই দিনে রোযা রাখ কেন? তারা বলল: এই দিনে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতে মুসা আ. ও তার গোত্রকে সমুদ্র পার করে নিয়েছেন, আর ফেরাউন ও ফেরাউনের বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। এর শোকর আদায় করার জন্য মুসা আ. রোযা রেখেছেন, তাই আমরাও রোযা রাখি। রাসূল সা. তখন বললেন আমরা মুসা আ. এর অনুসরণ তোমাদের চেয়ে বেশী করবো। তাই রাসূল সা. রোযা রাখা শুরু করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও রোযা রাখতে বললেন (মুসলিম)। এই হলো আশুরার তাৎপর্য।
নেয়ামতের শোকর আদায় করার শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো এই দিনের শিক্ষা। হ্যাঁ পরবর্তী এই দিনে হযরত হুসাইন রা. কারবালার ময়দানে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। উম্মতের জন্য এই ঘটনার স্মৃতি বেদনাদায়ক, হৃদয় বিদারক- একথা সত্য, কিন্তু এই বেদনার স্মৃতি স্মরণ করার মাধ্যমে আশুরা দিবস পালন করতে হবে একথা নবী সা. শিক্ষা দিয়ে যাননি। একটা দিনে ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটতে পারে, কিন্তু সব কিছুর মূল্যায়ন এভাবে করতে হবে যেভাবে নবী সা. করে গেছেন। আশুরার দিনের ফযীলতঃ হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন; আমি নবী সা. কে আশুরার দিন এবং রামাযান মাস ব্যতীত কোন ফযীলতপূর্ণ দিনের রোযার খুব গুরুত্ব দিতে দেখিনি। অর্থাৎ নফল রোযার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গুরুত্ব তিনি আশুরার রোযার ক্ষেত্রে দিতেন অন্য কোন রোযার ক্ষেত্রে এ পরিমাণ দিতেন না (বুখারী, মুসলিম)।
হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন; আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে, আশুরার দিনে রোযা রাখলে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবী সা. বলেন; যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য ভাল খাবারের ব্যবস্থা করবে আল্লাহ তাকে সারা বছর ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে দিবেন (বায়হাকী, আত তারগীব)।
করণীয়:হাদীসের আলোকে আশুরার দিনে করণীয় দুটি কাজ প্রমাণিত হয়।
১. নফল রোযা রাখা। তবে দুটি রোযা রাখা উত্তম। কেননা ইবাদতে ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে রাসূল সা. বলেছিলেন যে, আগামী বছর যদি আল্লাহ আমাকে জীবিত রাখেন তাহলে এর সাথে আরো একটি রোযা রাখব। কিন্তু পরবর্তী বছর আসার আগেই তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তবে যেহেতু তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বিধায় ১০ তারিখের সাথে সাথে আরো একটি রোযা রাখা উত্তম (মুসলিম)।
২. পরিবার-পরিজনের জন্য ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা। বর্জনীয়: উপরোক্ত বিষয় গুলো হলো করণীয়, এর বাইরে হযরত হুসাইন রা. এর কথা স্মরণ করে, কারবালার কথা স্মরণ করে যা কিছু করা হচ্ছে, যেমন: মাতম করা হচ্ছে, বুক চাপড়ানো হচ্ছে, হায় হুসাইন হায় হুসাইন, ইয়া আলী! বলে আবেগ জাহির করা হচ্ছে, শোক মিছিল করা হচ্ছে, তাযিয়া বের করা হচ্ছে, এগুলো মানুষের সৃষ্টি করা রছম ও কুসংস্কার। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। শিয়া সম্প্রদায় এ সমস্ত শুরু করেছে, আর তাদের দেখাদেখি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে এগুলো চালু হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এগুলো থেকে হেফাযত করুন এবং আশুরার ফযীলত অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
গোলাম কিবরিয়া : অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত
Some text
ক্যাটাগরি: ধর্ম
[sharethis-inline-buttons]