মানুষ একা বাস করতে পারে না। মানুষ সামাজিক জীব বা রাজনৈতিক প্রাণী! আমি চিন্তা করলাম একটা, আর আমার চারপাশে যারা আছে তারা চিন্তা করল আরেকটা তাইতো চিন্তার পার্থক্য হয়ে গেল । একতা নষ্ট হয়ে গেল। মানুষ ভাবে এক হয় আর এক। বেশিরভাগ মানুষ যা ভাবে তা কর্মে রুপ দিতে পারে না। তাহলে ভাবনাটাকে কর্মে রুপ দেয় কে! তথা বাস্তবায়ন করে কে? ভাবনাই বলেন, আর বাস্তবায়নই বলেন, যাই বলেন অর্থাৎ ভাবনা/পরিকল্পনা/বাস্তবায়ন অর্থাৎ কর্মে রূপান্তর। সবকিছুরই মূল স্রষ্টাতো একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। যাকে আমরা যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তারা তাকে পরম করুনাময় আল্লাহ হিসাবে সম্বোধন করি। অন্য ধর্মালম্বীর বক্তব্য বা ব্যাখা ভিন্নরুপ হতে পারে। এই বিশ্বভ্রমান্ডের স্রষ্টা কে? স্রষ্টা তো একমাত্র আল্লাহ । অবশ্য মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না। তারা মানব সমাজে নাস্তিক হিসাবে পরিচিত।
আল্লাহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আরও যা কিছুই দরকার সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন। কোন মানুষটা কখন জন্মগ্রহন করবে? কোন দেশে, কোন স্থানে, কোন সময়ে, কোন পিতামাতার ঔরসে সেটা নির্ধারন করে কে? র্অথাৎ জন্মে এবং মৃত্যুতে মানুষের কোন এখতিয়ার নাই। এমন কি ধনী-গরীব হওয়া! কেউ কি ইচ্ছা করে জেলে যেতে চায়? ফাঁসিতে ঝুলতে চায়? পানিতে ডুবে মরতে চায়? এক্সিডেন্টে মরতে চায়? যদি স্রস্টার পরিকল্পনায় এরূপ থাকে! তাহলে এ পরিকল্পনা কে রোধ করবে? কারও কি এমন ক্ষমতা আছে যে সে স্রষ্টার পরিকল্পনার বাইরে যাবে? সকল সৃষ্টিইতো স্রষ্টার পরিকল্পনার আওতাধীন। স্রষ্টা যদি পরিকল্পনা করেন কাউকে অন্ধরূপে/প্রতিবন্ধীরুপে পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন,অথবা মহামানবরুপে প্রেরণ করবেন। কেউ আছে কি স্রষ্টার পরিকল্পনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে?
মানুষকে চেষ্টা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চেষ্টার ফলাফল মানুষের অজানা! ফল শুভ হতে পারে অশুভও হতে পারে। বলতে গেলে মানুষের আয়ু এক মিনিট বা তার চেয়েও কম! কারণ নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নাই। স্ট্রোকের মৃত্যু, এক্সিডেন্টের মৃত্যু। অথবা এক্সিডেন্টের কারণে হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে যাওয়া! কেউ কি ইচ্ছা করে পঙ্গু হতে চায়? কিন্তু তার নিয়তিতে যদি পঙ্গুত্ব থাকে তাহলে সেটা রোধ করা কী সম্ভব? আপনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসযোগে রওয়ানা দিলেন ব্রাক্ষণবাডিয়া শহর থেকে। আপনাদের বহনকারী বাসটি নরসিংদী পৌঁছার পর দেখলেন, এর আগের বাসটি এক্সিডেন্টের কবলে পড়েছে। আর এতে লোকজন হতাহত হয়েছে।এর ফলে রাস্তায় যানযট কোলাহল রাস্তা বন্ধ। আপনার ঢাকা যাওয়ার কি হল? হয়ত ঢাকায় যাবেন, যথাসময়ে না, গেলেন আপনার নির্ধারিত সময়ের ১২ ঘণ্টা পর। তাহলে আপনার পরিকল্পনার কি হল? আপনার পরিকল্পনায় ছিল সকাল দশটায় ঢাকা পৌঁছানো! স্রষ্টার পরিকল্পনায় ছিল আপনাকে রাত দশটায় ঢাকা পৌছানো। আবার এমনও হতে পারত আপনি নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হলেন। আপনার পা ভেঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হলেন।
লেখাটা খুব বেশি ভাগ্য নির্ভর হয়ে গেল! এখানে কর্মটা যেন গৌন হয়ে গেল! অথচ ভাগ্য এবং কর্ম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সমান সমান ৫০ঃ৫০=১০০। আবার ভাগ্যের ব্যাপারে অতিরিক্ত অনুসন্ধান ধর্মে নিষিদ্ধ করে, শুধুমাত্র ভাগ্যে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। মানুষের জীবনটা সম্পূর্ণ অনির্মীত। সেটা আয়ুর ক্ষেত্রে, অথবা অনান্য ক্ষেত্রেও! আপনি সুস্থ জীবনযাপন করবেন, না অসুস্থ জীবনযাপন করবেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন না পঙ্গুত্ব বরণ করবেন, আপনি কিছুই জানেন না! আপনার পাশের পরিবেশও আপনাকে সংক্রামিত করে সেটা আনন্দেরই হউক অথবা দুঃখের! আপনার পাশের বাসায় একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটল। এর আগাগোড়া আপনি কিছুই জানেন না। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া আপনাকে ভোগ করতে হবে । অথবা আপনার প্রতিবেশীর ছেলে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে কিংবা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আপনার বাড়িতে মিষ্টি চলে এসেছে। ঐ’যে এ মিষ্টির ব্যাপারে আপনি কিন্তু কোনরূপ কর্ম পরিচালনা করেন নি। এরপরও মিষ্টি কিন্তু আপনার মুখে চলে এসেছে!
আমার একটা নিজস্ব ধারণা ছিল, আল্লাহ যেহেতু সব কিছুই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, দিন-রাত, নারী-পুরুষ ইত্যাদি আরও কত কিছু! তাই আমি মনে করতাম অর্ধেক মানুষ বেহেশতে যাবে বাকি অর্ধেক মানুষ দোজখে যাবে। আর এক জায়গায় দেখলাম আল্লাহ বলছেন অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তাহলে আমার ধারণা ভুল হল। কারণ এখানে অর্ধেক না বলে আল্লাহ বলেছেন অধিকাংশ মানুষ। আসলে যেদিন থেকে মানুষ আকাশে উড়তে শিখেছে সেদিন থেকে কোথা থেকে কি হয়ে গেল! মাটির মানুষ স্থলচর, ভুপৃষ্ঠে বিচরণ করা মানুষের জন্য স্বাভাবিক। মানুষ ভুপৃষ্ঠে বিচরণ করল, একসময় সে পানিতে তথা সমুদ্রে চলাচল শুরু করল। সেও হাজার হাজার বছর আগের কথা। অন্তরিক্ষে মানুষের বিচরণ নিকট অতীতের কথা।
Some text
[sharethis-inline-buttons]