রিজিকের মালিক এক আল্লাহ, এই কথার উপর ‘কিন্তুহীন’ বিশ্বাসের নামই ঈমান। এখানে কেউ যদি কিন্তু আনার পথ খোঁজে তাহলে তার ঈমান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়াটায় স্বাভাবিক। কিন্তু আজকাল আমরা দেখি অনেকেই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে অন্যায় অত্যাচার জুলুম, নির্যাতন, সুদ, ঘুষ , ব্যভিচারে লিপ্ত হচ্ছে । তারা এখন ভবিষ্যৎ বলতে সন্তানের জন্য ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা বাড়ি গাড়ি এই সবকেই বুঝে ! তাই তারা নিজের মৃত্যুর পূর্বে যে কোন উপায়ে সন্তানদের বিত্তশালী দেখে যেতে চাই।। অনেকেই বলতে শুনি যে মরার আগে যদি ছেলেদের জন্য বাড়ি ঘর দোকান পাট করে দিয়ে যেতে পারি । মরলে ও আমার কলিজাটা পঁচবে না ! কি অদ্ভুত চিন্তা সন্তানের জন্য ।
অর্থাৎ যে কোন ভাবেই সন্তানকে বিত্তবানের সারিয়ে দাড়ঁ করানো চাই চাই।। আর সেই কাজটি করতে গিয়ে কোন না কোন উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতেই হবে। আমি বছর তিনেক আগে আমাদের পাশের গ্রামে ৩ দিনের জন্য তাবলীগ জামাতে গেলাম।। মসজিদের পূর্ব পাশেই একজন বৃদ্ধ লোক অসুস্থ্য ছিল । তাই সাথী ভাইয়েরা ওনাকে দেখতে গেল – ঐ লোকটির ৪/৫ জন ছেলে আছে সবাই গায়ে গতরে বেশ । বাবার মৃত্যুর পর কম করে হলেও ৫/৬ কানি করে ফসলি জমি সাথে বিপুল পরিমান অর্থ বিত্তের ও মালিক হবে এও প্রায় নিশ্চিত। কারণ পাশের গ্রাম তো তাই আমরা সবাই ওনার সম্পদ সম্পর্কে মোটামুটি জানি ।
যায় হোক । আমরা লোকটির শারিরিক খোজ নিতে ওনার ঘরে গেলাম – ঘরটি বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিল – যদি ও লোকটির এখনো কোটি টাকার উপরে সম্পদের মালিক। মাথার চুল গুলো বেশ লম্বা এলোমেলো , দাড়ি গুলো এদিকওদিক গোফ গুলো ঠোটের ফাক অতিক্রম করে মুখের ভিতরে চলে গিয়েছে। হাত পায়ের নখ গুলো লম্বা হয়ে বাকঁ ধরেছে । লোকটিকে দেখে আমাদের সবারই অনুধাবন হল যে । কয়েক মাসে ও অসুস্থ্য বাবার নখ গুলো কেটে দেওয়ার মত কোন সন্তানই এগিয়ে আসেনি। চুল গুলো কেটে দেওয়ার জন্য একজন নাপিতকে ডেকে আনার মত দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয় নাই কোন সন্তানেরই।
যদি ঐ অসুস্থ্য বাবার কোটি কোটি টাকার সম্পদ ভোগ করছে ভবিষ্যৎ এ হাতির ন্যায় এই সন্তানেরা এই বিশাল সম্পদের মালিক ও বনে যাবে । তবে আমরা যেটুকু জানি ঐ লোকটির সম্পদ হালাল পন্থায়ে উপার্জিত ছিল। সারা জীবন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সন্তানদের জন্য ভবিষ্যৎ গড়েছে ঠিকই। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত ক্ষণে কোন সন্তান বাবার প্রতি একটু ভালবাসা ও দেখায় নি! বাবার মাথার চুল কিংবা হাত পায়ের নখ গুলো কেটে দেওয়ার কথা আদৌ তাদের মনে ধরেনি !! এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা অবলোকন করছি প্রতিনিয়ত । কী বাবা সন্তানের ভবিষৎ গড়ার তুমি কে ? যে সন্তানের জন্য সারা জীবন খেয়ে না খেয়ে – বিশাল সম্পদের ভান্ডার অর্জন করলে । কিন্তু সেই সম্পদ তোমার কোন কাজে লাগল ?
এইতো গেল আমাদের স্বচক্ষে দেখা অসংখ্য ঘটনার একটি । এই তো কিছুদিন আগে সারা দেশের মানূশের বিবেককে যে ঘটনা নাড়া দিয়েছিল । সেটি হল এই যে – ফোনে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে কোটি পতি সন্তান বলেছিল । আমি মিটিং এ আছি বাবার লাশ ( আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে পাটিয়ে দাও) যদি ও ঐসব ঘটনায় আমাদের হৃদপিন্ডটা ভেঙ্গে ছুড়ে তছনছ করে দেয় । কিন্তু সন্তানকে কোটিপতি বানানোর দৌড় থেকে আমরা কতটুকু সরে এসেছি সেটিই দেখার বিষয়।
যারা সন্তান ও নিজেকে বিত্তের চাদরে ঢেকে সুখি সাজানোর লড়ায়ে। অন্যের গলায় দা ঠেকিয়ে সব লুটে নিচ্ছ কিংবা বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে অথবা কলমের কালিতে অন্যের স্বপ্ন মাড়িয়ে নিঃস্ব করে দিয়ে আপন সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ছো । সেই পাপের ভার তোমার সন্তান নিজ কাঁধে তুলবে কি ?
আজকাল সরকারী বেসরকারী এমনকি সমাজপতিদের বড় অংশটায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মানুষকে জিম্মি কিংবা ঠকিয়ে বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাচ্ছে । যেটিকে আমরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাওয়ার সাথে তোলনা করে থাকি ।
আমরা যখন থানাতে যায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করার জন্য । সেই মুহুর্ত থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পৌছানোর প্রতিটি ক্ষণেক্ষণে দিতে হয় ঘুষ । অভিযোগ দায়ের থেকে শুরু করে , মামলা এফ আই আর, আসামী ধরানো – এবং গ্রাম্য শালিস কিংবা আইনী প্রক্রিয়ায় শেষ হওয়ার পর থানা থেকে মামলা উঠানোর পর্যন্ত টাকা ছাড়া কোন কিছুই হয় না । এছাড়া পত্রিকা খুললেই দেখা যায় – ব্যবসায়ীকে টাকার জন্য উঠিয়ে নিয়ে রাত ভর নির্যাতন করছে পুলিশ, কিংবা ইয়াবা দিয়ে পথচারীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছে পুলিশ। কিংবা কুমিল্লা থানায় মাদকের হাট শিরোনাম ও দেখি আমরা . ! এই সব অপকর্মের কারন কিন্তু একটায় বিত্তশালী হওয়া ও সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়া ।
আমি আশ্চর্যান্বিত হয় এই ভেবে আমরা মানুশের স্বীকৃতি বহন করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য । আমার আমাদের ধর্মীয় কিংবা জাতি ভাইকে – গুম করে, খুন করে, মেরে ধরে, জুলুম নির্যাতন করে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার কি কুৎসিত কর্মেই না লিপ্ত হচ্ছি । আমরা কি একবার ও ভেবেছি যে আমি যা করছি তা অন্যায় করছি ? মানুষ হিসাবে আমি এমন জঘন্য হতে পারি কিনা ? নিজেকে প্রশ্ন করেছি কখনো ? আমার মত ঐ মাণুষটি ও কারো না কারো বাবা কিংবা কারো সন্তান – আমি কি করে অন্য ভাইয়ের উপর জুলুম করে কিংবা তাকে ঠকিয়ে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ি ?
সন্তানের ভবিষ্যত কিন্তু পুলিশ অফিসার ঐষী’র বাবা ( মাহফুজুর রহমান) ও গড়তেছিল । কিন্তু মানুষ মেরে ধরে কেউ সুখি হতে পারে না এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কিন্তু মেয়ের হাতে মা বাবার খুন হওয়ার ঘটনা । তুমি আমি আমরা যারা নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য অন্য্যের গলায় ছুরি চালাচ্ছি কিংবা গুলি করে বুকের পাঁজরটা ভেঙ্গে দিচ্ছি । তোমার সেই সন্তান পাপের টাকায় খেয়ে পড়ে বড় হয়ে মানুষ হবে কি ? নাকি ঐষীর মত হবে তার নিশ্চয়তা তোমাকে কে দিবে ?
সারা জীবন মানুষ ঠকিয়ে সন্তানের জন্য যে অর্থ বিত্তের পাহাড় গড়েছ, তোমার মৃত্যুর খবর পেয়ে সেই সন্তান বলবে নাতো আমি জরুরী মিটিং এ আছি আসিতে পারব না – বাবার লাশ ( আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে) পাঠিয়ে দাও।! কারন মাণুষের রক্ত চুষে তুমি যে টাকা উপার্জন করেছে । সেই টাকায় খেয়ে পড়ে দামি গাড়িতে চড়ে। তোমার ছেলে মেয়েরা হয়ত হালাল উপার্জন কারি ব্যক্তির সন্তানের মত অশিক্ষিত বা শীর্ণ দেহের হবে না ! সুশ্রী মোটা সোঁটা হবে এর কিছু বাস্তবিকতা যেমন আছে, তেমন মানুষের আকৃতির ও পূর্ণতা পাবে এটা ও প্রায় নিশ্চিত । কিন্তু তোমার জুলুমবাজির টাকায় খেয়ে পড়ে সে একজন মনুষ্যবোধ পূর্ণ মানুষ হবে সেই বিষয়ে পরিপূর্ণ সন্দেহ থাকলে ও আগামীর জন্য আরেকজন তুমিই যে রেখে যাচ্ছ তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
কেননা হালাল উপার্জন কারীর সন্তান তো আর তোমার সন্তানের মত শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাবে না । কারণ তোমার পাপের টাকার যে অংশ তোমার সন্তান প্রতিমাসে অপচয় করে সে পরিমান টাকা তো একজন সাধারণ মানুষ এক মাসে রোজগার ও করতে পারে না – সেখানে হালাল উপার্জন কারী ব্যক্তির ছেলে খেয়ে না খেয়ে অথবা মানুশের সহমর্মিতায় লেখাপড়া করে সুশিক্ষিত হলে ও – কোটা প্রথা কিংবা ৫/৭ লাখ টাকার দিয়ে চাকুরী করার দৌড়ে মাঝ পথে ঝরে যাবে সে ঠিকই ।
তবে তোমার মত আগামীর আরেকটা রক্ত চুষা হওয়ার পথে তোমার সন্তান সেই দৌড়ে বিজয়ী হবে নিশ্চিত । ঘুষখোর আর জালেমের মাঝে কোন পার্থক্য নেই । কারণ একজন জালেমের পক্ষেই কেবল ঘুষ নেওয়া সম্ভব !! কিন্তু সারা জীবন মানুষ ঠকিয়ে নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য যে পাপ কামায় করেছ। তার ভার কি বহন করবে তোমার ছেলে কিংবা মেয়ে ? তোমার মৃত্যুর পর তোমার নব্য হারামখোর সন্তান কি তার বাবার মাগফেরাত কামনায় কাক ডাকা ভোরে তোমার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে ? সূরা ফাতেহা পাঠ করে কেঁদে কেঁদে বলবে কি – হে আল্লাহ আমার বাবাকে আপনি মাফ করে দিন – আমি আপনার কাছে বাবার হয়ে মাফ চাই?
আপনি তো অসিম দয়ালু পরম করুণাময় । আপনি তো রহিম রহমান, আপনি তো গাফফার।
একবার ভেবে দেখুন মৃত্যুর পর আপনার সাথে কোন কিছু যাচ্ছে কিনা ? আপনার দ্বারা যারা নির্যাতিত হয়েছে তাদের অভিষাপের ভার আপনার আদরের সন্তানরা আদৌ নিচ্ছে কিনা ? আর নেওয়ার কোন পথ ও খোলা আছে কি ? তাহলে কিসের জন্য মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি এত জুলুম ?
ভাবুন ফিরে আসুন মানুষে – জাগিয়ে তুলুন মানবতা -” আত্মসুদ্ধি বল আর আত্মসুখই বল ” এর সবই তো রয়েছে মানবতায় – মানবতায় রয়েছে পরকালিন শান্তি । আর বিপরীতে রয়েছে চরম অশান্তি।
এবার তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন পথে হাটবে তুমি – জুলুম না মানবতায়।।
মোঃ মাহফুজুর রহমান পুষ্প
সাধারণ সম্পাদক
মানব কল্যাণ নবীন সংঘ
গোকর্ণ ঘাট – ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
০১৯৪২২৪৩৩৩৬
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা
[sharethis-inline-buttons]