কি বলবো সময়ের কবি, যখন পৃথিবী চলন্ত এক নারকীয় ছবি
সময় দিচ্ছে পাড়ি নাজুকতার এমন সাঁকো, যেন পুলসিরাতের উপর
রেখেছে পা, কোন ভীষণ পাপী। আর দোযখ বাড়িয়ে দিয়েছে
তার লেলিহান জিহ্বা। নরকের বাসিন্দা ক্ষুধার্ত নাগগুলো
অগ্রভাগ চেরা জিহ্বা নাড়িয়ে, ফুঁসফুঁসিয়ে উঠছে বারবার।
আর পিলের পানি শুকিয়ে ভয়ে মৃত্যুর আগে মরা পাপীর মতো
মরছে হাজার বার সবুজ বসুন্ধরা। আর শিয়ালের হুক্কাহুয়ায় যখন
হারিয়ে যায় আযানের শব্দের মতো পবিত্র ধ্বনি! পিরামিডের
পেটের ভেতর থেকে খোদায়ী দাবির আক্রোশে বাড়িয়ে দেয় হাত
অভিশপ্ত ফারাও। অমীমাংসিত রহস্যের গন্ধে মারণজালের মতো
ছক এঁকে যাচ্ছে একের পর এক, লানতী ইহুদি জাতি।
দুটি নলা যোগাড়ের টেনশনে ভোগে, কর্মবিভোর মুসলিম জাতি
ভুলে গেছে উদ্দেশ্য। অথচ তাদের দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদে
অস্তিত্বের প্রশ্ন। পৃথিবীর রঙিন রঙিন মঞ্চে কাপড় খোলা কোমরে
উন্মাদী ঢেউ তুলে দাজ্জালি মেয়েরা নেশামগ্ন জোয়ানদের জোড়া জোড়া চোখ
গেঁথে গেছে সেই ঢেউয়ে, ক্ষুধার্ত ঈগলের চোখ যেমন গেঁথে যায়
শিকারীর মাংসে। এমনই সময় যখন, তোমার কলম থেকে নির্গত
বিষাক্ত কালি, মৃত্যুর অক্ষর ছুঁড়ে শত্রুর পাষাণ বুক করে দেবে
ছিন্নভিন্ন বৃষ্টির ফোটায় ছিড়ে যাওয়া ঘুড়ির মতো, ঠিক তখনই
হারিয়ে গেলে তুমি, এলোমেলো চুলের মতো! সন্ধ্যার অন্ধকারে
হারিয়ে যাওয়া সাদা বকের পালকের মতো। শাদা কাফনের ভাঁজে,
কবরের অন্ধকারে।
তোমাকে সম্মান দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই, মাত্রাবিহীন শোকগাঁথা
লেখা ছাড়া। আর কীইবা করার আছে ভাগ্যহীন এই কবির,
তোমার কবরে ফুল দেব, তোমার সাক্ষাৎ না পাওয়ার। হায়রে সময়,
হায়রে সুযোগ আর সামর্থ্য! একদিন হবে তুমি অফুরন্ত!
কিন্তু সেদিন কোথাও খুঁজে পাবে না, সেই ভালোবাসার আলোকবাতি।
যার দিকে ছুটতো প্রাণ, অলির মতো। পৃথিবীর সমস্ত নদী
সাগরে ঢালে জল। সাগরকে বাড়াতে নয়, নিজেই বড় হতে।
এতে সাগরে পড়ে না আছর, ঘটে না কোন বৃদ্ধি। আবার পৃথিবীর
সমস্ত নদী, সাগর থেকেই আনে জল। তাতেও সাগরে হয় না ঘাটতি।
তুমিও তেমনি ক্ষয়-বৃদ্ধির ঊর্ধ্বে সাগরের মতোই স্বপূর্ণ হে কবি মহামতি!
আজ তুমি সমাহিত হয়েছো এতোই নীরবে, যেনো বিশাল এক জাহাজ
ডুবে গেল শান্তু সাগরে। তোমারই বিরহে উদাস হলো এই উজালা,
ফাল্গুন প্রকৃতি লো-ভোল্টেজে জ্বলা বাল্বের মতো নিষ্প্রভ হয়ে বিলিয়েছে রোদ।
রোদবিহীন সূর্যটা নির্মুকুল আম্র বৃক্ষের মতো, শূন্যতায় ভোগে
জানিয়ে দিল বাংলার আকাশ-বাতাস, আমরা বিরহ কাতর হয়ে পড়েছি
তোমার বিরহে হে মহান কবি! আকাশে যদি পূর্ণিমা হাসে।
অন্ধ বাদুড়েরা সেই জোসনার সুধা! পান না করলেও চাঁদের গায়ে
কলঙ্ক পড়ে না। তুমি আলো, তুমি রোদ, তুমি জোসনা
তুমি আমার ফাল্গুনী উদাস বাতাস। তোমারই বিরহে নির্মুকুল
আম বৃক্ষের মতো বিষণ্ণ ফাগুন। খোদাকে সেজদার দায়ে যদি তুমি
হও দোষী, তবে তোমাকে দিলাম সেজদার দাগ পড়া ঐ কপালে
অজস্র চুম্বন। কৃপণ বাঁদড়েরা যদি না করে স্যালুট। আসেই বা কী যায়-ই
বা কী এতে, যখন দোস্তি হয়ে গেছে, তোমার স্বয়ং খোদার সাথে।
ফেরেশতার সারি, যখন তোমাকে জানায় সালাম, বিউগলের নাপাক সুর
দূর দূর করে তাকে তাড়িয়ে দিলাম, এই নিষ্প্রাণ দেহ সে, তো অবশেষে এই মাটিরই খোরাক।
নেই সেই ফুল আমার। এসব সাধারণ গোলাপ তোমার কবরে বেমানান
হৃদয়ঝরা প্রার্থনা রাখি, তোমার কবরে ঝরুক বেহেশ্তী গোলাপ।
ফুল কুড়ানো মেয়ের মতো তুমি কুড়িয়ে আনতে গ্রামীণ মানুষদের মুখ থেকে ভাব।
প্রকাশের ভাষা নেই- সেই ভাণ্ডারও আমার একটু স্তুতি করে যাব তোমার স্মরণে
ছন্দপতনবিহীন নিবিরাম তুমি মহৎ, সময়ের মহীরূহ, আমার কলমের প্রেরণা,
হৃদয়ের প্রেম, কাশ্মীর যুদ্ধের গর্জন, অভিশপ্ত ইহুদী জাতির প্রতি
সরাসরি নিন্দা নিক্ষেপকারী। সময় বোকা বনে গেছে, স্বর্ণকে অবহেলাকারী বোকার মতো।
জানি হারিয়ে সেও কাঁদবে, যেমন কাঁদছি আমি। আজ ইতি হারিয়ে গেছে, অন্ত হারিয়ে গেছে,
শুধু বেরিয়ে আসছে মাত্রার পর মাত্রা। আফসোস আর আক্ষেপের এক পাহাড়
চেপে রইল বুকে, আমার আকেয়ামত।
তোফায়েল আহমাদ : মোমেনশাহী
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]