রফিক মাদ্রাসের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় আমাদের পরিবারে যে মিলমিশ ছিল, তা দেখে আমি সবসময় ভাবতাম সারাটা জীবন যেন আমাদের পরিবারের এমনই থাকে। পৃথিবীতে কী আর সব চাওয়া পাওয়া হয়! তাই নিজেদের পারস্পরিক বন্ধনটাও হঠাৎ একদিন ভেঙ্গে যায়। যা আমি এজীবনে সহজে ভুলতে পারব না। তাতে কী তুবও জীবন কী আর থেমে থাকার? তাই এত কিছুর পরও জীবন যে তার নিয়মেই চলছে।
রফিক মাদ্রাসের বাড়িতে থাকাকালীন সময় আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। চতুর্থ শ্রেণিতে উঠার কিছুদিন পূর্বেই তার বাড়ি ছেড়ে আমাদের উঠতে হয় ঈদগাহ এলাকার আনোয়ার সাহেবের বাড়িতে। চট্টগ্রামের স্থানীয় মানুষ বাড়ির মালিকদের জমিদার বলত। আমি তখন ছিলাম রঙ্গিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে সেখান থেকে এসে আমাকে ভর্তি হতে হয় ঈদগাহ মুসলিম সারকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর ও সুসময়টা কেটেছে ঈদগাহ এলাকায়।
বাসার সামনে মোটামুটি বড় একটা খোলা জায়গা ছিল যেখানে অন্যসব ছেলেমেয়েরা মনের সুখে বিকালে খেলাধুলা করত। তারা যখন খেলাধুলা করত তখন আমি আমার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আন্টির কড়া নির্দেশ ছিল বাসা থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে। পৃথিবীতে তখন আমি সবচেয়ে যাকে বেশি ভয় পেতাম তিনি আমার আন্টি (রীমা)। তিনি দিনকে যদি রাত বলতেন তবে তাকেই আমি সাত্যি মনে করতাম। তাই স্কুলের গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না।
বাসার সামনে মোটামুটি বড় একটা খোলা জায়গা ছিল যেখানে অন্যসব ছেলেমেয়েরা মনের সুখে বিকালে খেলাধুলা করত। তারা যখন খেলাধুলা করত তখন আমি আমার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আন্টির কড়া নির্দেশ ছিল বাসা থেকে বের হওয়ার। আর পৃথিবীতে তখন আমি সবচেয়ে ভয় পেতাম আমার আন্টি (রীমা) কে। তিনি দিনকে যদি রাত বলতেন তবে তাকেই আমি সাত্যি মনে করতাম। তাই স্কুলের গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না।
সুখের সংসার ছিল আমাদের। সবাই যার যার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে একসাথে পরিবারের সব কাজ করত। কত যে শক্তিশালী একটা বন্ধন ছিল প্রত্যেকের মাঝে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তখন আমার সবচেয়ে ভাল লাগত। সবাই অফিস থেকে ফেরার পর আব্বা-আন্টি এক দল আর আমার কাকা শাহ পরান আর আমি এক দল হয়ে ক্যারাম খেলতাম। খুব মজা হতো! সেদিনগুলো কি আর ফেরত পাব! জানি পাব না। তবুও সেই স্মৃতিগুলোকে নিয়েই থাকতে চাই সারাটা জীবন।
মনে আছে আব্বা তখন ওয়াশিং ফ্যক্টরিতে চাকরি করতেন, আন্টি গার্মেন্টসে, আর কাকা দর্জির কাজ করতেন। সবার বেতন ছিল সীমিত, তবে সময়টা ছিল বেশি। সবার কাজ শেষ হতো রাতে। এক সকালে সবাই ঘর ছাড়ত আর রাত হলে ঘরে ফিরত। তাতে কী যখন সবাই একসাথে ক্যরাম খেলতে বসতাম তখন দেখলে মনে হতো যেন তারা কেউই কাজ করে ক্লান্ত নয়। তাদের চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে কেউ নেই।
খুব সীমিত আয়ের মাঝেও বেশ ভালই চলছিল আমাদের সংসার। অল্পে তুষ্ট ছিল আমাদের পরিবারের সবাই। তাতে কী! একটু সুখ পেলে যে মানুষ আরেকটু সুখ পেতে চায়। তেমনি আমার পরিবারের মানুষগুলোও আস্তে আস্তে সেদিকেই পা বাড়ায়। তাই আবার এর চেয়ে বেশি সুখ পাবার স্বপ্ন তাদের সকলকে আস্তে আস্তে গ্রাস করতে শুরু করল। আমিও বড় হতে থাকি আমাকে ঘিরে বড় বড় স্বপ্ন বুনতে থাকে আমার পরিবার।
ছাত্র হিসেবে যতটুকুই ভাল ছিলাম তাতে বাবা বা আমার পরিবারের কেউ সন্তুষ্ট ছিল না ঠিকই তবে আমার স্কুল শিক্ষকরা খুবই সন্তুষ্ট ছিল। যার কারণে তারা বরাবরই আমাকে খুব পছন্দ করত। তবে আন্টি আমায় প্রচুর উৎসাহ দিতেন পড়াশুনার জন্য। শাসন আর স্নেহ দুটোই ছিল তার মাঝে। তিনিই সবচেয়ে বেশি সচেতন ছিলেন আমার পড়াশুনার প্রতি। আস্তে আস্তে আশেপাশের ছেলেমেয়েদের সাথে আমার বেশ সখ্যতার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। বেঁধেতো আর বেশিদিন রাখা যায় না।
চলবে…
শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, সাংবাদিক
Some text
ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী
[sharethis-inline-buttons]