রবিবার দুপুর ২:৫৫, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

কবর : মোঃ মাহফুজুর রহমান পুষ্প

১১৫৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

প্রতিটা দিন ক্ষন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা রাত – কেটে যায় মৃত্যুর মিছিলে,, মসজিদের মাইক কিংবা রিক্সায় চড়ে আসা যুবকের কন্ঠে ধ্বনিতে থাকে – মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেওয়ার আহবান । সময় সুযোগে যোগ দেয় মিছিলে – মাঝে মাঝে কবর ও খুড়ি – অনেক সুন্দর সুন্দর কবর খুড়ি যা দেখে লাশের সাথে কবর পর্যন্ত আসা অনেকেই কবর দেখে প্রশংসা ও করে যায় – যদি ও সুন্দর কবর কিংবা অসুন্দর কবর – মৃত ব্যক্তির কবরে ভাল খারাপের কোন ভূমিকায় রাখতে পারবে না!

তারপর ও কবর খুঁড়ার সময় চেষ্টা করি যেন অন্য দিনের চেয়ে একটু সুন্দরই হয় — এরই ধারাবাহিতায় গত ২২ শে জুন ২০১৮ শুক্রবার বিকালে পাড়ার এক মহিলার কবর খুঁড়তে যায় – প্রচণ্ড রোদ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গরম,, নিয়মিতদের অনেকেই অনুপস্থিত – আমার শরীরের ও সায় নেই,, কিন্তু যেতেই যে হয়,,, গেলাম ও কিন্তু কোথায় কবর খুঁড়বো ? অনেক স্থানেই গেলাম বড় বড় গর্ত বৃষ্টির পানি ও জমে রয়েছে।

সবিই অনুপযুক্ত জাগয়া । অতঃপর এক জায়গা পরিস্কার দেখে কয়েক বার কোদাল চালাতেই দেখা মিলল ছোট শিশুর কবর — আবার ও স্থান পরিবর্তন,,,,
অবশেষে একটি জায়গা নির্ধারণ করে করব খুঁড়ছি কিন্তু,,, মাটি ছিল খুবই নরম তুলতুলে তাই আগেই সতর্ক ছিলাম ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে। তাই দুজনকে পাঠালাম আমিনপুর থেকে কাঠ কিনে আনতে,, আনলো ও বটে কিন্তু তখনো করবটি ভেঙ্গে পড়েনি,,, সবাই ভাবলাম যাক – আজ আর কাঠ গুলো কাজে লাগবে না –

মাইকে শুনা যাচ্ছে মরহুমার লাশ এখন ঈদ গাঁ মাঠে পৌঁছেছে,,, যারা জানাযায় অংশ নিতে ইচ্ছুক,, তারা দ্রুত মাঠে চলে আসুন,, আমরা নিশ্চিত মনে অপেক্ষা করছি – হঠাৎ চোখ গেল কবরের ভেতর – মুহুর্তেই পশ্চিম পাশ ভেঙ্গে পড়ল,,, সবাইকে ডেকে ভিতরে নেমে পড়লাম,, কাঠ খূটি ও রশি দিয়ে কবরটিকে ঠিকিয়ে রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ শুরু করলাম,,, সৌন্দর্য নষ্ট হলে ও মোটামুটি দাড় করালাম,,, যাক বাঁচা গেল,, এমনিই চোখের পলকে এবার পূর্ব পাড়ে ধস,, আবারো সবার প্রচেষ্টায় কোন মতে কাঠ বাঁশের মাধ্যমে ধরে রাখা হল, কিন্তু এই ভাবে কি ধরে রাখা যায় কবর ?

ধরে রাখা যাবে কি জীবন ?
নিশ্চয় না ।
আহ আমরাই সৃষ্টি সেরা জীব ! কই আমার চোখের সামনেই তো খসে পড়ল কবরের উভয় পাড় ।
আমরা কি কেউ মৃত্যুকে চিন্তা করি? প্রতিটি মানুষের জীবনে দিনের আলোর মতো যে কথাটি সত্য, সেটা হলো মৃত্যু। মানুষ যতই এর কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুক না কেন মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। অথচ আমরা এই চিরন্তন সত্যটাকে জেনেও কেন জানি দিন দিন দ্বীনের পথ ছেড়ে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

মৃত্যু আমাদের অতি কাছে। মহানবী (সা.) সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি যখন নামাজে ডানে সালাম ফিরাই তখন মনে হয় বামে সালাম ফেরাতে পারব না। এর মধ্যে মৃত্যু এসে যেতে পারে।

আমাদের ভাবতে হবে প্রতিদিন ৭০ বার কবর আমাদের ডাকছে। সে ডাকে একদিন আমাদের সাড়া দিতে হবে। কিন্তু সেখানে যে যাব, কী নিয়ে যাব? যে কোনো সময় আমাকে-আপনাকে মৃত্যুর ফেরেশতা পাকড়াও করতে পারে। তখন আমাদের কী অবস্থা হবে? আমরা কী জবাব দেব কবরে? হাশরে, মিজানে কীভাবে পার হব পুলসেরাত ?


পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৪৫ আয়াতে বলা হয়েছে- আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না। সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। আমাদের এ জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। পরকালের জীবনের কাছে দুনিয়ার জীবনের উদাহরণ হল বিশাল সাগরের পানি সম্ভারের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতো।


পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, ‘একদিন রাসূলের স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রা.) আল্লাহর কাছে দীর্ঘ হায়াত কামনা করে দোয়া করছিলেন, এমন সময় রাসূল (সা.) এসে হাজির হন। তিনি বলেন, তুমি এমন এক বিষয়ের জন্য দেয়া করছ যেটা তিনি আগে থেকেই তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তোমাদের রিজিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং বণ্টনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।’ আমাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে মৃত্যুভয়ে আমরা ভীত হই। তাকে বাঁচানোর জন্য আমরা পাগল হয়ে যাই। দেশে-বিদেশে যার যার সাধ্যমতো বড় বড় ডাক্তার কবিরাজ দেখাই, যাতে সে সহজেই আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু তারপরও সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়।

এভাবেই সবাই যাচ্ছে,, আমি ও অন্যের করব খুঁড়ছি,,, আত্বীয় স্বজন থেকে শুরু করে পড়শী,, কিংবা সুনাম ধন্যদের মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছি প্রায়,,, মাঝে মাঝে স্বজন হারোনোর শোকে বৃষ্টির মত গাল বেয়ে নোনা জলে বুক ভাসে,,,,, যদি ও আজকাল সব মৃত্যু মানুষকে কাদাঁয় না — এমন কিছু মৃত্যু আছে যে মৃত্যুর মিছিল অনেকে আনন্দিত ও করে – যদি ও এমনটি কারোই কাম্য নয় -কিন্তু কাম্য না হলে ও কান্না, হাসি বা আনন্দের রুপ রেখা আগেই একেঁ রাখে – মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পড়া মানুষটি জীবন দশায় তার কৃত কর্মে !

আমার লাশের খেতাব জয়ে – অনেকেই হয়ত আনন্দ বা কান্নার মহা মিলনে লাশের মিছিলে যোগ দিবে ঠিকই – কিন্তু কান্না ভেজা চোখ, শোক ভরা বুক নিয়ে আসিবে তো কেউ ? যেখানে আমার দাম্ভিকতায় আমিত্বে মহানের ভূমিকায় আমি,, অথচ ঃ ক্ষানিক সময়ের ব্যবধানে আমার উপর মাটি গুলো ধসে পড়লে ও কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না রাখার ক্ষমতা ও থাকে না – এই চরম অসহায়ত্বের স্বীকৃতি প্রতিটা ভোর দেয়,, দুপুর দেয়,, সন্ধ্যা দেয় – দেয় রাত্র নীশি সব সময়। কিন্তু আমার বেহুশীয় জীবন আদৌ মৃত্যু ভয়ে কাতর করেনি একটি মুহুর্তের জন্যে ও আমাকে ।

অতঃপর আমিই এক অনবদ্য জ্ঞানহীন অসুর –
যদি ও মানুষের ত্বক লাগানো আমার গায়,,,,,,
তবে প্রশ্ন থেকেই যায় আমি কি আদৌ মানুষ হতে পেরেছি ?
আমার মৃত্যুর পর কেউ বলবে না তো হারামজাদা মরেছে,,, বেশ হয়েছে !!
অনেকে জ্বালিয়েছে এই সুদ খোর,, ঘুষখোর, মদখোর – জালিমের বাচ্চা !!!
প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কারো মনে আনন্দের ঢেউ খেলবে না তো ?
আমার কর্ম আমাকেই মানব হয়ে জন্মানোর স্বীকৃতি দেবে তো ?
এটিই ভাবার বিষয় !!!


মোঃ মাহফুজুর রহমান পুষ্প
গোকর্ণ ঘাট – ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মোবাইল – 01942243336—01634480534
মেইল– pushpabd1983@gmail.com 

Some text

ক্যাটাগরি: ধর্ম

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি