ছোটবেলার খেলার সাথী, স্কুলের সাথী, সংস্কৃতির সাথী। গতকাল বুধবার রাতে অনেক দিন পর ফোনালাপে “বুবলী” সম্বোধনেই উত্তরে বল্ল- শাহীন, বল্লাম চিনেছো, সে বল্ল এই নামে তুমি ছাড়া আমাকে আর কে ডাকে? বল্লাম কথা আছে।,আজ বৃহস্পতিবার তার সাথে দেখা এবং কথা বলার কথা ছিল, অথচ কিছু না বলেই আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে না ফেরার দেশে চলে গেল প্রিয় বন্ধু এড. লিটন দেব । কালাইশ্রীপাড়া জগৎবাড়ির বাসিন্দা অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ঠাকুর দাস স্যারের দ্বিতীয় পুত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বারের স্বনামধন্য আইনজীবি এড, লিটন দেব ।
কালাইশ্রী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদী, সেই নদীপাড়ে আখড়া বাড়ি, বড় বাড়ির মাঠে থেলা পুকুরে দাপাদাপি পূজো পার্বনে নানা স্মৃতিতেই এখন লিটন। আমার সকল কাজেই সে সহযোদ্ধা ছিল,কচি কাঁচার মেলা করতাম এক সাথে, পূরবী মেলা থেকে নাজমা জেসমিন চৌধুরীর ঘুম নেই নাটক হবে, সেখানে একটি চরিত্রে লিটনকে সংযুক্ত করি। লিটন বলেছিল, নাটক আমি পারবো না অথচ সেই লিটন দেব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাটক নিয়ে ইতিহাস লিখেছে, অন্নদা স্কুল পড়ি তখন সপ্তম শ্রেণীতে ,বাংলা একাডেমির বর্তমানে পরিচালক ড. সরকার আমীন ভাই “উন্মেষ“ নামে একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করতেন,উনার অণুপ্রেরণায় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিপ্রেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিকের দিক নির্দেশনায় আমি “কচি কল্লোল” নামে আমি সম্পাদক হিসেবে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করি, লিটন দেব ছিল সেই পত্রিকার সহকারী সম্পাদক।
পত্রিকাটি জাতীয় শিশূ পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছিল। কালাইশ্রীপাড়ায় সে সময় কচি কল্লোল নাম একটি সংগঠন করেছিলাম এতে সভাপতি ছিলেন বিমল রায়,সাধারণ সম্পাদক আমি, লিটন দেব , স্বপন রায়, মহিতোষ ছিল সহকারী সম্পাদক। এই সংগঠনের ব্যানারে আমরা অনেক অনুষ্ঠান করেছি আখড়া বাড়িতে মঞ্চ বানিয়ে। সেই বন্ধু লিটন দেব ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। আমার বিয়ের পর প্রথম সন্তান হবে , শ্রদ্ধেয় ডাঃ শেফালী আন্টির চেম্বার ছিল সে সময় কালা্ইশ্রীপাড়ায় লিটনদের বাড়ির পাশে। সেই মূহুর্তে সারারাত আমার পাশে ছিল এই বন্ধুটি। পরে লিটন আইন পেশায় গিয়ে নিজের ভূবনে ব্যস্ত হয়ে উঠে। মাঝে মধ্যে দেখা হলেই আমার নানা প্রসংশা শুনতাম তার মুখে।
আমি বলতাম, তুমি তো সারা জীবন আমারই প্রসংশা করছো তুমি যে কত গুণী জাননা, বড় সাহসী বিপ্লবী বন্ধু তুমি, কেননা সবার কাছেই শুনি তুমি আইনজীবিদের শিক্ষক বন্ধু গর্বে বুক ভরে যায়। সে হাসতো তার নিজস্ব স্টাইলে। বড় সাহসী ছিল এই বন্ধুটি। লিটন দেব আইন বিষয়ে কয়েকটি বইও লিখেছে। সংস্কৃতি চর্চা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলো দুবছর আগে সাহিত্য একাডেমির বার্ষিক সভায় নাছির নগর গিয়ে দুই বন্ধূ এক সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি।
বলেছিলাম বন্ধু আবারো সংস্কৃতি অঙ্গনে আসো সে বলেছিল আসবো আবার। অন্যায় এর বিরুদ্ধে সে সবসময়ই সোচ্চার ছিল। ব্যতিক্রমী ভাবেই সে তার জীবন কাটিয়েছে। তাকে কাছে পাশে পেলে আমরা নানা স্মৃতিতে হারিয়ে যেতাম , সুখ পেথাম অন্যরকম , কি রকম সেটা বুঝাতে পারবো না যেমন বুঝাতে পারছি না তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমার মনে কি হচ্ছে। লিটনের মুখটিই শুধু ভাসছে। আর শুনছি তার শেষ বলা কথা “বন্ধু আসিস কাল কথা হবে।” এই কথা না বলার স্মৃতিটা সব সময়ই মনে পড়বে।
আল-আমীন শাহীন এর ফেসবুক থেকে নেয়া
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]