নারী হলো শক্তি (energy=ই)। পুরুষ শক্ত। শক্তি (ই) ছাড়া স্বয়ং শিবও শব। দেব-দেবীর নাম একত্রে বলা হলে দেবীর নাম প্রথমে থাকে। যেমন- লক্ষ্মী-নারায়ণ, সীতা-রাম, রাঁধা-কৃষ্ণ। এর তাৎপর্য- প্রথমে নারী, পরে পুরুষ; প্রথমে ছায়া, পরে আলো; প্রথমে মর্ত্যলোক, পরে পরলোক; প্রথমে রাত্রি, পরে দিন; প্রথমে অক্রীয়ত্ব, পরে সক্রীয়ত্ব। প্রথমে গ্রহণ, পরে প্রদান।
নারীই নির্ধারণ করে কে তার ঘরে প্রবেশ করবে। অতএব নারীই সম্পর্কের নিয়ামক। পুরুষ চাইলেই নারী পায় না। নারী চাইলেই পুরুষ পায়। অসংখ্য পুরুষ এক-একজন নারীর জন্য অপেক্ষা করে। পুরুষের দৌড়াদৌড়িও নারীর জন্য অপেক্ষা। পুরুষ শ্রমিক মৌমাছির মতো, নারী রাণী মৌমাছির মতো।
নারীর শাসন ছাড়া পুরুষের জীবন উচ্ছৃঙ্খল। তাই পুরুষের কাছে নারী হলো পাঁজরের হাড় (সুরক্ষা প্রাচীর)। পাঁজরের হাড়ের বক্রতা স্বভাবজাত- একে সোজা করতে গেলে ভেঙে যায়, ভেঙে গেলে পুরুষের হৃদয় অরক্ষিত হয়ে যায়।
নারী নরম, পুরুষ শক্ত। শক্ত পুরুষ যত আস্ফালনই করুক না কেন, অবশেষে নরম নারীর কাছে হার মানতেই হয়। জল নরম কিন্তু কঠিন পাথরকেও গলিয়ে ফেলে। নারীর কোমলতাই তার শক্তি। অশ্রু তার অস্ত্র। তাই নারী বাইরে কিছুটা পরাধীন হলেও- ভেতরে স্বাধীন। পুরুষ সারাজীবন নারীর শাসনে থাকে। মা-এর শাসন শেষ হলে শুরু হয় স্ত্রীর শাসন। নারীর শাসন ছাড়া পুরুষের জীবন উচ্ছৃঙ্খল। তাই পুরুষের কাছে নারী হলো পাঁজরের হাড় (সুরক্ষা প্রাচীর)। পাঁজরের হাড়ের বক্রতা স্বভাবজাত- একে সোজা করতে গেলে ভেঙে যায়, ভেঙে গেলে পুরুষের হৃদয় অরক্ষিত হয়ে যায়।
প্রথমে ছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার আবির্ভাবে শুরু হলো যৌনশাসন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা আবিষ্কার করল পুরুষ ঈশ্বর ও নারী ডাইনী। পুরষতন্ত্র থেকে উদ্ভূত হলো পুরুষশাসিত ধর্ম, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান। পুরুষ যাজক-মোল্লা-পুরোহিত, পুরুষ রাজনীতিক ও পুরুষ বৈদ্যরা হয়ে ওঠলো সমাজসংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রক। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের গুরুত্ব ছিল না। সন্তানরা বড় হতো মা-এর কাছে। পিতৃত্ব নিশ্চিত হওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। কোনো ব্যাপারেই পুরুষের মতামত নিত না নারীরা। প্রথমে নারীরা ভুল করেছে, এখন ভুল করছে পুরুষরা। মূল ভুলটি হলো ক্ষমতাকেন্দ্রিক জীবনের দিকে ঝোঁক।
একজন নারী পুরুষের কাছ থেকে কেবল এটিই চায় না যে, পুরুষ তাকে যৌনতৃপ্তি দেবে। নারী চায় পুরুষের প্রেম। মৈথুন নারীর কাছে পুরুষের মতো প্রয়োজন নয়। নারী প্রেমের জন্য অপেক্ষা করে, পুরুষ অপেক্ষা করে কামের জন্য। পুরুষ ব্যর্থ হয় নারীকে প্রেমজ্ঞাপনে। এর শাস্তিও পুরুষকে পেতে হয়। প্রেমের অভাবে নারী রূঢ় হয়ে উঠে। পুরুষ নারীর রৌদ্রমূর্তির তাৎপর্য বুঝে না এবং এর সঙ্গে মানিয়েও চলতে পারে না। নারীর রূঢ়তায় পুরুষ দিশাহারা হয়ে যায়। তার জীবন থেকে আনন্দ বিদায় নেয়। দেখতে দেখতে উভয়েই বৃদ্ধ হয়ে যায়- একে অপরকে মেনে নেয় নিরাপত্তার তাগিদে, আর হতাশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যন্ত্রণা ভরা অতীত।
নারীর শাসন ছাড়া পুরুষের জীবন উচ্ছৃঙ্খল। তাই পুরুষের কাছে নারী হলো পাঁজরের হাড় (সুরক্ষা প্রাচীর)। পাঁজরের হাড়ের প্রথমে ছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার আবির্ভাবে শুরু হলো যৌনশাসন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা আবিষ্কার করল পুরুষ ঈশ্বর ও নারী ডাইনী। পুরষতন্ত্র থেকে উদ্ভূত হলো পুরুষশাসিত ধর্ম, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান। পুরুষ যাজক-মোল্লা-পুরোহিত, পুরুষ রাজনীতিক ও পুরুষ বৈদ্যরা হয়ে ওঠলো সমাজসংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রক।বক্রতা স্বভাবজাত- একে সোজা করতে গেলে ভেঙে যায়, ভেঙে গেলে পুরুষের হৃদয় অরক্ষিত হয়ে যায়।
নারী ভালোবাসা শেখে সেই পুরুষের কাছ থেকে, যে ভালোবাসা জানে না। নারীকে ভাবতে উৎসাহিত করা হয় যে, পুরুষকে যৌনসন্তুষ্টি প্রদানের জন্য তার সৃষ্টি। কিন্তু সত্য হলো এর বিপরীত। পুরুষের সৃষ্টি হয়েছে নারীর সন্তুষ্টি প্রদানের জন্য। প্রত্যেক পুরুষেরই সামর্থ্য রয়েছে এটি করার। এজন্য যৌনশক্তির বৃদ্ধি নয়, প্রলম্বিত যৌনরতিও নয়- প্রয়োজন হলো প্রেমের শক্তি বৃদ্ধি করা, নারীকে আরো বেশি ভালোবাসা, আরো বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করা।
নারীবাদ, নারীর রূপচর্চা, নৃত্য ও সম্ভোগের আসনাদি পুরুষের আবিষ্কার। পর্নোগ্রাফি, যৌনসামগ্রী, পতিতালয় ইত্যাদি পুরুষেরই উদ্ভাবন। পুরুষের উপর যৌন আগ্রাসন প্রাকৃতিকভাবেই অসম্ভব। পুরুষরাই আগ্রাসী হয়। কেবল প্রেমই যৌনআগ্রাসন থেকে পুরুষকে মুক্তি দিতে পারে। যে পুরুষ নারীকে প্রেম ও সম্মান করতে জানে না সে পুরুষও না, মানুষও না।
নারীর পছন্দ গোলাপি ও বেগুনি ধাঁচের রং। বেগুনি মণিপুর চক্রের রং। তেজশক্তির আধার এটি। এটি দ্বারা চেতনা, জীবনীশক্তি, আবেগ, পারিবারিক সম্পর্ক ও বাসনা নিয়ন্ত্রিত হয়। হৃদচক্রের রং গোলাপি। এটি রাগ-অনুরাগ, প্রেম ও বিরহ নিয়ন্ত্রণ করে। পারিবারিক সম্পর্ক, গৃহ ব্যবস্থাপনা এখন নারীর নিয়ন্ত্রণে। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সমাজকাঠামো আবার মাতৃতান্ত্রিকতার দিকে যাচ্ছে। নারীরা ক্ষমতাবান ছিল এখনও আছে। ভবিষ্যৎও তাদের।
পুরুষের উপর যৌন আগ্রাসন প্রাকৃতিকভাবেই অসম্ভব। পুরুষরাই আগ্রাসী হয়। কেবল প্রেমই যৌনআগ্রাসন থেকে পুরুষকে মুক্তি দিতে পারে। যে পুরুষ নারীকে প্রেম ও সম্মান করতে জানে না সে পুরুষও না, মানুষও না।
সব সংস্কারই কুসংস্কার, যদি কোনো সংস্কারে আমরা আটকে যাই। প্রথা বিরোধিতাও একটা প্রথা। যেমন, নারীবাদ। নারী-পুরুষের বৈষম্য থেকে উৎপন্ন হয় দুর্বলতা ও বিকৃতি। উভয়ের সমঅধিকারই কেবল নিশ্চিত করতে পারে সভ্যতার অগ্রগতি। সমঅধিকার খুব দুর্লভ একটি বিষয়। প্রতিটি পরিবারে হয় নারী, না হয় পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নারী-পুরুষ মিলেমিশে থাকা দুঃসাধ্য। মানব জীবনে এটিই অন্যতম প্রধান সমস্যা।
জীবন ২টি অর্ধাংশে বিভক্ত। দুই অর্ধাংশ সমতাপ্রাপ্ত হলে সবকিছুর মধ্যেই একটা ঐকতান থাকে। যদি দুই অর্ধাংশ সমতা হারায় তবে জীবন, পরিবেশ ও প্রকৃতিতে ভয়াবহ দুযোর্গ উৎপন্ন হয়। ২টি অর্ধাংশের সম্মিলনই জীবনকে পূর্ণতা দেয়।
সমাপ্তি চক্রবর্তী : কলকাতা, ভারত
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]