নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোন কথা বা ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে অন্যকে সন্তুষ্ট করার প্রয়াসে প্রকাশ করাকে এক কথায় চাটুকারিতা বলে অভিহিত করা যায়। এর সমার্থক শব্দ হলো তোষামোদি,মোসাহেবি ইত্যাদি। লক্ষ্য করা যায় যিনি চাটুকারিতা করছেন তিনি জেনে বুঝে করছেন এবং যার উদ্দেশ্য করছেন তিনি কখনও এটা বুঝতে পেরেও বিষয়টি বেশ উপভোগ করছেন এবং নিজের অজান্তে বিপদ ডেকে আনছেন।
উচ্চ লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্খা ও জীবনে বড় হওয়ায় ইচ্ছা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কোন উদ্দেশ্য সাধনের পন্থা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হয়। অনেকের কাছে পরিশ্রম, ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি অনেক কষ্টকর বিষয়। অনেকে আবার ধৈর্য্যশীল নয়। তাই সাফল্য পেতে তারা অনেক সহজ পদ্ধতির সন্ধান করেন এবং চাটুকারিতাকে বেছে নেন । বিশেষ করে অযোগ্য ব্যক্তিরাই বেশি চাটুকার প্রকৃতির হয়। কারো অযথা বা মিথ্যা গুনাবলীর প্রশংসা করে সেই ব্যক্তির মাধ্যমে লাভবান হওয়ায় নির্লজ্জ ও ব্যক্তিত্বহীন প্রয়াস হলো চাটুকারিতা। সাহেবের কোন ব্যর্থতা বা দোষ তোষামোদকারীর দৃষ্টিগোচর হয় না। সাধারণত উর্ধ্বতন বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অধস্তন ব্যক্তিদের তোষামোদের শিকার হন।
বর্তমান সময়ে অফিসে-কর্মক্ষেত্রে চাটুকারিতার ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়। আজকাল যেন তোষামোদের প্রতিযোগিতা চলছে যেখানে মানবিক, নীতি-আদর্শ হয় তুচ্ছ ব্যাপার। তোষামোদের সীমা এতই ছড়িয়ে পড়ে যে নিজের সুবিধা অথবা স্বার্থ আদায়ের জন্য নিজের প্রচেষ্টার পরও কখনও পরিবারের সদস্যদেরও বড়কর্তার সন্তুষ্টির জন্য নিয়োজিত করে সেখানে কোন নৈতিকতা ও আদর্শ থাকে না। তোষামোদের কারনে কখনও অসামাজিক কাজও হয়ে থাকে। তোষামোদকারী তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য এতই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ফলে অন্যের ক্ষতি করতেও দ্ধিধাবোধ করে না।
বড়কর্তা জানেন না কিংবা বুঝতে পারেন না তোষামোদকারীর তোষামোদ বা প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি নিজের ও প্রতিষ্ঠানের কত ক্ষতি সাধন করছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাটুকারদের কারনে নিজের ব্যক্তি ও কর্মজীবনে বিপদ ডেকে আনেন। যখন নিজের ভুল বুঝতে পারেন তখন অনেক বিলম্ব হয়ে যায়।
চাটুকারিতার কারনে অযোগ্য ব্যক্তি যোগ্য পদে বসতে পারে ফলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং কাজের মান খারাপ হয় । মেধাবীদের মেধার বিকাশ ঘটে না চাটুকারিতার দোষে। চাটুকারিতার ফলে প্রকৃত পরিশ্রমী, সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিগণ কোনঠাসা হয়ে অনেক সময় কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। চাটুকারিতার প্রভাবে বিবেক, মনুষ্যত্ব নষ্ট হয় এবং মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি হারিয়ে যায়।
কোন মানুষেই দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। প্রত্যেকের নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে নিজের ব্যক্তিত্ববোধ জাগ্রত এবং পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়াতে হবে ।সবসময় ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে সমষ্টিগত স্বার্থ ও মানুষের কল্যান চিন্তা করতে হবে। সুতরাং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের চরিত্রকে আগে বদলাতে হবে ।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা
[sharethis-inline-buttons]