বৃহস্পতিবার সকাল ১১:২৭, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

পাকিস্তানে প্রতি মাসে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত হয় ২৫ হিন্দু নাবালিকা

৮৬৩ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

প্রতি মাসে পাকিস্তানে গড়ে ২৫ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বালিকাকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তর করা হয়, একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের দুই হিন্দু নাবালিকা রবীনা ও রীনাকে অপহরণ করে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা নিয়ে পাকিস্তানের ইমরান সরকারের ওপর চাপ বেড়েছে দেশের অভ্যন্তরে। ভারতের তরফে সুষমা স্বরাজ এই ঘটনার তদন্ত দাবি করে পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন। চাপের মুখে ১ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ইমরান প্রশাসন।

কিন্তু রিপোর্ট বলছে, এই ঘটনা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। অমুসলিম নাবালিকাদের অপহরণ করে বিয়ে, তারপর জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তর, এটা পাকিস্তানের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কম করেও ২৫ জন নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্মান্তরিত করা হয় প্রতি মাসে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অপহরণের সিংহভাগ ঘটনাই ঘটে সিন্ধু প্রদেশের হিন্দু অধ্যুষিত মীরপুরখা, থরপারকার ও উমেরকোট জেলায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থানায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব হয় না।

২০১৪ সালে পাকিস্তানেই সংখ্যালঘুদের স্বার্থে আন্দোলনরত একটি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, প্রতি বছর অন্তত ১ হাজার অমুসলিম বালিকাকে ধর্মান্তরিত করা যায়, যাদের বয়স মোটামুটি ১২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। যদিও বা বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মেয়েটিকে ইতিমধ্যেই জোর করে বিবাহ করার ফলে শ্বশুরবাড়িতেও চরম অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়। মেয়েটির নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীরা রক্ষনশীল হওয়ায় তার নিজের বাড়িতে আসার পথও বন্ধ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অনেক মেয়ের পরিবার মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় হিন্দু সংগঠন মেয়েদের সুরক্ষা ও সুবিচারের দাবিতে আইন তৈরির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অনেকগুলো মুসলিম সংগঠনের বিরোধিতার কারনে আইন উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, উমেরকোটের সিরহন্দি শ্রীনে সবচেয়ে বেশি হারে অমুসলিমদের ধর্মান্তরিত করা হয়। ভীল, মেঘওয়ার, কোহলি, ভাগরি প্রভৃতি তপশিলি গোষ্ঠীভুক্ত হিন্দুদেরই মূলত টার্গেট করা হয়। সিরহন্দি শ্রীনের এক পীর ওয়ালিউল্লাহ সরহন্দি জানান, ধর্মান্তরিত না করলে মেয়েটি কাফের হিসেবে গন্য হবে।

সিন্ধুর উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে মূলত উচ্চশ্রেণির হিন্দুদের বসবাস, যারা মূলত ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত। বর্তমানে তাদের অধিকাংশই করাচীতে বসবাস শুরু করেছেন। তাই এখানে নিচুতলার হিন্দুরাই আক্রমনের শিকার হন, যারা অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য ও দারিদ্র‍্য যাদের নিত্যসঙ্গী। এরা মূলত স্থানীয় মুসলিম জমিদারের অধীনে ক্ষেত মজুরের কাজ করে। আর তাদের ঘরের মেয়েরাও এই জমিদারদের লালসার শিকার হয়।

পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, শুধুমাত্র উমেরকোটের কুনরি ও সামারো তালুক থেকেই প্রতি মাসে ধর্মান্তরিত হয় ২৫ জন বালিকা। প্রথমে তাদের অপহরণ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েটির বাড়ির লোকেরা তার আর খবর পায় না। অপহরণের পরে তাদের ২০ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় এবং বাইরে মুখ না খোলার জন্যেও ভয় দেখানো হয়। তারপরেই তাদের ধর্মান্তরিত করা হয়। এর ফলে সেই বালিকারা নিজের সমাজের কাছেও গ্রহনযোগ্যতা হারায়৷ ভবিষ্যতের কথা ভেবে আক্রান্ত বালিকারা অপহরনকারীর হাতেই নিজেদের সঁপে দেয় বাকি জীবনের জন্য।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের উস্কানিতে প্রতিনিয়ত এই ঘটনা ঘটছে। কিছুক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারের অমুসলিম বালিকাদের লাভের আশায় যথেষ্ট পরিমানে রেশন, অর্থ, বাসস্থান দেওয়ার প্রলোভনও দেওয়া হয়।

সম্প্রতি জমায়েত উলেমা ই ইসলাম, জামাত দু দওয়া, ফালাহ ই ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশন ইত্যাদি বিভিন্ন মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে সিন্ধুর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। তাদের অঙ্গুলি হেলনেই প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে অমুসলিম নারীদের ধর্মান্তর প্রক্রিয়া। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা।

Some text

ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি