পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া আংশিক) আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ভোটে ভাগ বসাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজামী পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। যদিও এবার এ আসনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী মুখোমুখি হচ্ছেন বলে ধারণা করছিলেন সাধারন ভোটাররা। কিন্তু বদলে গেছে সেই দৃশ্যপট।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে সদ্য গণফোরামে যোগদান করে ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। কিন্তু হঠাৎ করেই জামায়াত অধ্যুষিত এই আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন জামায়াতের সাবেক আমীর যুদ্ধ অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে এই এলাকা থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত করেছিলেন স্থানীয় জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল বাসেতকে।
এ নিয়ে স্থানীয় জামায়াতের মধ্যেই দেখা দেয় দ্বন্দ। কারন জামায়াতের কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় ডা. আব্দুল বাসেতকে। কিন্তু নিজামী পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমানকে প্রার্থী করতে দাবি জানায় স্থানীয় জামায়াত নেতারা। তাতে জামায়াতের কেন্দ্র থেকে কোন সাড়া না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। ধারণা করা হচ্ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। কিন্তু তা হয়নি- ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। এতে সদ্য আওয়ামী লীগ ত্যাগী ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ধানের শীষে- আপেল মার্কার প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে এ আসনে বর্তমান সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের ভোটার ও নেতাকর্মীরা বলছেন, ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে।
আর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, গণতন্ত্র রক্ষায় তারা ঐক্যবন্ধ ভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন। এই আসনের বিশেষত্ব হলো- স্বাধীনতার পর থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যিনিই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনিই সরকারের মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন। এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীত্ব পান অধ্যাপক আবু সাঈয়িদ (তথ্য প্রতিমন্ত্রী), মেজর (অব.) মন্জুর কাদের (পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী), মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (শিল্পমন্ত্রী), এ্যাড. শামসুল হক টুকু (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী)।
এই কারণে বরাবরই পাবনা-১ আসনের দিকে সবার নজর থাকে একটু আলাদা করে এবং গুরুত্বও বহন করে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে আর বিএনপি-জামায়াত চায় হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে। এ আসনে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
১৯৯৬ সালে জামায়াতের নিজামী ও বিএনপির মেজর (অব:) মঞ্জুর কাদেরকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ২০০১ সালে আবু সাইয়িদকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয় পায় ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মতিউর রহমান নিজামী। জেলা জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, প্রথম দিকে পাবনা-১ আসনে জামায়াতের দুই জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র তুললেও শেষ পর্যন্ত জামায়াত নেতা ডা. আবদুল বাসেত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
অপর প্রার্থী মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র নাজিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেননি বলে দাবি তাদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে গিয়ে চার জামায়াত নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জামায়াতের দাবি তাদের দলীয় কোন প্রার্থী নাই। তারা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সে হিসেবেই মাঠে কাজ করছেন।
সাঁথিয়া পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। আবার যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধেও সব সময় সোচ্ছার ছিলেন তিনি। আজ বিএনপি-জামায়াতের কাছে কোন মুখ নিয়ে ভোট চাইছেন তিনি।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পাবনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি একজন দলছুট মানুষ। তার জীবনে অনেক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। জনগনের কাছে তার এবার আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দিন তিনি জামায়াত-বিএনপির বিপক্ষে থেকে কথা বললেও এবার তিনি ঐক্যফ্রন্টে গিয়ে জামায়াত-বিএনপির পক্ষে ভোট চাইছেন। এতেই বোঝা যায় তিনি কেমন, কি ছিলেন আর শেষ বয়সে এসে তার আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সদ্য গণফোরামে যোগদানকৃত অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে কখনো কখনো রাজনীতিবিদদের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে কৌশলগত কারণে জোটে যেতে হয়। জোটবদ্ধ হতে হয়।
আবু সাইয়িদ বলেন, আমার জীবনে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু তার রাষ্ট্র চিন্তা, ভাবনা, দর্শণ ও রাজনীতি, গনতন্ত্র এবং শোষনমুক্ত সমাজের সবগুলোই আমি ধারণ করি, লালন করি এবং সেটিই জনগনের মধ্যে প্রসারিত করে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার সর্বদা চেষ্টা করছি। তাঁর দাবি, তিনি নিজেই একটি প্রতীক।
উল্লেখ, ২০০৮ সালে সংস্কারপন্থী হিসেবে বহিস্কৃত হন আবু সাইয়িদ।
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ওই নির্বাচনে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান সাইয়িদ; জয় পায় টুকু। সাঁথিয়ায় ১টি পৌরসভা ১০টি ইউনিয়ন ও বেড়ার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন মিলে পাবনা-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছে, ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ১শ ১৬ জন।
জুবায়ের হোসেন দুখু : পাবনা প্রতিনিধি
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]