রাতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। চারদিকে আলো ঝলমল করছে। সারাদিনের বিক্রি শেষে দোকান গোছাতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। মালিকরা ব্যস্ত লাভ-লোকসানের হিসাব নিয়ে।
রাত যত গভীর হচ্ছে, মানুষের হাঁকডাকও তত কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষেরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। আমি দেশ দর্শন অফিস থেকে বের হয়েছি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
কিছুটা পথ হেঁটে কালিবাড়ির মোড়ে এসেছি। এখান থেকে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে। রিকশায় ভাড়া বেশি। অটোর ভাড়া কম। তাই অটোর জন্য অপেক্ষা করছি।
নাহ, অটু নেই। ভাড়া বেশি হলেও রিকশা দিয়েই যেতে হবে। দু’কদম এগুতেই এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা হাঁক ছাড়লো- হুযূর! উঠুইন, কয় যাইবেন? আমি লক্ষ করলাম, লোকটার হত-পা কাঁপছে, চোখ- মুখে বিষণ্নতার ছাপ। এই বয়সে মানুষ রিকশা চালানো তো
দূরের কথা সাধারণ কোনো কাজ করতেই বেগ পেতে হয়। আর উনি রিকশা চালাচ্ছেন!
আমি রিকশায় উঠে বসলাম। উনি চালাতে শুরু করলেন পা’ দিয়ে! রিকশায় মটার নেই। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার রিকশায় মটার নেই কেনো? বাবারে! একটা মটার লাগায়তে পচিশ- ছাব্বিশ হাজার টাহা লাগে। এতো টাহা কোইত্থে পামো? কিন্তু এভাবে তো আপনার অনেক কষ্ট হয়। তাছারা আপনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। অইলেই আর কী করবাম, না চালায়লে চলবাম কীবা?
এসব কথাবার্তা বলতে বলতে রিকশা চললো শিমড়ায়লের দিকে। আমার খুব খারাপ লাগছে, এমন বৃদ্ধলোকের রিকশায় উঠে। আবার যদি নেমে যায়, তাহলেও তো লোকটা কষ্ট পাবে। আমি লক্ষ করলাম, রাস্তার উঁচু জায়গাগুলোতে এসে সর্ব শক্তি দিয়েও উপরে উঠতে লোকটার খুব কষ্ট হয়। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলে-মেয়ে কয়জন? তিন মাইয়া।
ছেলে নাই? নাহ। আপনি দৈনিক কত টাকা ইনকাম করেন? এইতো দেশশে-দুইশো। এতো কম কেনো? আমি বুড়া মানুষ, আর আমার রিকশায় মটার নাই। এর লাইগা অনেকেই উঠতে চায় না। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে? বাবারে এই টাকা দিয়া ডালভাত খায়লেই তো শেষ হয়া যায়।দৈনিক দেশশো-দুইশো টাহা দিয়া আর সংসার চলে?। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালয়ার এই সীমাহীন কষ্টের কথা শোনে আমি বাকরুদ্ধ।
আমাদের সমাজে অনেক দানশীল ব্যক্তি আছেন- যারা তেলের মাথায় তেল ডালেন। এই সীমাহীন দুঃখ -কষ্টে থাকা মানুষগুলোকে তারা দেখে না। দেখতে পান না। অথচ দানখয়রাত এদেরি-ই করা দরকার। এই বৃদ্ধকে যদি একটা মটারওয়ালা রিকশা কিনে দেওয়া যায়- বৃদ্ধের কষ্ট লাঘব হবে, সুখে থাকবে বৃদ্ধের পুরো পরিবার।
জুনায়েদ আহমেদ : শিক্ষার্থী
Some text
ক্যাটাগরি: খবর, নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]