রবিবার রাত ৯:৪৮, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

স্মৃতিচারণ : ওমা, বাটি দেখি হাঁটে!

১৫৮১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

অগনিত কাল থেকে সমগ্র ভারতবর্ষে অতি জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে বানমারা কুপরি কালাম চর্চা ‘তেলপড়া’ আয়নাপড়া ‘বাটি চালান’ও তুলা রাশির ব্যবহার। এ তুলা রাশির জাতক জাতিকারা আবার হরেক রকম কেরামতি পারদর্শী। তুলা রাশির লোক দ্বারা আইনা পড়া (চোর ধরার জন্য) বহু পরিক্ষিত। কামরুকামাক্ষার মায়া জাদুর মন্ত্রটি ৭ বার পাঠ করে আয়নায় সাত বার ফু দিতে হবে। তারপর তুলা রাশির লোকের সামনে আয়নাটি ধরবেন আয়নার ভিতরে সেই চোরের ছবি ভেসে উঠবে,এই তদবীরটি বহু বার পরিক্ষিত । মানুষকে কালো যাদুর মায়ায়  ভুবনে ভাসিয়ে দেয়ার মতো ক্ষমতা তুলা রাশির জাতকজাতিকার  রয়েছে। কামরুকামাক্ষার কালো যাদুর মন্ত্রটি তুলা রাশির জাতক জাতিকারা ছাড়া অন্যেরা পড়লে দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন ৷ অরণ্যে আর নির্জন পথে দেখা মিলবে ভূত-পেত্নী আর ডাকিনী-যোগিনীর।

জ্বীন ভূতের ‘আচর’ উপদ্রব হতে  বাড়ির লোকদের কে সুরক্ষা দিতে বাড়ি বান্ধার নিয়মও রয়েছে । এসব কাজে  কবিরাজ বা ওঝা চারটি পেরেক মন্ত্র ফুঁকে সেগুল বাড়ির চতুঃসীমায় লোকচক্ষুর আড়ালে প্রোথিত করে। তার ফলে  বাড়ির লোকজন যাদু টোনা বা জ্বীন ভূতের উপদ্রব থেকে নিরাপদ থাকে। বান মারার অগনিত প্রক্রিয়ার কথা জানা যায়। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্মশান বা কবরস্থানের মাটি, মৃতের মাথার খুলি বা তার অংশ বিশেষে মন্ত্র ফুঁকে বান দেওয়া হয়। কলার থোড়ে অজস্র সুঁই ফুটিয়ে অথবা কচ্ছপের গলায়  শক্তসুতা দিয়ে তাবিজ বেধে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোন বিদঘুটে আমাবস্যা রাতে কামরুকামাক্ষার সেই জাদু তন্ত্রের-মন্ত্রটি ইনবক্সে দিব  ৷

সে বেশ কয়েক বছর আগের একটা স্মৃতিচারণ করি। তখনকার দিনে কারো কিছু হারানো গেলে মানুষজন ‘বাটি চালান’ দেওয়া লোকের শরণাপন্ন হত। বিশেষ করে গ্রামে এই সংস্কৃতিটা খুবই চালু ছিল। একবার আমাদের পাশেরবাড়ির এক চাচীর সোনার তৈরী হাতের বালা হারানো গিয়েছে, বাটি চালান দেওয়ার জন্য হাড্ডিসার অদ্ভুত কিসিমের এক বুড়ো তান্ত্রিককে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। তান্ত্রিকের গায়ে কালো লম্বা জুব্বা, সফেদ লম্বা দাড়ি আর মাথায় পাগড়ি ৷ উনার বাটি চালান নাকি অব্যর্থ। অবশ্যই হাতের বালা পাওয়া যাবে চোরও ধরা পড়বে।

তো আমরা ছেলে-বুড়োরা আগ্রহ নিয়ে বুড়ো কে ঘিরে ধরে রেখেছি! বুড়ো তান্ত্রিকের ধান-দূর্বা,সিঁদুর,জবা ফুলে কাঁসার থালা সাজিয়ে বাটি নিয়ে উপতা হয়ে বসলো। এক বোতল গোলাপ জল খেয়ে কি সব মন্ত্রপাঠ করে….। ওমা বাটি দেখি হাঁটে! বুড়োকে নিয়ে এইদিকে যায়, ওইদিকে যায়, কেমনে কি? অনেকক্ষণ পর বাটি সড়সড় করে বাড়ির পাশের পুকুর পাড় পর্যন্ত গিয়ে বুড়োকে নিয়ে ব্রেক কষে থেমে গেল ৷ বুড়ো পুকুড় পাড়ে গিয়ে গান্ধীর মত মুখ করে ভাবলো কিছুক্ষণ, তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, পুকুরে লোক নামান, বালা পুকুরে আছে। তখন অনেকেই পুকুরে ঝাপায় পড়ল এবং সে যাত্রায় বালাটা সত্যি সত্যি পুকুর থেকেই উদ্ধার হয়েছিল!

বুড়ো তান্ত্রিকটা বেঁচে নেই, বহু আগেই মারা গেছে । উনার আসল পরিচয় হল উনি মানুষ জনকে তাবিজ তুমার দিতেন ৷ সব সমস্যার মোক্ষম সমাধান উনার কাছে ছিল। এখন বেঁচে থাকলে কারিশমা পরীক্ষা করে দেখা যেত । বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায়  প্রসার ঘটায় এসব -প্রথা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে । বতর্মান  যুগে বাটি চালান বলতে  কিছুই নেই

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, নাগরিক সাংবাদিকতা, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি